কোথাও ব্যথা পেলে ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিতে বলা হয় কেন

হঠাৎ কোথাও ব্যথা পেলে সেখানে হট ওয়াটার ব্যাগ বা আইসব্যাগ লাগিয়ে সেঁক দিতে বলা হয়। দুটো পদ্ধতিই ব্যথা কমাতে কার্যকর। তবে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, হট ওয়াটার ব্যাগ কিংবা আইসব্যাগ কীভাবে ব্যথা কমাতে কাজ করে? আর কোন ব্যথার জন্য কোনটা বেশি কাজে আসে? চলুন তাহলে, ব্যথা পাওয়ার আগেই বিষয়টা জেনে আসা যাক। কে বলতে পারে, কখন কাজে লেগে যায়!

আমাদের পেশী বা জয়েন্টে (কোনো জোড়ায়) আঘাত লাগলে বা ব্যথা হলে, সেই ব্যথা কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা হিট থেরাপি বা গরম সেঁক এবং আইস থেরাপি বা ঠান্ডা সেঁক ব্যবহারের পরামর্শ দেন। সে জন্য প্রায়ই আর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে পেশির টান—বিভিন্ন ধরনের ব্যথা ও প্রদাহের চিকিৎসায় আইস প্যাক বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করা হয়। কারণ, বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমাতে বা আরাম দিতে এগুলো খুব কার্যকরী ফলাফল দেয়। এ ছাড়াও এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো সাশ্রয়ী। ওষুধ বা জটিল চিকিৎসার মতো অনেক টাকা খরচ হয় না। সাধারণ হিটিং প্যাড বা বরফের প্যাক দিয়েই এই চিকিৎসা করা যায়।

গরম বা ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করলে ব্যথা কমে ঠিকই, কিন্তু কখন কোনটি ব্যবহার করতে হবে, তা বোঝাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। যেমন আঘাত পাওয়ার পরপরই ফোলা কমানোর জন্য ঠান্ডা সেঁক ভালো কাজ করে। আবার পুরোনো ব্যথা বা পেশি শক্ত হয়ে গেলে গরম সেঁক আরামদায়ক হতে পারে। এই নিয়ম না জানলে ভুল চিকিৎসা হতে পারে। এ ছাড়াও কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসে, যখন একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসাতেই প্রথমে গরম এবং পরে ঠান্ডা, অথবা উল্টো ক্রমে দুটোই ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ ব্যথার ধরন বা আঘাতের তীব্রতা বুঝে কোনটা বা কখন দুটোই ব্যবহার করা হবে, তা ঠিক করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যখন শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে তাপ প্রয়োগ করি, অর্থাৎ গরম সেঁক বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করা হয়, তখন সেই অংশের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেখানকার রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়। এ কারণে ওই স্থানে রক্ত ​​সঞ্চালন ও রক্ত ​​প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। আর রক্ত ​​প্রবাহ বাড়ার কারণে শরীরের সেই অংশে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে পৌঁছায়, যা ব্যথা বা অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। তাপ পেশিগুলোকে শিথিল করে এবং নমনীয়তা বাড়িয়ে তোলে। ফলে পেশির টান বা শক্ত হয়ে যাওয়া কমে এবং পেশিগুলো আরও সহজে নড়াচড়া করতে পারে। অর্থাৎ তাপের কারণে পেশিগুলো আরাম পায় এবং চাপমুক্ত হয়।

গরম সেঁক দিলে শরীরের ওই জায়গায় রক্ত ​​সঞ্চালন ও রক্ত ​​প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। আর রক্ত ​​প্রবাহ বাড়ার কারণে শরীরের সেই অংশে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে পৌঁছায়, যা ব্যথা বা অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
ছবি: কমিউনিটি হেলথ নেটওয়ার্ক
পেশি সামান্য শক্ত বা টানটান হলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের হিট প্যাড ব্যবহারে আরামদায়ক অনুভূতি হতে পারে। মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে, ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত হিটিং প্যাড ব্যবহারে বেশি উপকার পাওয়া যায়

কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে হিট থেরাপি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে অবস্থার অবনতি হতে পারে বা জটিলতা বাড়ার ঝুঁকি থাকে। যদি আঘাতটি নতুন হয় এবং সেখানে ক্ষত বা ফোলা থাকে, তবে হিট থেরাপির বদলে ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করা ভালো। তাপ দিলে ফোলা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস, ডার্মাটাইটিস, ভাস্কুলার রোগ, ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (DVT), মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS) আর হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে গরম সেঁক ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

গরম সেঁক সাধারণত বেশি সময় ধরে দেওয়া হলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তবে অবশ্যই তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হওয়া উচিত, যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। পেশি সামান্য শক্ত বা টানটান হলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের হিট প্যাড ব্যবহারে আরামদায়ক অনুভূতি হতে পারে। মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে, ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত হিটিং প্যাড ব্যবহারে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

কোল্ড থেরাপি বা ঠান্ডা সেঁকের আরেক নাম ক্রায়োথেরাপি। এটা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে রক্ত ​​প্রবাহ কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কাজ করে। এর ফলে ব্যথা সৃষ্টিকারী প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া এবং ফোলাভাব অনেকটা কমে আসে, বিশেষ করে জয়েন্ট বা টেন্ডনের আশপাশে। ঠান্ডা সেঁক সাময়িকভাবে স্নায়ুর কাজও কিছুটা কমিয়ে দেয়। এতে সেখানকার ব্যথা কমে আসে।

আরও পড়ুন

ব্যথা পাওয়া স্থানে ঠান্ডা সেঁক ব্যবহারের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমন বরফের প্যাক বা বরফের জেল প্যাক, এগুলো সরাসরি ব্যথাযুক্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়। কুলেন্ট স্প্রেও ব্যবহার করেন অনেকে। মাঠে ফুটবল খেলোয়ারদের পায়ের ব্যথা কমাতে এই স্প্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। ব্যথা পাওয়া স্থানে বরফ দিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করলেও ব্যথাটা বেশ কমে আসে।

পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া কিংবা যাঁদের রক্ত সঞ্চালন দুর্বল, তাঁদের ঠান্ডা সেঁক দেওয়া উচিত নয়। ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত স্থানে একটি তোয়ালেতে মোড়ানো আইস প্যাক বা কয়েকটি বরফ লাগানো যেতে পারে। কখনোই হিমায়িত কিছু সরাসরি ত্বকে লাগানো যাবে না, কারণ এতে ত্বক এবং টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে। আঘাত পাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠান্ডার সেঁক নিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। দিনে কয়েকবার অল্প সময়ের জন্য ঠান্ডা সেঁক বা আইস প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট যথেষ্ট। একবারে ২০ মিনিটের বেশি আইস প্যাক ব্যবহার করা উচিত নয়। গুরুতর ব্যথার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ঠান্ডা বা গরম সেঁক নেওয়ার আগে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: হেলথলাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে, হেলথ ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

আরও পড়ুন