হাতি কতটা বিপজ্জনক

একটি পূর্ণবয়স্ক আফ্রিকান হাতির ওজন সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত হতে পারে।ছবি: শাটারস্টোক

হাতিকে আমরা সাধারণত শান্ত এবং বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবেই জানি। কিন্তু এই জেন্টল জায়ান্ট বা ভদ্র প্রাণীটিও মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা হয়তো আমরা অনেকেই কল্পনা করতে পারি না। চলুন হাতির রাগ সম্পর্কে একটু জানা যাক।

একটি পূর্ণবয়স্ক আফ্রিকান হাতির ওজন সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত হতে পারে। এর একেকটি দাঁত প্রায় ৮ ফুট লম্বা হয়। এই দাঁতের ওজন হতে পারে ৬০ কেজি পর্যন্ত। হাতি খুব সহজেই পা দিয়ে একজন মানুষকে পিষে ফেলতে পারে। এমনকি এর বিশাল শুঁড়ের আঘাতেই একজন মানুষ গুরুতর আহত বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

হাতির বিপদের মাত্রা আরও বেড়ে যায় বছরে একবার। পুরুষ হাতিরা বছরে একবার ‘মাস্ত’ নামে একটি বিশেষ দশার মধ্য দিয়ে যায়। এই সময় তাদের শরীরে হরমোনের প্রবাহ, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন বেড়ে যায় প্রচণ্ডভাবে। এই হরমোনের প্রভাবে তারা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং খিটখিটে হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন
একটি পূর্ণবয়স্ক আফ্রিকান হাতির ওজন সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত হতে পারে। এর একেকটি দাঁত প্রায় ৮ ফুট লম্বা হয়। এই দাঁতের ওজন হতে পারে ৬০ কেজি পর্যন্ত।

পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, হাতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। শুধু ভারতেই বুনো হাতির আক্রমণে প্রতি বছর গড়ে ৪০০-৬০০ মানুষ মারা যায়। আফ্রিকা মহাদেশেও এই সংখ্যা কম নয়। সেখানেও বুনো হাতির আক্রমণে বছরে প্রায় ৫০০ জনের বেশি। তবে বাংলাদেশে হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর হার তত বেশি নয়। দৈনিক প্রথম আলোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০১৪-২০২৩ সাল পর্যন্ত হাতির আক্রমণে মারা গেছেন ৪৩ জন।

১৯৯৯ সালের একটি গবেষণা এই ভয়াবহতার একটি দারুণ তুলনা দেখিয়েছিল। ভারতের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ছয় বছরের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়। ওই সময়ে বুনো হাতির আক্রমণে ২৪২ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। অথচ একই সময়ে নেকড়ের আক্রমণে মারা গিয়েছিল ৯০ জন, স্লথ বিয়ারের আক্রমণে ৫০ জন, চিতাবাঘের আক্রমণে ৪ জন এবং বাঘের আক্রমণে ২ জন। অর্থাৎ, ওই অঞ্চলে বাঘ বা চিতাবাঘের চেয়ে হাতিই ছিল অনেক বেশি ঘাতক।

আরও পড়ুন
ভারতেই বুনো হাতির আক্রমণে প্রতি বছর গড়ে ৪০০-৬০০ মানুষ মারা যায়। আফ্রিকা মহাদেশেও এই সংখ্যা কম নয়। সেখানেও বুনো হাতির আক্রমণে বছরে প্রায় ৫০০ জনের বেশি।
একটি পূর্ণবয়স্ক আফ্রিকান হাতির একেকটি দাঁত প্রায় ৮ ফুট লম্বা হয়। এই দাঁতের ওজন হতে পারে ৬০ কেজি পর্যন্ত।
ছবি: ফাউনা & ফ্লোরা

এখন প্রশ্ন করতে পারেন, হাতি কেন আক্রমণ করে? দেখতে তো শান্তই মনে হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনের মূল কারণটি হলো মানুষ। হাতি স্বভাবত কাউকে আক্রমণ করে না। কিন্তু মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের বাসস্থান অর্থাৎ জঙ্গল ধ্বংস করছে। হাতির চলাচলের প্রাচীন পথ বা করিডোরগুলো বন্ধ করে মানুষ ঘরবাড়ি, খামার বা রাস্তা তৈরি করছে। ফলে হাতিরা তাদের স্বাভাবিক খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বা কৃষিজমিতে ঢুকে পড়ছে। আর তখনই শুরু হচ্ছে মানুষ-হাতি সংঘাত। মানুষ যখন ফসল বাঁচাতে হাতিকে ভয় দেখায় বা তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তখন হাতিরাও আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যদি হাতির সঙ্গে বাচ্চা থাকে, তবে মা হাতি অনেক বেশি হিংস্র আচরণ করে। তবে হাতির আবাস্থল ধ্বংস না করলে বা ওদের বিরক্ত না করলে মানুষকে সাধারণত আক্রমণ করে না।

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস ম্যাগাজিন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ন্যশনাল জিওগ্রাফি ও আফ্রিকান ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশন

আরও পড়ুন