কার হাতে উঠবে এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল

নোবেল পুরস্কারের মেডেলরয়্যাল ইনস্টিটিউট

প্রতি বছর অক্টোবর মাস কাছাকাছি এলেই বিজ্ঞান জগতে একধরনের চাপা উত্তেজনা আর প্রতীক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়। কার হাতে উঠবে বিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল? শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিজ্ঞানীদের মধ্যেও বিরাজ করে এই চাপা উত্তেজনা। কেউ কেউ রসিকতা করে বলেন, এই মাসটিতে বিজ্ঞানীদের মেজাজ একটু চড়ে থাকে। সেটা অবশ্য স্বাভাবিকই বটে!

নোবেল পুরস্কার কেবল একটি সোনার পদক নয়। পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়া গবেষণাগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এর মাধ্যমে। বিজ্ঞানের ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয় তিনটি—চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল, রসায়নে নোবেল এবং পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার। এ ছাড়াও সাহিত্য, অর্থনীতি এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বের ক্যাটাগরিতে কোন গবেষণাগুলো পুরস্কার পায়? খতিয়ে দেখলে দেখব, ক্রিসপার ক্যাস৯, এমআরএনএ প্রযুক্তি, মাইক্রোআরএনএর সূত্র ধরে মানুষের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের মতো আবিষ্কারগুলো সাম্প্রতিককালে পুরস্কার পেয়েছে। অর্থাৎ যে সব গবেষণা মানব স্বাস্থ্য এবং পৃথিবীকে দেখার চোখ আমূল বদলে দিয়েছে, সেই গবেষণাগুলোই স্বীকৃতি পেয়েছে এই সময়। এই পুরস্কার নিয়ে যে এত উত্তেজনা ও রোমাঞ্চকর অপেক্ষা, তা জানে বলেই নোবেল কমিটি তাদের যাবতীয় আলোচনা ও পুরস্কার নির্বাচন পদ্ধতি ঢেকে রাখে পরম গোপনীয়তায়। তবু বিগত বছরগুলোর ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে কিছু সূত্র বা প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই সূত্রগুলোর একটি হলো ‘প্রি-নোবেল’, অর্থাৎ নোবেলের পূর্বাভাস দেওয়া কিছু পুরস্কার। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ল্যাসকার-ডিবেকি অ্যাওয়ার্ড’কে নোবেলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস বলে মনে করা হয়। দেখা গেছে, এই পুরস্কার বিজয়ীদের অনেকেই পরে সুইডেনের স্টকহোম থেকে ডাক পেয়েছেন। একইভাবে ‘ব্রেকথ্রু প্রাইজ’ এবং ‘শ প্রাইজে’র মতো স্বীকৃতিগুলোকেও নোবেলের শক্তিশালী নির্দেশক বলে মনে করা হয়। উদাহরণ দিই। ক্রিসপার ক্যাস৯ প্রযুক্তির জন্য নোবেল পাওয়ার আগেই জেনিফার ডাউডনা এবং ইমানুয়েল শার্পসিঁয়ে ব্রেকথ্রু প্রাইজ পেয়েছিলেন।

এই সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা জানার চেষ্টা করব, চলতি বছর নোবেল পুরস্কার ২০২৫-এর সবচেয়ে বড় দাবিদার কারা। নিশ্চিত করে বলার কোনো উপায় নেই যে এদের মধ্য থেকেই কেউ পাবেন এবারের নোবেল। সে জন্যই এটা প্রেডিকশন বা অনুমান—যৌক্তিক অনুমান। মিলে গেলে লেখককে জ্যোতিষি ভেবে বসার তাই কোনো কারণ নেই। না মিললে দুয়ো দেওয়ারও কিছু নেই।

তাহলে চলুন, এই সুযোগে শুনে আসা যাক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের কথা। জানা যাক, কারা এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বের নোবেলের সবচেয়ে বড় দাবিদার।

আরও পড়ুন

১. ডেভিড আর. লিউ: জীবনের কোড নতুনভাবে লেখার কারিগর

২০২০ সালে যখন ডিএনএ সম্পাদনা করার জাদুকরী প্রযুক্তি ক্রিসপার ক্যাস৯-এর জন্য নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হলো, তখন থেকেই অনেকে প্রশ্ন করে আসছেন, এরপর কী? সাম্প্রতিক সময়ে এরকম আরেকটি বড় কাজ ছিল এমআরএনএ প্রযুক্তি। সে জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালে। পেয়েছেন বিজ্ঞানী ক্যাটালিন ক্যারিকো এবং ড্রু ওয়াইজম্যান। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এর পরের সবচেয়ে বড় কাজটা কী? এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত লুকিয়ে আছে ডেভিড লিউয়ের গবেষণায়।

ডেভিড আর. লিউ
ব্রড ইনস্টিটিউট

ছোট্ট করে ব্যাখ্যা করা যাক। ক্রিসপার প্রযুক্তিকে বলা হয় জৈব কাচি। এই আণুবীক্ষণিক কাচি দিয়ে ডিএনএ কাটা যায়। ডিএনএর দ্বি-সূত্রক কাঠামোর নির্দিষ্ট জায়গা কেটে, সেখানে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা শুধরে নেওয়া যায় এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। (এ বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন: নোবেল পুরস্কারে ক্রিসপার ও অপার সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ)

ডেভিড লিউ ডিএনএ সম্পাদনার এই বিষয়টি আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এমন এক প্রযুক্তি তিনি উদ্ভাবন করেছেন, যা ডিএনএকে না কেটেই এর ভুলগুলো শুধরে দিতে পারে। ২০১৬ সালে তিনি ‘বেস এডিটিং’ (Base Editing) নামের এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।

আমরা জানি, ডিএনএ মূলত চারটি বেস বা ক্ষার (পড়ুন, চারটি জৈব অক্ষর) দিয়ে গঠিত। অ্যাডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) এবং গুয়ানিন (D)। এগুলোকে যদি অক্ষর বলে ভাবেন, তাহলে ডিএনএর যেকোনো ত্রুটিকে বলা যায়—ভুল জায়গায় ভুল অক্ষরের উপস্থিতি। এখন আমার কাছে যদি একটা রাসায়নিক রবার থাকে, এই রবার দিয়ে যদি ভুল অক্ষরটা মুছে দিয়ে সঠিক অক্ষরটা বসিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু কেল্লাফতে! ঠিক এই কাজটিই করা হয় বেস এডিটিং প্রক্রিয়ায়।

এর তিন বছর পর, ২০১৯ সালে, লিউ আরও শক্তিশালী এক প্রযুক্তি নিয়ে এলেন। প্রাইম এডিটিং (Prime Editing)। এটি আরও নিখুঁত এবং বহুমুখী। একে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ‘ফাইন্ড অ্যান্ড রিপ্লেস’ কমান্ডের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। ধরুন, মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ২০০ পৃষ্ঠার একটা ডকুমেন্টে একটা ভুল শব্দ লেখা আছে। সেটা পড়ে পড়ে খুঁজে বের করতে গেলে সাড়ে সর্বনাশ! সে কারণেই আছে ‘ফাইন্ড অ্যান্ড রিপ্লেস’ কমান্ড। এর মাধ্যমে শব্দটা খুঁজে বের করে, সেটা সংশোধন করা যায়। একইভাবে প্রাইম এডিটিং পদ্ধতিতে ডিএনএর নির্দিষ্ট অংশ খুঁজে বের করে, কোনো কিছু না কেটেই সেখানে নতুন ও সঠিক জেনেটিক কোড বসিয়ে দেওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বংশগত রোগসৃষ্টিকারী বেশির ভাগ জেনেটিক ত্রুটি সারিয়ে তোলার চাবিকাঠি রয়েছে এই প্রযুক্তির ভেতরে।

এই অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডেভিড লিউ ২০২৫ সালে লাইফ সায়েন্সেস ক্যাটাগরিতে ব্রেকথ্রু প্রাইজ পেয়েছেন। কাজেই এবারের নোবেলের বড় দাবিদার যে তিনি, তা আর বলতে!

আরও পড়ুন

২. ট্রাইকাফটা টিম এবং একঝলক আশার জয়

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic Fibrosis) রোগের বিরুদ্ধে লড়াইটা এক মহাকাব্যের মতো। কয়েক দশক ধরে এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ফুসফুসে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ, ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যহানি এবং আয়ু সংক্ষিপ্ত হয়ে আসার মতো ভয়ংকর সমস্যার সঙ্গে দুঃসহ লড়াই চালিয়ে গেছেন। ওদিকে বিজ্ঞানীরা মাথা খুঁড়েছেন, বারবার সমাধান খুঁজেছেন এবং ফুঁসেছেন নিস্ফল আক্রোশে। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বরে এল ‘ট্রাইকাফটা’ (Trikafta)—তিনটি ওষুধের এক সম্মিলিত থেরাপি। এর মাধ্যমে সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মূল কারণ, সিএফটিআর (CFTR) নামে একটি ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিনকে মেরামত করা যায় সহজেই।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পেছনে রয়েছেন উল্লেখযোগ্য তিন বিজ্ঞানী—মাইকেল জে. ওয়েলশ, পল এ. নেগুলেস্কু এবং হেসুস গঞ্জালেজ। মাইকেল জে. ওয়েলশ প্রথম সিএফটিআর জিনের মিউটেশনকে এই রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসে ওষুধ তৈরির গবেষণায় নেতৃত্ব দেন পল এ. নেগুলেস্কু এবং জেসুস এই থেরাপিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সাহায্য করেন। রোগীদের জন্য ট্রাইকাফটার ফলাফল ছিল জীবন বদলে দেওয়ার মতো। দেখা গেল, তাঁদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে গেছে, রোগের লক্ষণগুলো কমে গেছে এবং প্রত্যাশিত আয়ুও বেড়ে গেছে অনেকখানি।

বাঁ থেকে মাইকেল জে. ওয়েলশ, পল এ. নেগুলেস্কু এবং হেসুস গঞ্জালেজ
স্ট্যাট নিউজ

এর ফলে ২০২৫ সালে ল্যাসকার-ডিবেকি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এই তিন বিজ্ঞানী। ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসে পলের দলের সদস্য জীববিজ্ঞানী ফ্রেড ভ্যান গুর এবং রসায়নবিদ সাবিনে হাদিদা। ২০২৪ সালে পল, সাবিনে এবং ফ্রেড ব্রেকথ্রু প্রাইজ ইন লাইফ সায়েন্সেস জিতে নেন। সম্ভাবনায় তাঁদেরও তাই পিছিয়ে রাখা যাচ্ছে না। আগে স্ট্যাটিন, হেপাটাইটিস সি, এবং বলা বাহুল্য ক্রিসপার ক্যাস৯-এর মতো আবিষ্কারগুলো ল্যাসকার জয়ের পরেই নোবেল পেয়েছিল। কাজেই…বুঝতেই পারছেন!

আরও পড়ুন

৩. উলফগ্যাং বাউমিস্টার: জীবন্ত কোষের ত্রিমাত্রিক সিনেমার পেছনের কারিগর

শুধু রোগের ওষুধ নয়, রোগ শনাক্ত করাও একটা বড় কাজ। সে জন্য লাগে টুল, লাগে প্রযুক্তি। আর এসব প্রযুক্তি অনেক সময় বদলে দেয় বিজ্ঞানের কোনো কোনো শাখার খলনলচে। এর ফলে জীবনকে আরও ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখা যায়—এ যেন নতুন দৃষ্টি পাওয়ার মতো। তেমনই এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন উলফগ্যাং বাউমিস্টার। তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতির নাম ক্রায়ো-ইলেকট্রন টমোগ্রাফি (Cryo-ET)।

উলফগ্যাং বাউমিস্টার
টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ

এই পদ্ধতিতে কোষকে অতি দ্রুত হিমায়িত করে, এর ভেতরের প্রোটিন এবং আণবিক কোষীয় বস্তুগুলোর নিখুঁত ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) ছবি তোলা হয়। ব্যাপারটা অনেকটা ঝাপসা স্থিরচিত্র থেকে সরে এসে কোষের ভেতরেই এইচডি, ফোরকে কিংবা আরও পরিষ্কার আইম্যাক্স ভিডিও দেখার মতো। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কোষকে তার স্বাভাবিক পরিবেশে, জীবন্ত অবস্থায় কাজ করতে দেখতে পারেন।

কোষের ভেতরের এই লুকানো জগৎ উন্মোচনের জন্য বাউমিস্টার ২০২৫ সালে শ প্রাইজের মতো সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন। ইতিহাসের খাতায় লেখা আছে, এমআরআই থেকে শুরু করে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপির মতো ইমেজিং বা ছবি তোলার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন উদ্ভাবকেরা। আগে হোক বা পরে, উলফগ্যাং বাউমিস্টার যে নোবেল পাবেন, এ ব্যাপারে অনেকেই তাই নিশ্চিত। কাজেই এই বছরের শক্ত দাবিদার তিনি।

আরও পড়ুন

৪. কার্ল এইচ. জুন: শরীরের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রোগ্রামার

কল্পনা করুন, একজন ক্যানসার রোগীর শরীর থেকে তাঁর নিজের রোগ প্রতিরোধক কোষ—টি-সেল (T-cell) বের করে আনা হলো। এরপর গবেষণাগারে সেগুলোকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো ক্যানসার-শিকারী হিসেবে। এর পর রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হলো এসব কোষ। এই প্রশিক্ষিত কোষগুলো এখন শরীরজুড়ে টহল দেবে এবং বেছে বেছে শুধু ক্যানসার কোষ ধ্বংস করবে।

অসাধারণ এই পদ্ধতির নাম ‘কার টি-সেল থেরাপি’ (CAR T-Cell Therapy)। পুরো নামটা একটু কঠিন, কাইমেরিক অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর টি-সেল থেরাপি। আর এর পেছনের সবচেয়ে বড় কারিগরের নাম কার্ল জুন।

কার্ল জুন
পেন টুডে

২০১০-এর দশকের শুরুতে জুনের দল এই থেরাপি ব্যবহার করে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলে পুরো চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতকে চমকে দেয়। যেসব রোগীর হাতে একসময় আর কোনো উপায় ছিল না, এবারে তাঁরা পেলেন নতুন জীবনের আশা। লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমার মতো ক্যানসার চিকিৎসায় এই থেরাপি এখন স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সলিড টিউমারের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার নিয়ে চলছে পরীক্ষা।

রোগ প্রতিরোধ এবং ক্যানসার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ২০২৪ সালে লাইফ সায়েন্সেস ক্যাটাগরিতে ব্রেকথ্রু প্রাইজ পেয়েছেন কার্ল জুন। ২০১৮ সালে ক্যানসার থেরাপি নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। এটি একধরনের ইমিউনোথেরাপি, যেখানে শরীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। কার্ল জুনের কাজ সেই তুলনায় একধাপ এগিয়ে। এ থেকে ধারণা করা যায়, এবারের নোবেল পুরস্কারের শক্ত দাবিদার তিনি।

আরও পড়ুন

৫. জিএলপি-১ অগ্রপথিকদের হাত ধরে স্থূলতা ও ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন বিপ্লব

মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ওজেম্পিক (Ozempic) এবং উইগোভির (Wegovy) মতো ওষুধগুলো স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে। এই বিপ্লবের শুরুটা হয়েছিল কয়েক দশক আগে, কয়েকজন বিজ্ঞানীর হাত ধরে। তাঁরা আমাদের অন্ত্রের একটি সাধারণ হরমোন—জিএলপি-১ (GLP-1) নিয়ে গবেষণা করছিলেন।

জোয়েল হ্যাবনার, ড্যানিয়েল ড্রাকার, সভেৎলানা মজোভ এবং লটে নুডসেনের মতো গবেষকেরা এই জিএলপি-১ হরমোন গবেষণার অগ্রপথিক। এই হরমোন কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, সে রহস্য উন্মোচন করেন তাঁরা। তাদের দেখানো পথ ধরে এমন সব ওষুধ তৈরি হয়েছে, যার কোনোটি ব্যবহৃত হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, কোনো কোনোটি বিস্ময়করভাবে কমিয়ে দিচ্ছে স্থূলতা রোগীর ওজন।

বাঁ থেকে জোয়েল হ্যাবনার, সভেৎলানা মজোভ এবং লটে নুডসেন
সায়েন্টিফিক আমেরিকান

বিশ্বে স্থূলতার হার এখন আকাশচুম্বী। ডায়াবেটিসও খুব কমন রোগ হয়ে গেছে এখন। কাজেই জিএলপি-১ অগ্রপথিকদের এই গবেষণা পুরো বিশ্বের জন্যই হয়ে উঠেছে আশার আলো। সে কারণেই এই গবেষকদের কেউ কেউ পেয়েছেন কানাডার ‘গেইর্ডনার অ্যাওয়ার্ড’, কেউ পেয়েছেন ‘ব্রেকথ্রু প্রাইজ’; আবার ২০২৪ সালে জোয়েল হ্যাবনার, সভেৎলানা মজোভ এবং লটে নুডসেনের হাতে ল্যাসকার-ডিবেকি অ্যাওয়ার্ডও উঠেছে। তাই সম্ভাব্য নোবেলজয়ীর তালিকায় আছেন তাঁরাও।

 

শেষের আগে

ল্যাসকার-ডিবেকি অ্যাওয়ার্ড, শ প্রাইজ কিংবা ব্রেকথ্রু প্রাইজ নোবেল পুরস্কার জয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। কিন্তু ইতিহাস বলে, এসব পুরস্কার প্রাপ্তদের অনেকেই নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু নোবেল কমিটি অনেক সময়ই আমাদের চমকে দেয়। কখনো সাম্প্রতিক আবিষ্কারের ঝুলিতে স্বীকৃতি ওঠে, কখনো আবার সম্মান পান বহু পুরাতন কোনো আবিষ্কারের পেছনের কারিগরেরা। ২০২৫ সালে কার ঝুলিতে এ পুরস্কার উঠবে, তা নিশ্চিত করে বলার উপায় তাই নেই।

পুরস্কার যেই পান, জিন সম্পাদনা থেকে শুরু করে জিএলপি-১ হরমোন—ওপরের প্রতিটি গবেষণা বদলে দিয়েছে লাখো মানুষের জীবন। এই বিজ্ঞানীরা তাই শ্রদ্ধা পাবেন, পাবেন অফুরন্ত ভালোবাসা।

সূত্র: ভার্টেক্স, নেচার, আইওয়া হেলথ কেয়ার, সায়েন্টিফিক আমেরিকান