প্রাণিজগৎ
ঋতু বদলের সঙ্গে রং বদলায় যেসব পাখি
ঋতু পরিবর্তন বলতে আমরা সাধারণত আবহাওয়ার রদবদল, খাবারে পরিবর্তন কিংবা পোশাকের ভিন্নতা বুঝি। কিন্তু প্রকৃতিতে অনেক কিছু ঘটে আরও সূক্ষ্মভাবে। বেশিরভাগ পাখির পালক সারা বছর একই থাকলেও কিছু পাখি ঋতু ভেদে পালকের রং বদলায়। শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটা ওদের টিকে থাকার কৌশলও বটে।
এই রং পরিবর্তন ওদের আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে, শিকারির হাত থেকে বাঁচতে কিংবা প্রজননের জন্য সঙ্গী আকর্ষণে সাহায্য করে। এ ধরনের পরিবর্তন খুব বেশি চোখে পড়ে না পড়লেও এটা পাখিদের অভিযোজন ক্ষমতার প্রমাণ। আজ এমন ৭টি পাখির কথা জানব, যেগুলো ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের রং বদলে ভোল পাল্টে ফেলে।
১. স্নোই আউল বা তুষার পেঁচা
শীতকালে যেন এরা সাদা বরফের সঙ্গে মিশে থাকে। ভালো মতো খেয়াল না করলে, এ পাখির সাদা পালক আর বরফ আলাদা করা মুশকিল হয়ে যায়। তবে গ্রীষ্মকালে তাদের পালকে দেখা যায় গাঢ় ছোপ ছোপ দাগ। বরফ গলে গেলে পাথর ও গাছপালায় ভরা প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে সেটা দেখতে দারুণ লাগে। অবশ্য ওই গাঢ় দাগের কারণেই গ্রীষ্মকালে এরা সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে। পরিবর্তনটা খুব সামান্য হলেও বেঁচে থাকার কৌশলটা দারুণ!
২. রাফ
রাফ পাখি প্রজননের সময় আশ্চর্যজনকভাবে রং বদলায়। বছরের বেশিরভাগ সময় এদের পালক থাকে বাদামি। কিন্তু বসন্তে পুরুষ রাফ পাখির ঘাড়ে গজিয়ে ওঠে রঙিন পালক। কালো, সাদা, সোনালি বা লালচে রং দেখা যায় পালকে। ঝলমলে এই পালক সঙ্গী আকর্ষণের জন্য। তবে প্রজনন শেষে এরা আবারও ফিরে আসে আগের চেহারায়।
৩. বোহেমিয়ান ওয়াক্সউইং
এরা খুব নাটকীয়ভাবে রং বদলায় না। তবে ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে হালকা পরিবর্তন দেখা যায়। শীতে এই পাখির পালক থাকে ধূসর। মরুভূমির গাছপালার গাছপালার সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য একেবারে উপযুক্ত। কিন্তু বসন্ত এলেই এদের ডানায় লালচে টিপ ও মাথার চূড়ার গঠন আরও স্পষ্ট দেখা যায়। এরাও সঙ্গীকে আকর্ষণ করতেই এভাবে রং বদলায়।
৪. লম্বা লেজের হাঁস
এই হাঁসের রং গ্রীষ্ম ও শীতে একেবারে বদলে যায়। শীতকালে পুরুষ হাঁসদের দেহে সাদা ও কালো পালক থাকে, সঙ্গে থাকে লম্বা এক লেজ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে প্রজননের সময় পালক হয়ে যায় বাদামি-ধূসর। শিকারিদের চোখে ধুলো দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে লুকিয়ে থাকার জন্য এ রং ভালো। তবে স্ত্রী হাঁসের তুলনায় এদের রং পরিবর্তন তুলনামূলক হালকা।
৫. স্কারলেট ট্যানাজার
গ্রীষ্মে পুরুষ স্কারলেট ট্যানাজারকে ঝকঝকে লাল শরীর আর কালো ডানা দারুণ লাগে। তবে প্রজনন শেষ হলেই বদলে যায় রং। পরিযান শুরুর আগে পুরুষ পাখি বদলে যায় হলদেটে সবুজে। তখন পুরুষ ও স্ত্রী পাখির রংয়ের কোনো তফাত থাকে না। এতে ভ্রমণ পথে শিকারিদের হাত থেকে কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৬. রক পটারমিগান
এই পাখি নিজের আশপাশের রঙের সঙ্গে মিল রেখে পালকের রং বদলায়। শীতে পালকের রং সাদা হয়ে বরফের সঙ্গে মিশে যায়, আর বসন্তে হয় ধূসর-বাদামি। তাছাড়া পুরুষ পাখির চোখের ওপরে লালচে দাগ দেখা যায় প্রজননের সময়। সঙ্গীদের কাছে এটাও এক ধরনের আকর্ষণ।
৭. স্নো বান্টিং
শীতে পুরুষ স্নো বান্টিংকে সাদা দেহে কালো ডানা নিয়ে বরফের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মে প্রজননের সময় পালক হয়ে যায় বাদামি। এতে পাথুরে জমিতে লুকিয়ে থাকতে সুবিধা হয়। স্ত্রী পাখিদের রংও হালকা থেকে গাঢ় হয়ে যায়। এটা যেমন ওদের নিরাপদ রাখে তেমনি প্রজননের প্রস্তুতিও জানান দেয়।