পরিবেশ
যুক্তরাজ্যের বনে নতুন গাছগুলো মারা যাচ্ছে কেন
যুক্তরাজ্যের কিছু বনের নতুন গাছগুলো মারা যাচ্ছে। এই বিষয়টি গোটা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগজনক। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এ থেকে বাঁচার উপায় কী?
বাইরে থেকে দেখলে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজশায়ারের মঙ্কস উড বনকে গ্রীষ্মের রোদে বেশ তরতাজা মনে হবে। শত শত প্রজাপতি উড়ছে, ওক ও ম্যাপল গাছগুলো সবুজ হয়ে আছে। পাখিরা খাবার খুঁজতে এদিক-ওদিক উড়ছে। দেখা যাবে শিয়াল বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে ঘাসের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। ব্রুনো ল্যাডভোকাট এবং রাচেল মেইলস কয়েক বছর ধরে দেখেছেন, বনের মেঝেতে যে ছোট ছোট গাছগুলো থাকার কথা, সেগুলো কমে যাচ্ছে। ২০২২ সালে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেন, গাছের চারা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বড় গাছগুলোর চারপাশে যেখানে সূর্যের আলো পড়ছে, সেখানে সাধারণত নতুন চারাগাছ থাকার কথা। কিন্তু জায়গাগুলো খালি পড়ে আছে।
রাচেল মেইলস এ ব্যাপারে বলেন, ‘অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রে এই গাছগুলো নতুন করে গজায়নি। এটা সত্যিই আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কোনো একটা সমস্যা নিশ্চয়ই হয়েছে।’
এই সমস্যা শুধু ১৫৭ হেক্টরের কেমব্রিজশায়ারের মঙ্কস উড বনে না। মনমাউথশায়ারের বাকহোল্ট উড থেকে কেইর্নগর্মসের গ্লেন তানার পর্যন্ত—যুক্তরাজ্য জুড়ে আটটি জায়গায় নতুন গবেষণায় একই প্রবণতা দেখা গেছে। পুরোনো বনগুলো নতুন করে গড়ে উঠতে পারছে না।
গবেষকেরা আশা করছেন, তাঁরা এমন পদ্ধতি তৈরি করতে পারবেন যা বীজে ‘জেনেটিক মার্কার’ তৈরি করবে। বীজগুলোর প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের মাধ্যমে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করবে।
এই বনগুলোতে গাছের প্রজাতি, মাটির ধরন, বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা আলাদা হলেও সব জায়গায় একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নতুন চারাগাছগুলো মারা যাচ্ছে। গবেষণাটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে এই গবেষণায় দেখা গেছে, চারাগাছের মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ২০০০ সালের আগে যেখানে প্রতি বছর গড়ে ১৬.২ শতাংশ চারাগাছ মারা যেত, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৩০.৮ শতাংশ হয়েছে। তার মানে, পাঁচ বছর পর একটি চারাগাছের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪১.৩ শতাংশ থেকে কমে মাত্র ১৫.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ছোট গাছ জন্মানোর সংখ্যা ৪৬ শতাংশ কমে গেছে। নিউ ফরেস্টের ডেনি উড এবং ডার্টমুরের ডেন্ডলস উড নামে দুটি জায়গায় ১৯৯৫ সাল থেকে কোনো চারাগাছই টেকেনি।
১৯৫৯ সাল থেকে চলছে এই গবেষণা। পুরোনো বনের এলাকাগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি চলেছে। গবেষকেরা ছয় দশক ধরে পরিবর্তন দেখছেন। এই প্রবণতা ব্রিটেনের বনের ভবিষ্যৎ বা বনের টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বনে চারাগাছ কমে যাওয়ার পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে থাকতে পারে বৈশ্বিক উষ্ণতা, রোগ এবং হরিণের অতিরিক্ত চারণ। খরা এবং তীব্র গরম অনেক বনের ক্ষেত্রে সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় বড় গাছগুলোর মৃত্যুহারও বেড়েছে। বড় গাছগুলোর মৃত্যুহার বছরে ০.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ০.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মানে, প্রতি বছরে ১২৫টি বড় গাছের মধ্যে একটি মারা যায়। আগে প্রতি ২০০টি গাছের মধ্যে একটি মারা যেত। এভাবে বনভূমির কার্বন নিঃসরণের হার কমে গেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বনের টিকে থাকা নিয়ে গবেষকদের উদ্বেগ বেশ পুরোনো। তবে এই বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। গবেষণা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। এই বনগুলোর অবস্থা গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউরোপের বেশির ভাগ অংশের অন্যান্য বনের মতোই। বন নিয়ে গবেষণাটি ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের মেম্বরা প্রকল্পের অংশ। এই গবেষকেরা এমন এক উপায় খুঁজছেন, যা যুক্তরাজ্যের বনভূমিকে বাঁচাবে। কারণ, ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। তখন বনে আরও চাপ পড়বে।
যেকোনো দেশের বনে চারাগাছ জন্মানোর এই খরা গোটা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগজনক। তবে গবেষকদের মতে, এই বনগুলোর জন্য আশা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এগুলো এখনো কার্বন শোষণ করছে।
গবেষকেরা আশা করছেন, তাঁরা এমন পদ্ধতি তৈরি করতে পারবেন যা বীজে ‘জেনেটিক মার্কার’ তৈরি করবে। বীজগুলোর প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের মাধ্যমে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করবে। এভাবে গাছের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। এই গবেষণার মাধ্যমে গবেষকেরা চারাগাছের জন্য একটি ‘বুটক্যাম্প’ তৈরি করতে চান, যা বনের টিকে থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
যেকোনো দেশের বনে চারাগাছ জন্মানোর এই খরা গোটা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগজনক। তবে গবেষকদের মতে, এই বনগুলোর জন্য আশা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এগুলো এখনো কার্বন শোষণ করছে। এখনো এখানে প্রচুর গাছের প্রজাতি আছে, যা মানুষের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। চারাগাছের মারা যাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে দরকার মানুষের সাহায্য।