সাগরের দৈত্য ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার

ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার

এই যে নীল সমুদ্র, কত বিচিত্র প্রাণ, এর কতটুকু আসলে জানি আমরা? মুগ্ধ বিস্ময়ে নীল-সবুজের সৌন্দর্য তো নিয়ত দেখতে পাই, কিন্তু প্রকৃতির অদ্ভুত নির্মমতা কতটুকু দেখি? প্রকৃতির এই নির্মমতাই আসলে জীবনের পেছনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে গত সহস্র বছর ধরে। বুকে আকাশ বয়ে চলা সমুদ্রের মাঝের তেমনি এক বিচিত্র প্রাণ ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার (Black Swallower)।

মাছটাকে এককথায় বলা যায় দুঃস্বপ্ন! আমাদের সৌভাগ্যই বলা যায়, এরা সমুদ্রের উপরিভাগে থাকে না। না হলে, এদের কাজকর্ম ঘুম হারাম করে দিত আমাদের।

এভাবেই শিকারকে ঢুকিয়ে রাখে পেটে; শিল্পীর চোখে

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা কিন্তু দৈর্ঘ্যে খুবই ছোট। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যই হয় এক ফুটের মতো। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দৈঘ্যের পরিমাণ হয় ৬-৮ ইঞ্চি। কিন্তু মুখটা প্রকাণ্ড। বিশাল সব শিকার গিলে ফেলতে পারে অনায়াসে। নিজেদের থেকে বিশাল কাউকে চট করে গিলে ফেলা তো সহজ কথা নয়। কাজেই, রেজর ব্লেডের মতো ধারালো দাঁত রয়েছে এদের। আর, একবার শিকার ঢুকে গেলে আর যেন বেরিয়ে আসতে না পারে, সে জন্য রয়েছে কাঁটাযুক্ত তালু। কিন্তু খালি গিললেই তো হবে না, জায়গাও তো দিতে হবে। ছোট্ট দেহের নিচে তাই একটি বেলুনের মতো পেট আছে এদের। দৈর্ঘ্যে প্রায় দ্বিগুণ এবং ভরের দিক থেকে নিজের দশ গুণ যেকোনো মাছকে আস্ত গিলে ফেলতে পারে! শিকারকে এরা ঠেসে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। একেবারে আস্ত আঁটানো চাই! আঁটানোর জন্য তীক্ষ্ণ দাঁত ব্যবহার করতে কোনো রকম কার্পণ্য করে না এরা।

আরও পড়ুন

শুনতে অদ্ভুতুড়ে মনে হলেও এদের কাজকর্মের পেছনের ব্যাপারটা আসলে খুব সরল। এরা থাকে আটলান্টিক মহাসাগরের ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল অংশে, সমুদ্রের ব্যাথিপেলাজিক অঞ্চলে (Bathypelagic zone: সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে ৩,৩০০ থেকে ১৩,০০০ ফুট নিচে)। কালিগোলা এই গভীর পানিতে খুব সহজে শিকার পাওয়ার উপায় নেই। এরা তাই একবারে পুরোটুকু খেয়ে নিয়ে সেটা জমিয়ে রেখে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সংরক্ষণের চেষ্টা করে।

কিন্তু সবসময় ব্যাপারটা এত শান্তিপূর্ণ হয় না এদের জন্য। সবকিছুর একটা সীমা আছে তো! খাদ্যের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হলে যথা সময়ে এরা পুরো খাবার হজম করতে পারে না। তখন এই খাবার পঁচতে শুরু করে, ফলে গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস পেটের মধ্যে চাপ দিতে থাকে। ফলাফল, ক্ষেত্রবিশেষে বিস্ফোরিতও হতে দেখা যায় ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারকে! অনেক সময় বিস্ফোরণের ফলে ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারের মৃতদেহ ভেসে ওঠে সমদ্রপৃষ্ঠে।

২০০৭ ভেসে ওঠা ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারের মৃতদেহ, পেটে স্নেক ম্যাককেরেল
আরও পড়ুন

এই ভেসে ওঠা মৃতদেহ থেকেই এদের ব্যাপারে যা কিছুটা জানা গিয়েছে। যেমন এদের ডিমের আকার হয় সাধারণত ১১ মিলিমিটারের মতো। আর দেখা গেছে, বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝের সময়টায় পাওয়া মৃতদেহগুলোর পেটেই কেবল ডিম পাওয়া গেছে। তার মানে, এই সময়টাই তাদের প্রজননের সময়।

২০০৭ সালে তেমনি একটি মৃতদেহ ভেসে উঠেছিল সমুদ্রপৃষ্ঠে। এর পেটে স্নেক ম্যাককেরেল নামে একটি মাছের দেহ পাওয়া গিয়েছিল, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৩৪ ইঞ্চি, নিজের দৈর্ঘ্যের প্রায় সাড়ে চারগুণ!

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, উইকিপিডিয়া