আমাদের দেহের কোষের ভেতর এক নতুন অঙ্গাণু খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর নাম দেওয়া হয়েছে হেমিফিউজোম। এটি আমাদের কোষের ভেতর পরিচ্ছন্নতার কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই অঙ্গাণুটি আবিষ্কার করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকরাও। এই দলের প্রধান গবেষক সেহাম ইব্রাহিম বলেছেন, ‘এটি কোষের ভেতরে একটি নতুন রিসাইক্লিং কেন্দ্র আবিষ্কারের মতো।’
আমাদের কোষের ভেতর অনেক কিছু ঘটে। খাবার প্রক্রিয়াকরণ, বর্জ্য ফেলে দেওয়া, জরুরি জিনিসপত্র সংরক্ষণ করার কাজে সাহায্য করে হেমিফিউজোম। এটি কোষের ভেতরের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো পৌঁছে দেয়।
এই গবেষণা করেছেন আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসক বেচারা কাচার, আমিররাসুল তাভাকোলি এবং শিকিয়ং হু। তাঁরা সবাই মিলে এই নতুন অঙ্গাণু আবিষ্কার করেছেন।
নতুন এই অঙ্গাণুটি সব সময় দেখা যায় না। কোষের প্রয়োজন অনুযায়ী এটি আবির্ভূত হয় এবং কাজ শেষে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই অঙ্গাণু খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা ক্রায়ো-ইলেকট্রন টমোগ্রাফি নামে অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এই প্রযুক্তি দিয়ে কোষকে হিমায়িত করে তার ভেতরের ছবি তোলা যায়। এভাবেই বিজ্ঞানীরা হেমিফিউজোম অঙ্গাণুর সন্ধান পেয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, হেমিফিউজোমের কাজটা কী? এটি কোষের ভেতরে ছোট ছোট থলির মতো গঠন তৈরি করতে সাহায্য করে। এই থলিগুলোর নাম ভেসিকল। এগুলো কোষের ভেতরে পরিবহনের কাজ করে। এ ব্যাপারে এব্রাহিম বলেছেন, ‘ভেসিকলগুলো কোষের ভেতরে ছোট ছোট ডেলিভারি ট্রাকের মতো কাজ করে। আর হেমিফিউজোম হলো সেই লোডিং ডক যেখানে এই ট্রাকগুলো মাল আদান-প্রদান করে।’
এই আবিষ্কারের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা এখন কিছু বংশগত রোগ সহজে বুঝতে পারবেন। কোষের ভেতরে এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ঠিকমতো না হলে নানা রোগ হয়। হারমানস্কি-পুডলাক সিনড্রোম নামে একটি বিরল রোগ আছে। এই রোগে চামড়ার রং পরিবর্তন হয়, চোখের সমস্যা হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, রক্ত জমাট বাঁধতে অসুবিধা হয়। এর মূল কারণ হলো কোষের ভেতরে জিনিসপত্র সঠিকভাবে পরিবহন না হওয়া। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হেমিফিউজোমের কাজে সমস্যা হলে এ ধরনের রোগ হতে পারে। তাই এই অঙ্গাণু সম্পর্কে জানলে এসব রোগের চিকিৎসা নতুন উপায়ে করা যাবে।
কিন্তু সুস্থ কোষে হেমিফিউজোম কীভাবে কাজ করে, তা এখনো জানেন না বিজ্ঞানীরা। আর রোগের সময় এর কী অবস্থা হয়, তাও অজানা। ভবিষ্যতে এই গবেষণা হয়তো অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।
এই গবেষণা করেছেন আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসক বেচারা কাচার, আমিররাসুল তাভাকোলি এবং শিকিয়ং হু। তাঁরা সবাই মিলে এই নতুন অঙ্গাণু আবিষ্কার করেছেন।
এই হেমিফিউজোম আমাদের কোষের কিছু অংশে বেশি পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা এখন জানতে চান, এটি কোষের সুস্থতায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর যখন এর কাজে সমস্যা হয়, তখন শরীরে কী ঘটে?
ইব্রাহিম বলেছেন, ‘কোষের ভেতরে সত্যিকারের নতুন কিছু আবিষ্কার করা খুবই বিরল ঘটনা। এটি আমাদের ভবিষ্যতে গবেষণার একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছে।’
কিন্তু সুস্থ কোষে হেমিফিউজোম কীভাবে কাজ করে, তা এখনো জানেন না বিজ্ঞানীরা। আর রোগের সময় এর কী অবস্থা হয়, তাও অজানা। ভবিষ্যতে এই গবেষণা হয়তো অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। আবিষ্কার হবে নতুন ওষুধ। চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি বের হবে। এ সব কিছুর শুরু এই ছোট্ট হেমিফিউজোম দিয়ে।