পাখিদের মধ্যে সেরা বাসা বানায় বাবুই। দেখতে অনেকটা জগের মতো। ওপরের দিকটা সরু, কিন্তু নিচের দিকটা পেটমোটা কলসির মতো। এজন্য এদের শিল্পী পাখি বলে। এরা তালগাছে বাসা করে। তালগাছের পাতায় বাসাগুলো ঝুলে থাকে। একটুখানি বাতাসেই খুব সুন্দরভাবে দুলতে থাকে। কিন্তু বাতাস যদি জোর হয় বা ঝড়ো হাওয়ার রূপ নেয়, তখন বাসা ঝড়ে পড়ে যায়। তবুও বাবুই কেন এভাবে বাসা বানায়?
বাবুইয়ের মতো ছোট পাখিদের প্রধান শত্রু সাপ এবং শিকারি পাখি। এরকম ঝুলন্ত বাসায় সাপ তেমন সুবিধা করতে পারে না। বাসার ভেতর ঢুকতে গেলে নিচে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। বাবুইয়ের বাসার নিচের দিকটা বেশ ভারী। সেখানে গোবর বা কাদা দিয়ে বাটির মতো করে রাখে। অবশ্য সেটা বাসার মূল কাঠামো তৈরি হওয়ার পরের কাজ। গোবর-কাদা বাসাটাকে ভারী করে তোলে। তাই দমকা বাতাস বা হালকা ঝড়ে বাসা উল্টে যায় না।
বাবুই পাখির বাসা বানানোর পদ্ধতিটাও বেশ আকর্ষণীয়। যে গাছে ওরা বাসা করতে চায়, সুতো নিয়ে সেই গাছের সরু ডাল বা পাতার আগায় প্রথমে সুতোটা গিঁঠ বেঁধে নেয়। পাখির তো হাত নেই।
বাবুই বাসা বানাতে বেশ কিছু উপকরণ ব্যবহার করে। যেমন তালপাতা, নারকেল বা খেজুর পাতা চিকন করে কেটে তৈরি সুতা, খড় এবং ঘাস ব্যবহার করে। ওগুলো এরা কোথায় পায়? আস্ত তালপাতা থেকে সুতা তৈরি তো তো সহজ নয়। শুকনো পাতা বা মরা ঘাসও ওরা ব্যবহার করে না। বাবুইদের সে বুদ্ধি আছে। ওরা পাতার কয়েক ফুট অংশকে টার্গেট করে। তারপর সেই বরাবর পত্রফলক ছিদ্র করে কিছু অংশ মুখে পুরে নেয়। এরপর শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ওড়ার চেষ্টা করে। ফলে পাতা ছিঁড়ে সুতোর মতো একটা অংশ চলে আসে পাখির কাছে। পাখি সেটা নিয়ে উড়াল দেয়। তখন বাবুই দেখলে মনে হয়, পাখির পিছু পিছু ঘুড়ির লেজের মতো একটা চিকন লেজ উড়ছে।
বাবুই পাখির বাসা বানানোর পদ্ধতিটাও বেশ আকর্ষণীয়। যে গাছে ওরা বাসা করতে চায়, সুতো নিয়ে সেই গাছের সরু ডাল বা পাতার আগায় প্রথমে সুতোটা গিঁঠ বেঁধে নেয়। পাখির তো হাত নেই। তাই শুধু ঠোঁট এবং প্রয়োজনে পা ব্যবহার করে চমৎকার করে গিঁঠ দেয়। তারপর কাপড় বোনার মতো করে সুতো সেলাই করে বাসা বানায়।
প্রথম বাসা শেষ করার পর পুরুষ পাখি আবার বাসা বানায়, হয়তো সেই গাছেই বা দূরে অন্য কোনো জায়গায়। নতুন কোনো স্ত্রী পাখি এসে সেই বাসায় আশ্রয় নেয়, ডিম পাড়ে, ছানা ফোটায়।
তবে স্ত্রী বাবুইরা কিন্তু বাসা বানায় না। শুধু পুরুষ বাবুই বাসা তৈরির কাজ করে। ঝাঁক বেঁধে বাবুইরা যখন বাসা বাঁধে কোনো গাছে, তখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্ত্রী পাখিরা চলে আসে। যে স্ত্রীর বাবুইয়ের যে বাসা পছন্দ হয়, সেটা সেই বাসায় আশ্রয় নেয়। তখন স্ত্রী পাখি পুরুষের সঙ্গে প্রজননে অংশ নেয়।
প্রজনন শেষে যে বাসা বানাল, অর্থাৎ সেই পুরুষ পাখিটাই বাসা ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রী পাখি তখন সেই বাসার ডিমের ঝুড়িতে ডিম পাড়ে, তা দেয়, তারপর ছানা হলে যত্ন-আত্তি করে বড় করে তোলে। ছানারা বড় হলে আর মায়ের সঙ্গে থাকে না।
প্রথম বাসা শেষ করার পর পুরুষ পাখি আবার বাসা বানায়, হয়তো সেই গাছেই বা দূরে অন্য কোনো জায়গায়। নতুন কোনো স্ত্রী পাখি এসে সেই বাসায় আশ্রয় নেয়, ডিম পাড়ে, ছানা ফোটায়। এভাবে এক মৌসুমে একেকটা পুরুষ বাবুই তিন থেকে চারটি বাসা তৈরি করে।
বাবুই পাখির বাসায় শিল্পের ছাপ স্পষ্ট। বাসার ভেতর পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। থাকে অনেকগুলো কুঠুরি, ডিমের ঝুড়ি। শত্রুকে ধোঁকা দিতেই এতসব ব্যবস্থা।