মোবিয়াস সিনড্রোম: যে রোগে আক্রান্ত হলে আর হাসতে পারবেন না

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জীবনে হাসতে পারে না

হাসি-কান্নার মাধ্যমে আমরা আবেগ প্রকাশ করি। মুখের এই ভঙ্গি আমাদের আনন্দ, দুঃখ, বিস্ময়—সবকিছু ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু এমন এক জীবন কল্পনা করুন, যেখানে আপনি হাসতে পারেন না, ভ্রু কুঁচকাতে পারেন না, এমনকি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেন না চোখও। মুখের পেশিগুলোর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই স্বাভাবিক মুখভঙ্গি প্রকাশ পায় না। এমনই এক বিরল স্নায়বিক রোগ মোবিয়াস সিনড্রোম (Moebius Syndrome)। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জীবনে হাসতে পারে না।

মোবিয়াস সিনড্রোম নামে এই রোগ কী কারণে হয়, তা এখনো অজানা। ২০২১ সালে ইতালিতে করা এক জরিপে দেখা গেছে, এটি দেশটির প্রতি ১০ লাখ নবজাতকের মধ্যে প্রায় ৩ জনের হয়। অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালের এক ডাচ গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, নেদারল্যান্ডসে প্রতি ১০ লাখ নবজাতকের মধ্যে প্রায় ২১ জন এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ লাখের মধ্যে ১ জন থেকে ৫ হাজার শিশুর মধ্যে ১ জন এই সিনড্রোম মনিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

অ্যাবডুসেন্স স্নায়ুগুলো চোখের পেশি নিয়ন্ত্রণ করে, যা চোখকে ডানে বা বাঁয়ে সরাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ফেসিয়াল স্নায়ু আমাদের মুখের বিভিন্ন নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন চোখের পলক ফেলা, কপাল কোঁচকানো, হাসা এবং ভ্রু নাড়ানো।

এই সংখ্যাগুলো স্থান-কাল ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোবিয়াস সিনড্রোম নির্ণয়ের মানদণ্ড বদলেছে। এ ছাড়া যেহেতু এটি একটি বিরল রোগ, তাই কোনো দেশই এর ঘটনা ট্র্যাক করার জন্য জাতীয় রেজিস্ট্রি বা তালিকা রাখে না। ইতালীয় গবেষকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা বেশির ভাগ সময় এ রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জানতেন না। তাই রোগ নির্ণয়ে বেড়েছে জটিলতা। এই সিনড্রোম যেকোনো মানুষের মধ্যে দেখা যেতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ই সমান হারে আক্রান্ত হতে পারে এ রোগে।

আরও পড়ুন

মোবিয়াস সিনড্রোম রোগটি ক্র্যানিয়াল নার্ভ (CN) নামে দুই জোড়া গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর অনুপস্থিতির কারণে হয়। সেগুলো হলো অ্যাবডুসেন্স স্নায়ু (CN VI) এবং ফেসিয়াল স্নায়ু (CN VII)। অনেক সময় এটা ঠিকমতো তৈরি হয় না।

৫ হাজার শিশুর মধ্যে ১ জন এই সিনড্রোম মনিয়ে জন্মগ্রহণ করে

আমাদের মস্তিষ্কে মোট ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল স্নায়ু আছে। এরা মস্তিষ্ক থেকে মুখ, মাথা, ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বার্তা পাঠায়। অ্যাবডুসেন্স স্নায়ুগুলো চোখের পেশি নিয়ন্ত্রণ করে, যা চোখকে ডানে বা বাঁয়ে সরাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ফেসিয়াল স্নায়ু আমাদের মুখের বিভিন্ন নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন চোখের পলক ফেলা, কপাল কোঁচকানো, হাসা এবং ভ্রু নাড়ানো। এই স্নায়ুগুলো শোনা ও স্বাদ নেওয়ার অনুভূতিও মস্তিষ্কে পাঠায় এবং লালা ও চোখের পানির গ্রন্থিগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

তবে মোবিয়াস সিনড্রোম যাদের হয়, তাদের ক্ষেত্রে শুধু CN VI এবং CN VII স্নায়ুতেই সমস্যা থাকে না, রোগীর অবস্থা অনুযায়ী অন্য ক্র্যানিয়াল স্নায়ুগুলোতেও সমস্যা থাকতে পারে।

মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্ত কিছু মানুষের মধ্যে আরও অনেক লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন চোয়াল ও জিহ্বা ছোট হতে পারে। অনেকের মুখের তালু কাটা থাকে। তবে চিকিৎসা পেলে মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

মোবিয়াস সিনড্রোমে ক্র্যানিয়াল স্নায়ুগুলোর সমস্যা ঠিক কী কারণে হয়, তা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয় চিকিৎসকদের কাছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ হঠাৎ করে দেখা যায়। অর্থাৎ এটি সাধারণত পরিবারের মধ্যে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়ায় না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট জিনের মিউটেশনের কারণে এই রোগ হতে পারে। হুট করে দেখা গেল, পরিবারের কারো হয়তো এই সমস্যা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, হয়তো তাদের বহু আগের কোনো পূর্বপুরুষের জিনে এই সমস্যা ছিল বা মিউটেশনের কারণে নতুন করে হয়েছে।

আরও পড়ুন

মোবিয়াস সিনড্রোম যাদের হয়, তাদের ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণগুলো মানুষভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে এ রোগের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রোগীর মুখের অন্তত একদিক নড়াচড়া করতে পারে না বা দুর্বল থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি তাকাতে পারে না ওপরের দিকে। চোখ ডানে বা বাঁয়ে সরাতেও পারে না।

চিকিৎসকেরা বেশির ভাগ সময় এ রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জানতেন না। তাই রোগ নির্ণয়ে বেড়েছে জটিলতা

এই সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত বেশি লালা ঝরে, চোখ বাঁকা থাকতে পারে এবং কোনো কিছু ডান থেকে বাঁয়ে বা বাঁ থেকে ডানে দেখতে হলে পুরো মাথা নাড়াতে হয়। তারা সাধারণত মুখে কোনো হাসি বা কান্না প্রকাশ করতে পারে না।

আমাদের মস্তিষ্কে মোট ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল স্নায়ু আছে। এরা মস্তিষ্ক থেকে মুখ, মাথা, ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বার্তা পাঠায়। অ্যাবডুসেন্স স্নায়ুগুলো চোখের পেশি নিয়ন্ত্রণ করে, যা চোখকে ডানে বা বাঁয়ে সরাতে সাহায্য করে।

মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্ত কিছু মানুষের মধ্যে আরও অনেক লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন চোয়াল ও জিহ্বা ছোট হতে পারে। অনেকের মুখের তালু কাটা থাকে। তবে চিকিৎসা পেলে মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তাদের আয়ুও স্বাভাবিক থাকে। মোবিয়াস সিনড্রোমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা প্রতিজন রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, উইকিপিডিয়া, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

আরও পড়ুন