নীলটুনির বাসা বাবুই পাখির মতো ঝুলন্ত। বাসাবাড়ির আশপাশে থাকে। লাউয়ের মাচা, ডালিম গাছ বা গৃহস্থ বাড়ির উঠানে যেখানে সুযোগ পায় সেখানে বাসা বানায়। এদের বাসা দেখতে অনেকটা পানি খাওয়ার মগের মতো। বাসার ওপরদিকে ছোট্ট একটা মুখ। মুখের ওপর একটা কার্নিশ বা হুড থাকে। ক্রিকেটের হেলমেটের মতো অনেকটা। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচায় এই হুড। অন্য শিকারিদের হাত থেকেও রক্ষা করে। মা পাখি প্রায়ই বাসার মুখ থেকে মাথা বের করে থাকে। এমনকি বৃষ্টির সময়েও।
নীলটুনির বাসার ওপরের দিকটা ঘাস-লতাপাতা দিয়ে তৈরি। ভেতরটা নরম তুলোর বেড। মাকড়সার জাল, শিমুল তুলা কিংবা কার্পাস খেত থেকে কার্পাস তুলা নিয়ে ভেতরে বেশ আরামদায়ক গদি তৈরি করে। তুলা পাওয়া না গেলে ব্যবহার করে কাশফুল।
টুনটুনির বাসা
টুনটুনির ইংরেজি নাম টেইলর বার্ড। বাংলা অর্থ দরজি পাখি। এরা কাপড় সেলাইয়ের মতো করে পাতা সেলাই করে বাসা বানায় বলে এমন নাম। আশশেওড়া, ডুমুর ও ভাট ফুলের মতো ছোট্ট গাছে বাসা বানায় টুনটুনি। নিরাপদ দেখে পাশাপাশি দুই বা তিনটি বড় পাতা বেছে নেয় টুনটুনিরা। পাতাগুলো আগে খড় দিয়ে সেলাই করে নিয়ে একটা প্যাকেটের মতো তৈরি করে। তারপর খড়, ঘাস, লতা ব্যবহার করে সেই পাতার প্যাকেটের ভেতর বোতলের মতো একটা বাসার কাঠামো তৈরি করে। কাঠামোর ভেতরে আবার থাকে নরম তুলোর গদি। এরা গদির জন্য মাকড়সার জাল, কাঁশফুল, শিমুল কিংবা কার্পাস তুলা ব্যবহার করে।
অগোছালো বাসার আরেকটা বড় উদাহরণ চিল বা ইগলের বাসা। এরা বড় গাছের মগডালে কিংবা শহুরে বাসা বাড়ির জানালার কার্নিশের ওপর কিছু ছোট কাঠ জোগাড় করে সেটাই বাসা হিসেবে ব্যবহার করে।
বাবুই বা নীলটুনির বাসা বেশ পরিপাটি, সুন্দর। কিন্তু কিছু পাখির বাসা একদম এলোমেলো। কারও চুল এলোমেলো দেখলেই আমরা বলি চুল তো নয় যেন কাকের বাসা। এলোমেলো বাসার জন্য যদি পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে কাক হতো চ্যাম্পিয়ন। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাতি কাক। এরা কড়ই, মেহগনির মতো উঁচু গাছে বাসা বানায়। পাতি কাকের অদ্ভুত বাতিক কাছে। আশপাশে যা যা পাওয়া যায় তা সব কুড়িয়ে এনে বাসায় জড়ো করে। কাকের বাসা শুকনো খড় আর ঘাস লতাপাতা দিয়ে তৈরি। কিন্তু এরা বৈদ্যুতিক তার, পেরেক, নাট-বল্টু, প্লাস্টিকের বোতল কিংবা পলিথিন কুড়িয়ে বাসায় ঢিবি করে। কেন এসব স্তূপ জমা করে তার কোনো জবাব পাওয়া যায় না।
শালিকের বাসাও খুব এলোমেলো। এরা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বা গাছের ডালেও বাসা বানায়। রাজ্যের খড় জোগাড় করে কোনোমতে একটু বসার জায়গা করে তার ওপর বাসা তৈরি করে। মূলত পাকড়া শালিক আর গাংশালিক এসব জায়গায় বাসা বানায়।
অগোছালো বাসার আরেকটা বড় উদাহরণ চিল বা ইগলের বাসা। এরা বড় গাছের মগডালে কিংবা শহুরে বাসা বাড়ির জানালার কার্নিশের ওপর কিছু ছোট কাঠ জোগাড় করে সেটাই বাসা হিসেবে ব্যবহার করে। শকুনের বাসাও এমন অগোছালো। এসব পাখির বাসা একদম খোলামেলা জায়গায় থাকে। কারণ, এরা নিজেরাই শিকারি পাখি। বড় শিকারি। এদের বাসায় হামলা করার সাহস অন্য প্রাণী বা পাখিদের হয় না।