প্রাণিকুলের বেশিরভাগ সদস্যই রঙিন। যেমন, প্রজাপতির সারা শরীর রঙিন থাকে। অবশ্য প্রাণীজগতে উল্টোটাও দেখা যায়। কিছু প্রাণীর তেমন রঙের বৈচিত্র্য নেই। দেখতে সাদামাটা, রং সাদা-কালো। সবচেয়ে পরিচিত এমন রঙের প্রাণী কাক। রঙিন প্রাণীজগতে এরা এমন কেন?
কাকের মতো কিছু প্রাণীর সাদা-কালো রং ও কর্কশ আওয়াজ এক ধরনের সতর্কবার্তা। এরা যেন বলছে, ‘আমি বিপজ্জনক। আমার থেকে সাবধান!’ এই রঙের কারণে আক্রমণকারীরা দূরে থাকে। বিজ্ঞানীরা একে বলেন অ্যাপোসেমেটিক সিগন্যাল, মানে বিপদের ইশারা।
অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীদের সন্দেহ ছিল, সাদা-কালো প্রাণীদের এই বৈশিষ্ট্য শিকারি প্রাণীদের সাবধান করার জন্য। ম্যাগপাই পাখির দৃষ্টিনন্দন সাদা- কালো পালককে এর উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, এই রং শিকারি পাখিদের জানিয়ে দেয় ‘আমি খেতে সুস্বাদু না, আমাকে খাওয়ার কিছু নেই।’ কিন্তু পরে গবেষণায় দেখা গেছে, এই চটকদার রং উল্টো শিকারিদের আকৃষ্ট করে। শিকারীরা বিপরীত রং দেখে ভয় পায় না, বরং আগ্রহী হয়।
সাদা-কালো রঙের আরেকটি চমৎকার উদাহরণ পাওয়া যায় সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে। গাল, গিলিমট, পাফিন, এমনকি পেঙ্গুইনেরও শরীর হয় সাধারণত ওপরে কালো এবং নিচে সাদা।
সাদা-কালো রঙের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, এর মাধ্যমে নিজের প্রজাতিকে চেনা যায়। একটি জেব্রা আরেকটি জেব্রাকে দেখে বুঝতে পারে, ওই যে আমার জাতভাই। বিশেষ করে যখন একসঙ্গে অনেক পশু বা পাখি থাকে, তখন সাদাকালো রং সহজেই নিজ প্রজাতিকে চিনতে সাহায্য করে। কিছু গবেষকের মতে, সঙ্গী বেছে নেওয়ার সময়ও এই রং কাজে লাগে। গুণ হিসেবে দেখা হয় ওদের রং। তবে এই তত্ত্বে কিছু অসুবিধা আছে। সাদা-কালো ম্যাগপাইয়ের ছানাদেরও বড়দের মতো একই রং হয়। অথচ এরা প্রজননের সঙ্গে যুক্ত নয়। ফলে তারা এই রং থেকে কোনো সুবিধা পায় না।
তবে এই যুক্তি অনেক বেশি খাটে পাইড ফ্লাইক্যাচার নামে এক পাখির ক্ষেত্রে। এই পাখির পুরুষেরা প্রজনন মৌসুমে স্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। এ সময় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের শরীরে দেখা যায় চোখধাঁধানো সাদা-কালো রং। অন্যদিকে স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা থাকে বাদামি ও অনুজ্জ্বল রঙে।
সাদা-কালো রঙের আরেকটি চমৎকার উদাহরণ পাওয়া যায় সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে। গাল, গিলিমট, পাফিন, এমনকি পেঙ্গুইনেরও শরীর হয় সাধারণত ওপরে কালো এবং নিচে সাদা। একে বলে কাউন্টারশেডিং। ফলে আকাশ থেকে দেখলে পাখিটি মিশে যায় সমুদ্রের অন্ধকারে। আর নিচ থেকে দেখলে মিশে যায় উজ্জ্বল আকাশের পটভূমিতে। এটি এক ধরনের ছদ্মবেশ, যা শত্রুর চোখ ফাঁকি দিতে সাহায্য করে।
একটি জেব্রা আরেকটি জেব্রাকে দেখে বুঝতে পারে, ওই যে আমার জাতভাই। বিশেষ করে যখন একসঙ্গে অনেক পশু বা পাখি থাকে, তখন সাদাকালো রং সহজেই নিজ প্রজাতিকে চিনতে সাহায্য করে।
শুধু পাখি নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেও সাদা-কালোর এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন জায়ান্ট পান্ডা ও মালায়ান ট্যাপির। এদের শরীরে বড় বড় সাদা-কালো দাগ থাকা সত্ত্বেও জঙ্গলে এদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। দূর থেকে দাগগুলোর কারণে প্রাণীর আকৃতি বোঝা যায় না। কাছ থেকে দেখলে ছায়ার মধ্যে মিশে যায় এরা।
সবচেয়ে বিখ্যাত সাদা-কালো প্রাণী হলো জেব্রা। এর দাগ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। কেউ বলেন, এই দাগ একে ঘাসে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। কেউ বলেন, দাগ এদের শরীর ঠাণ্ডা রাখে। আবার কেউ কেউ বলেন, এই দাগ শিকারির চোখে বিভ্রান্তি তৈরি করে। ফলে আক্রমণের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে পারে না শিকারী। তবে সবচেয়ে জোরালো তত্ত্ব হলো, এই দাগ মাছি ও পোকামাকড়কে বিভ্রান্ত করে। কারণ, রঙের এই জটিলতার কারণে পোকারা শরীরে রক্তনালির অবস্থান বুঝতে পারে না। ফলে এগুলো জেব্রাকে এড়িয়ে চলে।
রং যত সাদামাটা গোক, শেষমেশ এই সাদা-কালো রংই প্রাণীকে কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়।