স্বরবর্ণ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারে তিমি
দ্য হিচহাইকার্স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি বইটা পড়েছেন? এই বইয়ে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী ইঁদুর। এরপর রয়েছে ডলফিন এবং মানুষ আছে তিন নম্বরে! কিন্তু লেখক ডগলাস অ্যাডামস যদি আজকের এই নতুন গবেষণাটি দেখতেন, তাহলে তিনি হয়তো বিশালদেহী স্পার্ম হোয়েলকে তালিকার আরও ওপরের দিকেই রাখতেন।
সাগরের নিচে তিমিরা যে গান গায় বা অদ্ভুত শব্দ করে, তা আমরা অনেক আগে থেকেই জানি। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা যা আবিষ্কার করেছেন, তা চোখ কপালে ওঠার মতো। স্পার্ম হোয়েলরা নাকি মানুষের মতোই স্বরবর্ণ বা ভাওয়েল ব্যবহার করে কথা বলে!
ক্যারিবিয়ান সাগরে একদল গবেষক স্পার্ম তিমিদের নিয়ে গবেষণা করছিলেন। স্পার্ম তিমিরা, বিশেষ করে স্ত্রী তিমিরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় একধরনের ক্লিক-ক্লিক শব্দ করে। বিজ্ঞানীরা এই শব্দগুচ্ছের নাম দিয়েছেন ‘কোডা’।
এতদিন মনে করা হতো, এগুলো সাধারণ সংকেত। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে এই শব্দগুলো বিশ্লেষণ করার পর বিজ্ঞানীরা অবাক হন। তাঁরা দেখলেন, এই কোডার গঠন অবিকল মানুষের ভাষার স্বরবর্ণের মতো!
ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, আমরা যখন কথা বলি, তখন ফুসফুস থেকে বাতাস বের হওয়ার সময় ঠোঁট আর জিভ নাড়িয়ে শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পন বদলাই। এভাবেই আমরা ‘আ’, ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরবর্ণ তৈরি করি। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ফরম্যান্ট।
স্পার্ম তিমিরা, বিশেষ করে স্ত্রী তিমিরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় একধরনের ক্লিক-ক্লিক শব্দ করে। বিজ্ঞানীরা এই শব্দগুচ্ছের নাম দিয়েছেন ‘কোডা’।
তিমিদের ওই ক্লিক শব্দগুলোর মাঝের নীরবতা মুছে দিয়ে যখন এআই দিয়ে পরীক্ষা করা হলো, তখন দেখা গেল তিমিরাও ঠিক একই কাজ করছে! শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পন বদলে তৈরি করছে দুটি আলাদা প্যাটার্ন। বিজ্ঞানীরা মানুষের স্বরবর্ণের সঙ্গে মিল রেখে এগুলোর নাম দিয়েছেন আ-কোডা, আই-কোডা।
এই আ-কোডা এবং আই-কোডা ব্যবহার করে তিমিরা সাগরের নিচে রীতিমতো আড্ডা জমায়। একটা তিমি কিছু বললে অন্যটা তা শোনে, তারপর উত্তর দেয়।
এখন প্রশ্ন হলো, ওরা আসলে কী বলছে? ওরা কি সাগরের আবহাওয়ার খবর নিচ্ছে? নাকি বাচ্চাকে বকছে? নাকি কোনো জোকস বলছে?
সত্যি বলতে, বিজ্ঞানীরা এখনো এর মানে উদ্ধার করতে পারেননি। তবে এই গবেষণার সাহায্যে অন্তত এটা বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আমরা একা নই। গভীর নীল সাগরের তিমিরাও হয়তো আমাদের মতোই গল্প করতে ভালোবাসে। ওদের হয়তো নিজেদের কোনো জগৎ আছে। শুধু ওদের ভাষাটা আমরা বুঝতে পারছি না।