পুরুষেরা কেন সাধারণত নারীর চেয়ে বেশি লম্বা হয়

ছবি: লাইভসায়েন্স

আমার বড় ভাই আমার চেয়ে বয়সে আড়াই বছরের বড়। ১২-১৩ বছর বয়স পর্যন্ত আমিই বড় ছিলাম, উচ্চতায়। বাসায় কেউ এলে খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমাকে বলত ‘বড় বোন’, আর বড় ভাইকে বলত ‘ছোট ভাই’। এরপর হুট করে দেখা গেল, আমার গ্রোথ হরমোন ‘ইস্তফা’ দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আমার গ্রোথ হরমোনের আর বিশেষ কোনো অগ্রগতি দেখা গেল না। অন্যদিকে ভাই অতীতের ‘বৈষম্য’ কাটিয়ে আমাকে ছাপিয়ে তরতর করে বাড়তে থাকল। তারপর অবশেষে থামল আমার চেয়ে উচ্চতায় ৮ ইঞ্চি এগিয়ে!  

সারা বিশ্বেই পুরুষেরা নারীর চেয়ে ৫ থেকে ৯ শতাংশ লম্বা হয়। গড়ে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অন্তত ৫ ইঞ্চি বা ১৩ সেন্টিমিটার লম্বা। ব্যতিক্রমও চোখে পড়ে হরহামেশাই। তবে পুরুষেরা যে সাধারণভাবে নারীর চেয়ে লম্বা, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর পেছনে রয়েছে নানামুখী ও জটিল কিছু প্রভাবক। চলুন, পুরুষের নারীর চেয়ে লম্বা হওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩টি তত্ত্ব জেনে নেওয়া যাক।

এক, হরমোনের প্রভাব। নারী ও পুরুষের উচ্চতা নির্ভর করে তাঁদের কঙ্কালের উচ্চতার ওপর। প্রশ্ন হলো, নারীদের কঙ্কালের আকার ছোট কেন? এর সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তর হলো, নারীর শারীরিক বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। কিশোরী বয়সে, ১২ থেকে ১৬ বছরের ভেতর (মূলত বয়ঃসন্ধি কালে, মেনস্টুয়েশন শুরু হওয়ার পর থেকে) ইস্ট্রোজেন নামে একধরনের হরমোনের প্রভাবে নারীর হাড়ের বৃদ্ধি তথা শারীরিক বৃদ্ধির হার কমে যায়। ফলে উচ্চতাও বাড়ে খুব সামান্যই। তবে, বলা বাহুল্য, সবার ক্ষেত্রে এটা সমান নয়। অন্যদিকে পুরুষের শরীরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ খুব কম, আর টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেশি। ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সে এই হরমোনের প্রভাবে ছেলেদের শারীরিক বৃদ্ধি হয় বেশি। এক কথায়, কিশোর বয়সে পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়ে, যা পেশী ও হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে। অন্যদিকে একই সময়ে মেয়েদের শরীরে হরমোনের প্রভাবে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।

আরও পড়ুন
হরমোনের প্রভাব। নারী ও পুরুষের উচ্চতা নির্ভর করে তাঁদের কঙ্কালের উচ্চতার ওপর। প্রশ্ন হলো, নারীদের কঙ্কালের আকার ছোট কেন? এর সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তর হলো, নারীর শারীরিক বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

দুই, জিনগত প্রভাব। নারী ও পুরুষের শরীরে ২২ জোড়া অটোজোম এবং এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজম রয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে এই সেক্স ক্রোমোজম হলো XX, আর পুরুষদের ক্ষেত্রে তা XY। XX ও XY উভয় ক্রোমোজমের লেজের দিকে SHOX বা ‘শর্ট স্টেচার হোমোবক্স’ নামে একধরনের জিন আছে, যা মানুষকে লম্বা হতে প্রভাবিত করে। নারীর ক্ষেত্রে এই জিন কেবল একটা X-এ সক্রিয় থাকে, আরেকটা X-এ সুপ্ত থাকে। অন্যদিকে পুরুষের X ও Y ক্রোমোজমের দুটোতেই SHOX সক্রিয় থাকে। তাই নারীর চেয়ে পুরুষের লম্বা হওয়ার প্রবণতা বেশি।

তৃতীয় কারণটা মূলত সামাজিক, সেই সঙ্গে ঐতিহাসিকও বটে। প্রাচীনকাল থেকেই যেহেতু পুরুষেরাই মূলত শিকারে যেত, যুদ্ধ করত, তাই পুরুষের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশি। স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যয়াম বা শারীরিকভাবে অধিক কর্মক্ষম থাকার মতো বিষয়গুলোও পুরুষের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়াও, যে পুরুষেরা লম্বা আর শক্তিশালী, যুদ্ধে তারাই জয়ী হয়েছে বা বেঁচে ফিরেছে। মহামারী বা বিপর্যয়ে তারাই টিকে গেছে। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই কালক্রমে লম্বা পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

লেখক: সাংবাদিক

সূত্র: লাইভসায়েন্স ডটকম ও রেডিট অবলম্বনে

আরও পড়ুন