প্রতিনিয়ত আমরা প্রাণীদের মধ্যে যোগাযোগ নিয়ে আরও বেশি শিখছি। গবেষণায় দেখা গেছে, হাতিরা একে অপরকে কান নাড়িয়ে এবং গুঞ্জন করে অভ্যর্থনা জানায়। স্পার্ম তিমি ওদের কথোপকথনের প্রসঙ্গ অনুযায়ী ক্লিক ধ্বনি পরিবর্তন করে। আর নেংটি ইঁদুরদের কলোনিতে রয়েছে নিজস্ব উচ্চারণ ভঙ্গি।
এটা স্পষ্ট যে প্রাণিজগতের যোগাযোগ পদ্ধতি জটিল। কিন্তু এত বৈচিত্র্যময় উপায়ে যোগাযোগ করার পরেও কোনো প্রাণী কি অন্য প্রজাতির ভাষা শিখতে পারে? গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু প্রাণী তাদের নিজস্ব প্রজাতি ছাড়া অন্য প্রজাতির শব্দ বা সংকেত বুঝতে পারে। এমনকি শিখতে পারে ভাষার ব্যবহারও। তবে এই প্রাণীগুলোর মাথায় আসলে কী চলে, তা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
শুরুতেই বলে রাখা দরকার, ভাষা শব্দটি এখানে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাণীরা মানুষের মতো ভাষা ব্যবহার করে না। জার্মানির জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইমন ডব্লিউ. টাউনসেন্ড বলেছেন, ‘ভাষা মানুষের নিজস্ব যোগাযোগ পদ্ধতি’।
তরুণ ড্রোঙ্গোরা বুঝে প্রতারণা করে কি না, তাও নিশ্চিত নয়। তবে মানব শিশুরা যেমন না বুঝেই শব্দ নকল করে এবং বারবার ভুল থেকে শেখে, ড্রোঙ্গোরাও হয়তো সেভাবে শেখে। এখন পর্যন্ত ওরা কিছু ভাষা শেখার লক্ষণ দেখালেও, অনেক কিছুই রয়ে গেছে রহস্যাবৃত।
কোনো প্রাণী কি আসলেই ভাষা বুঝতে পারে?
অন্য প্রজাতির শব্দ বোঝার ক্ষেত্রে পাখিরা অন্যতম সেরা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিযায়ী পাখিরা পথ চলার সময় অন্য প্রজাতির পাখির ডাক বুঝতে পারে। এতে হয়তো নিরাপদে দীর্ঘপথ চলতে পারে পাখিগুলো। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কাছাকাছি অবস্থানের ডাক রেকর্ড করে গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, পাখিদের মধ্যে আন্তঃপ্রজাতিগত যোগাযোগ রয়েছে।
এই গবেষণা প্রমাণ করে, আগের ধারণার মতো গানপাখিরা একাই পরিযান করে না। যদিও ওদের ভাষা এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি। হয়তো ওদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ছিল।
শুধু ভাষা বোঝাই যথেষ্ট নয়
কোনো ভাষা শেখা মানে শুধু বোঝা নয়, বলতে শেখাও। আর এই জায়গায় আফ্রিকার ছোট কালো পাখি ফর্ক-টেইলড ড্রোঙ্গো (Dicrurus adsimilis) বেশ পারদর্শী। এই পাখিরা প্রায়ই খাবার চুরির আশায় অন্য প্রাণীর পেছনে ঘোরাঘুরি করে। কানাডার ক্যাপিলানো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক থমাস ফ্লাওয়ার মাঠ পর্যায়ে দেখেছেন, ড্রোঙ্গোরা যখন মিয়ারক্যাট নামে একধরনের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পেছনে থাকে, তখন তারা শিকারি প্রাণী আসতে দেখলে সতর্কতামূলক ডাক দেয়। এতে মিয়ারক্যাটরা গর্তে পালিয়ে যায়, আর ড্রোঙ্গোরা খাবারের টুকরো চুরি করে। কিন্তু বারবার একই কৌশল ব্যবহারে মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের নেকড়ে আসার গল্পের মতো অবস্থা হয়। মিয়ারক্যাটরা বুঝে যায়, ড্রোঙ্গোর সতর্কবার্তা ভুয়া। ফলে কিছুক্ষণ পরে তারা আর সেগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
এটা স্পষ্ট যে প্রাণিজগতের যোগাযোগ পদ্ধতি জটিল। কিন্তু এত বৈচিত্র্যময় উপায়ে যোগাযোগ করার পরেও কোনো প্রাণী কি অন্য প্রজাতির ভাষা শিখতে পারে? গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু প্রাণী তাদের নিজস্ব প্রজাতি ছাড়া অন্য প্রজাতির শব্দ বা সংকেত বুঝতে পারে।
এখানেই ড্রোঙ্গোর বিশেষ প্রতিভা ফেল করে ঠিকই, তবে ওদের চালাকি এখানেই শেষ নয়। ওরা মিয়ারক্যাটদের শব্দ অনুকরণ করে নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করে। এরা অন্যান্য পাখি, এমনকি মিয়ারক্যাটের সতর্কবার্তার ডাকও নকল করতে পারে। এভাবে ডাক নকল করে মিয়ারক্যাটদের বিভ্রান্ত করে খাবার চুরি করে ড্রোঙ্গোরা। কোন প্রাণীর ডাক নকল করতে হবে, তা ওরা বুঝতে পারে। এভাবে চলতে থাকে ড্রোঙ্গোরার প্রতারণার খেলা। তবে প্রতারণা করার সময় ড্রোঙ্গোরার মনে ঠিক কি চলে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণা করে, নাকি এর পেছনে আরও জটিল মানসিক প্রক্রিয়া রয়েছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলার উপায় নেই।
তরুণ ড্রোঙ্গোরা বুঝে প্রতারণা করে কি না, তাও নিশ্চিত নয়। তবে মানব শিশুরা যেমন না বুঝেই শব্দ নকল করে এবং বারবার ভুল থেকে শেখে, ড্রোঙ্গোরাও হয়তো সেভাবে শেখে। এখন পর্যন্ত ওরা কিছু ভাষা শেখার লক্ষণ দেখালেও, অনেক কিছুই রয়ে গেছে রহস্যাবৃত।
ফলে, প্রাণীরা মানুষের ভাষা পুরোপুরি বোঝে কি না, তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে কিছু প্রাণী যে নির্দিষ্ট শব্দ ও সংকেত বুঝতে পারে এবং প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এটাও কম বড় আবিষ্কার নয়!