হাতি এত বড় কান দিয়ে কী করে

হাতির শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর, এরা অনেক দূরের শব্দও শুনতে পায়মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

প্রখর স্মৃতিশক্তি, সামাজিক আচরণ ও বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রাণিজগতে হাতির নামডাক আছে। হাতি যেমন বিশালদেহী, তেমনি হাতির কান। ওদের কান লম্বায় ৬ দশমিক ৬ ফুট (২ মিটার) ও চওড়ায় ৪ ফুট (১ দশমিক ২ মিটার) পর্যন্ত হয়। আফ্রিকান হাতির তুলনায় এশিয়ান হাতি আকারে ছোট হয়। ফলে ওদের কানের আকারও তুলনামূলক ছোট। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত বড় কান দিয়ে হাতি কী করে?

একটি হাতির ওজন ৫-১৩ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। আর হাতির এই বিশাল শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া চালানোর জন্য হাতিকে অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয়। এতে হাতির শরীরে অনেক তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপ হাতি কানের মাধ্যমে বের করে দেয়। এভাবে সে শরীরের ঠান্ডা রাখে। বজায় রাখে তাপমাত্রার ভারসাম্য।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের জীবশ্মাবিজ্ঞানের অধ্যাপক উইলিয়াম স্যান্ডার্স হাতির ফসিল নিয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন। তিনি লাইভ সায়েন্সকে জানান, ‘হাতি ঘর্মগ্রন্থি খুব কম। শুধু পায়ের নখের ওপরের অংশে এ গ্রন্থি সামান্য আছে। হাতি মানুষের মতো ঘামে না বললেই চলে। হাতির কানের পেছনের দিকে বড় রক্তনালী থাকে। এই রক্তনালীগুলো দিয়ে রক্ত সঞ্চালন করে শরীর শীতল রাখে। হাতির শরীরের চামড়ার তুলনায় রক্তনালীগুলো বেশ পুরু। কানের রক্তনালীর মাধ্যমে হাতি একইসময়ে শরীরের ২০ শতাংশ পর্যন্ত রক্ত সঞ্চালিত করতে পারে। বলা যেতে পারে, হাতির কান অনেকটা এসির কাজ করে! শরীরের বাড়তি তাপমাত্রা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে বের করে দেয়। আবার শীতকালে শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখাও হাতির জন্য সহজ। শরীরে এমনিতেই অনেক তাপ উৎপন্ন হয়। রক্তনালিগুলো সেই সময় সংকুচিত করে রাখে, যাতে শরীরের তাপ বেরিয়ে না যায়।'

একটি হাতির ওজন ৫-১৩ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। আর হাতির এই বিশাল শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া চালানোর জন্য হাতিকে অনেক শক্তি ব্যয় করতে হয়। এতে হাতির শরীরে অনেক তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপ হাতি কানের মাধ্যমে বের করে দেয়
আরও পড়ুন

হাতির শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। হাতিরা অনেক দূরের শব্দও শুনতে পায়। এমনকি মেঘের ভেতরের শব্দও। শব্দ কোনদিক থেকে আসছে তা-ও বুঝতে পারে হাতি। দূর থেকে বিপদসংকেত শুনে সতর্ক হয়ে যায় ও অন্যদের সতর্ক করে।

খেয়াল করলে দেখবেন, হাতি অনেক সময় কান নাড়াতে থাকে। মনে হতে পারে, কিছু করার নেই, তাই আনমনে কান দোলাচ্ছে। আসলে হাতি বিনা কারণে কান দোলায় না। কান নাড়ানোর ফলে হাতির কানে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে তা শরীর শীতল হতে সহায়তা করে। আবার শরীর থেকে মশা-মাছি তাড়ানোর কাজেও বিশাল কান দোলাতে থাকে হাতি।

হাতির কান লম্বায় ২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে
মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

কান দেখে যায় চেনা

মানুষের যেমন পায়ের পাতা দেখে নৃবিজ্ঞানীরা পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন, হাতির ক্ষেত্রে কান দেখে চেনা হয় এদের জাত। গবেষকেরা হাতির কান দেখে এদের প্রজাতি শনাক্ত করেন। মানুষের যেমন হাতের আঙুলের ছাপ ভিন্ন, প্রতিটা হাতির কানের খাঁজও তেমনি ভিন্ন।

এছাড়া হাতি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের উপায় হিসেবেও কান ব্যবহার করে। বিপদ, চ্যালেঞ্জ কিংবা উত্তেজনা প্রকাশের জন্য কান প্রসারিত করে রাখে হাতি। আবার কোনো সিরিয়াস মুহূর্তে বা কোনোকিছুতে মনোযোগ দেওয়ার সময় হাতি কান স্থির রাখে।

লেখক: সাংবাদিক

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও ব্রিটানিকা

আরও পড়ুন