বিড়াল কেন ঘাস খায়

‘ক্যাট মাদার বা ‘ফাদার’, অর্থাৎ যাঁরা বিড়াল পোষেন, তাঁদের কাছে পোষা বিড়ালটিকে মাঝেমধ্যে মনের সুখে লনের ঘাস চিবোতে দেখা একটা পরিচিত দৃশ্যএআই আর্ট

লেখার শিরোনাম পড়ে ভ্রুঁ কুচকে অনেকের মনেই হয়তো এই প্রশ্নের উদয় হতে পারে, ‘বিড়াল আবার ঘাস খাওয়া শুরু করল কবে থেকে?’ তবে ‘ক্যাট মাদার বা ‘ফাদার’, অর্থাৎ যাঁরা বিড়াল পোষেন, তাঁদের কাছে পোষা বিড়ালটিকে মাঝেমধ্যে মনের সুখে লনের ঘাস চিবোতে দেখা একটা পরিচিত দৃশ্য। প্রশ্ন হলো, মাংসাশী হয়েও বিড়াল বা কুকুর কেন ঘাস খায়? কবে থেকেই-বা শুরু করল?

এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু থিওরি বা তত্ত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্টাক ভেটেরেনারি হাসপাতালের পশুচিকিৎসক ডা. জেমি লাভজয় জানান, বিড়াল বা কুকুরের পাকস্থলীতে ঘাস হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় জারক রস নেই। (এখানে একটু থেমে বলে রাখি, মানুষেরও নেই। এ কারণে মানুষ ‘পারতপক্ষে’ ঘাস খায় না। তবে গরু ও ছাগলের চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট পাকস্থলির প্রথম প্রকোষ্ঠেই রয়েছে রুমেন নামের বিশেষ ব্যাকটেরিয়া; যা ঘাসের সেলুলোজ ভেঙে হজম করতে পারে। ঘাস শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার, খনিজ পদার্থ, ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিনের চমৎকার উৎস। তাই ঘাস গরু-ছাগলের জন্য একটি ‘আদর্শ খাদ্য’।)

তা ছাড়া বিড়ালেরা অনেক সময় চুলের ছোট ছোট বল বা ময়লা গিলে ফেলে। তখন ঘাস চিবিয়ে বমির মাধ্যমে চুলের বল ফেলে দেয়। এতে উপশম মেলে। সার্বিকভাবে সামান্য ঘাস চিবানোর অভ্যাস বিড়ালের জন্য খারাপ নয়, বরং পাকস্থলি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

এই পশু চিকিৎসক বলেন, ‘বাঘের মতো বিড়ালও পেট খারাপ হলে, পেটের পীড়ায় বা হজমে অসুবিধা হলে ফাইবারের জন্য ওষুধ হিসেবে ঘাস চিবায়। তাতে আরাম পাওয়া যায়। বাঘের মাসি বলে কথা, এরা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। বিড়াল ও বাঘ দুটোই ফেলিডি পরিবারের সদস্য। বাঘ এই পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য, আর বিড়াল সবচেয়ে ছোট। এ কারণেই বিড়াল ও বাঘের জিনে ৯৫% মিল রয়েছে।

তা ছাড়া বিড়ালেরা অনেক সময় চুলের ছোট ছোট বল বা ময়লা গিলে ফেলে। তখন ঘাস চিবিয়ে বমির মাধ্যমে চুলের বল ফেলে দেয়। এতে উপশম মেলে। সার্বিকভাবে সামান্য ঘাস চিবানোর অভ্যাস বিড়ালের জন্য খারাপ নয়, বরং পাকস্থলি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

২০২১ সালে ১ হাজার ৫০০ বিড়ালের মালিকের ওপর একটা জরিপ পরিচালিত হয়। সেখানে ৭১ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের পোষা বিড়ালকে ঘাস খেতে দেখেছেন। মাত্র ৯ শতাংশ জানিয়েছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাঁদের বিড়াল অসুস্থ ছিল বা অস্বস্তিবোধ করছিল। ২৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বিড়ালকে ঘাস খাওয়ার পর বমি করতে দেখেছেন।   

ধারণা করা হয়, বিড়ালের পূর্বপুরুষেরা ঘাস খেতো। সময়ের বিবর্তনে সেই অভ্যাস খানিকটা রয়ে গেছে বর্তমান বিড়ালদের ভেতর
এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি
আরও পড়ুন

এ ছাড়া, ধারণা করা হয়, বিড়ালের পূর্বপুরুষেরা ঘাস খেতো। সময়ের বিবর্তনে সেই অভ্যাস খানিকটা রয়ে গেছে বর্তমান বিড়ালদের ভেতর।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ভেটেরেনারি মেডিসিন অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্স কলেজের অধ্যাপক ডা. লরি টেলার লাইভ সায়েন্সকে জানান, কারো পোষা বিড়াল বা কুকুরকে যদি স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়, তারপরেও সেই বিড়াল যদি লনে গিয়ে মাঝেমধ্যে ঘাস খায়, তাতে মোটেও চিন্তার কিছু নেই। ডা. লরি বলেন, ‘পোষা কুকুর বিড়ালেরও মাঝেমধ্যে স্বাদ বদলাতে ইচ্ছে করে। আমাদের আশেপাশে নানা ধরনের ঘাস জন্মায়। ওদের মনে হতে পারে, একটু চেখেই দেখা যাক জিনিসটা খেতে কেমন। অনেক সময় নিজেরা যেই পরিবেশে থাকে, সেটা ভালোভাবে বোঝার জন্যও ওরা ঘাস খায়। আবার অলসতায়, কোনো কিছু করার না পেয়ে বা স্রেফ “বোর হয়ে”ও ওরা ঘাস চিবাতে পারে। অনেক সময় ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিনের মতো পুষ্টি উপাদানের অভাবেও বিড়াল ঘাস খায়।’

বিড়াল বা কুকুরের ঘাস খাওয়া তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে ঘাসে যাতে ক্ষতিকর কীটনাশক যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
আরও পড়ুন

বিড়াল বা কুকুরের ঘাস খাওয়া তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে ঘাসে যাতে ক্ষতিকর কীটনাশক যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অ্যামেরিকান সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল কোন ঘাস লতাপাতা কুকুর-বিড়ালের জন্য বিষাক্ত বা ক্ষতিকর, তার তালিকা দিয়েছেন। চাইলে সেখানে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে আপনার বিড়াল যদি অতিরিক্ত ঘাস খায়, তাহলে বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের সমস্যা হতে পারে।

 চাইলে আপনার পোষা বিড়ালের জন্য বিষেশভাবে চাষ করা ‘ক্যাট গ্রাস’ ঘরের ভেতরে বা বাইরে টবে বা লনে চাষ করতে পারেন। তাতে হয়তো ক্ষতিকর ঘাস-লতাপাতা খাওয়ার সমস্যা এড়ানো যাবে।

লেখক: সাংবাদিক

সূত্র: লাইভসায়েন্স ডটকম