যে রোগের কারণে রোগী প্রতিদিন হাসেন, কিন্তু আনন্দ পান না
৩১ বছর বয়সী এক নারী একদিন ক্লিনিকে এলেন এক অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে। তিনি জানালেন, শৈশব থেকেই তিনি এক বিরল হাসির রোগে আক্রান্ত। দিনে অন্তত একবার কোনো কারণ ছাড়াই তিনি অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাসতে শুরু করেন। কিন্তু সেই হাসিতে কোনো আনন্দ থাকত না। চিকিৎসকেরা এই হাসিকে বলেছেন ‘আনন্দহীন হাসি’।
প্রতিবার হাসির শুরু হওয়ার আগে তার ঘাড় এবং বুকের মধ্যে এক ধরনের ‘ভয়ংকর অনুভূতি’ হতো। হাসির সময় তিনি কথা বলতে বা কিছু গিলতে পারতেন না। এমনকি শ্বাস নিতেও কষ্ট হতো। এই সমস্যা প্রতিবার কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হতো। এটি সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই ঘটত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাসির আক্রমণের তীব্রতা নিজ থেকেই কমে গেছে। এর আগে তাঁকে লেভেটিরাসিটাম এবং ল্যামোট্রিগিন নামে খিঁচুনির ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কেন এমন হলো? আসলে এটা শৈশবের একটি ভুল বোঝাবুঝির ফল। ওই নারী জানান, ছোটবেলায় তাঁর এই সমস্যা আরও মারাত্মক ছিল। তখন দিনে প্রায় ছয় থেকে সাতবার অনিন্ত্রিতভাবে হাসি পেত। প্রতিবার আক্রমণ কয়েক মিনিট ধরে চলত। মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যেও তিনি হাসতে শুরু করতেন। তাঁর বাবা-মা বুঝতেই পারেননি যে এটি একটি অসুখ। তাঁরা ভাবতেন, তাঁদের মেয়ে ইচ্ছে করে হাসছে। তাই তাঁকে বকা দিয়ে হাসি থামাতে বলতেন। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এই সমস্যা নিজে থেকেই কমতে শুরু করে।
ক্লিনিকে আসার আগে, তার মস্তিষ্কের এমআরআই এবং ইইজি পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। এরপর চিকিৎসকেরা তাঁর হাসির আক্রমণের ভিডিও মনোযোগ দিয়ে দেখেন। ভিডিও দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়, এটি এক ধরনের খিঁচুনি রোগ। এর নাম জেলাস্টিক সিজার। এই নামটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘জেলাস্টিকোস’ থেকে। এর অর্থ হাসি। এই খিঁচুনিতে রোগী অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাসতে বা মুচকি হাসতে থাকে।
এই সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকেরা আবার তাঁর মস্তিষ্কের এমআরআই করেন। এবার তাঁরা মস্তিষ্কের গভীরে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস নামে একটি অংশে অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান। মস্তিষ্কের যে অংশে অস্বাভাবিকতা ছিল, সেই অঞ্চলের আকারে মাত্র ০.২ ইঞ্চি বা ৫ মিলিমিটার।
অবশেষে রোগটি শনাক্ত করা হয়। এটি একটি হাইপোথ্যালামিক হ্যামারটোমা। এই রোগ আসলে এক ধরনের নিরীহ টিউমার বা ক্ষত। এটি সাধারণত ভ্রূণ অবস্থায়ই মস্তিষ্কে তৈরি হয়।
ক্লিনিকে আসার আগে, তার মস্তিষ্কের এমআরআই এবং ইইজি পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। এরপর চিকিৎসকেরা তাঁর হাসির আক্রমণের ভিডিও মনোযোগ দিয়ে দেখেন।
সাধারণত, এই হাইপোথ্যালামিক হ্যামারটোমা খুবই বিরল রোগ। আর এটি হলে রোগীদের মধ্যে গুরুতর আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা দেয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের খিঁচুনির সমস্যা ধীরে ধীরে আরও মারাত্মক হয়।
কিন্তু এই নারীর ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাসির আক্রমণের তীব্রতা নিজ থেকেই কমে গেছে। এর আগে তাঁকে লেভেটিরাসিটাম এবং ল্যামোট্রিগিন নামে খিঁচুনির ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। যেহেতু তাঁর সমস্যা এখন ততটা গুরুতর নয়, তাই তিনি আর কোনো ওষুধ না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চিকিৎসকেরা তাঁদের রিপোর্টে লিখেছেন, ‘আমাদের জানা মতে, হাইপোথ্যালামিক হ্যামারটোমার সঙ্গে সম্পর্কিত মৃগীরোগের এমন শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক পরিণতি এর আগে কখনও দেখা যায়নি।’