সোয়েটার গায়ে দাও, নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে কিন্তু! ছোটবেলা থেকেই মায়ের এমন মিষ্টি শাসন আমরা প্রায় সবাই পেয়েছি। এমনকি নিজেরাও অনেকসময় এ কথা বলেছি বাচ্চাদের। কিন্তু মজার বিষয় হলো, শীতকালের আবহাওয়ার সঙ্গে ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন করতে পারেন, শীতকালে তাহলে সর্দি-কাশি বেশি হয় কেন? কিংবা এভাবেও বলা যায়, শীতকালে বেশি ঠান্ডা লেগে যায় কেন? বলে রাখি, এখানে ‘ঠান্ডা লাগা’ মানে ‘শীত শীত অনুভূতি’ নয়; বরং ‘ঠান্ডা লাগা’ বা সর্দি-কাশি হওয়ার কথা বোঝানো হচ্ছে, বলা বাহুল্য।
বুঝতেই পারছেন, ওপরের প্রশ্নটা করা খুব স্বাভাবিক। শীত এলেই দেখা যায়, হাঁচি-কাশি-সর্দি কিছু না কিছু লেগেই আছে। ফলে মনে হয়, শীতকালে ঠান্ডায় শরীরকে উষ্ণ রাখতে না পারলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ব। এ কারণেই বাইরে বেরোনোর আগে শরীরে ভারী কাপড় চাপিয়ে নিই। কিন্তু আসলেই কি সেটা আমাদের ঠান্ডা লাগার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর জানলে আগের প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যাব আমরা।
ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে। অর্থাৎ শুষ্ক থাকে বাতাস। এটা আমাদের শ্বাসনালীর ওপর প্রভাব ফেলে। শ্বাসনালীর শেষ্মা বা মিউকাস শুকিয়ে যায়। দুর্বল হয়ে যায় এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তাই বাইরে থেকে যখন আমরা ঘরের আরামদায়ক পরিবেশে ঢুকি, তখন ভাইরাসগুলো খুব সহজেই আমাদের আক্রমণ করতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়ান কুইন্স হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ডা. সোরানা সেগাল মাউরার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ঠান্ডা হলে আমরা সাধারণত বেশি সময় ঘরে কাটাই। ঘরের উষ্ণ পরিবেশের বাতাস খুব একটা বদলায় না। একই বাতাসে সবাই শ্বাস নিই। তাই কেউ হাঁচি দিলে সেই জীবাণুও ওই বাতাসে দীর্ঘসময় থেকে যায়।’
এ ছাড়া ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে। অর্থাৎ শুষ্ক থাকে বাতাস। এটা আমাদের শ্বাসনালীর ওপর প্রভাব ফেলে। শ্বাসনালীর শেষ্মা বা মিউকাস শুকিয়ে যায়। দুর্বল হয়ে যায় এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তাই বাইরে থেকে যখন আমরা ঘরের আরামদায়ক পরিবেশে ঢুকি, তখন ভাইরাসগুলো খুব সহজেই আমাদের আক্রমণ করতে পারে।
ঠান্ডা বা সর্দি হয় মূলত ভাইরাসের আক্রমণে। নানা ধরনের ভাইরাস এর জন্য দায়ী। এর মধ্যে রাইনোভাইরাস পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে বেশি সিজনাল বা ঋতুনির্ভর ঠান্ডায় আক্রান্ত করে মানুষকে। এগুলো ৩৩-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালোভাবে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতল আবহাওয়ার কারণে শ্বাসনালীর ত্বকের আবহাওয়া সামান্য কমে গেলে ভাইরাসের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। এতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্রুতবেগে আক্রমণ করতে পারে রাইনোভাইরাস। এ ভাইরাস ছাড়াও ‘করোনা’ এবং ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা এ’ ভাইরাস সর্দিকাশি তৈরি করে। এসব ভাইরাস দ্রুত নিজেদের আচরণ বা বৈশিষ্ট্য বদলাতে পারে। ফলে ঠান্ডার জন্য শতভাগ কার্যকারী ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হয় না।
ঠান্ডার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হলো আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভাইরাস শনাক্ত হলেই তার বিরুদ্ধে রক্তের শ্বেতকণিকাসহ গোটা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লেগে পড়ে যুদ্ধে
ঠান্ডার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হলো আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভাইরাস শনাক্ত হলেই তার বিরুদ্ধে রক্তের শ্বেতকণিকাসহ গোটা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লেগে পড়ে যুদ্ধে। ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি কমানো গেলে দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই বেশির ভাগ সময় জিতে যায়। আমরা তখন সুস্থ হয়ে উঠি।
বৃদ্ধ, শিশুসহ যাঁদের দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল, তাঁরা ঠান্ডা বা সর্দি-কাশিতে বেশি ভোগেন। সারতে সময় নেয় বেশি। অনেক সময় তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারেন এ কারণে।
ঠান্ডা বা সর্দির জন্য সরাসরি শীতকাল দায়ী নয়। তবে এর কিছুটা প্রভাব রয়েছে। তাই বলে শুধু শীতের কাপড় পরে ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচা যাবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। বরং শীত আটকানোর পাশাপাশি ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থাও করতে হবে। এরপরও যদি সর্দি বা ঠান্ডা লাগে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।