ক্ষত নিরাময়ে নতুন যুগের সূচনা

বায়োচিপের সাহায্যে ক্ষতস্থান আরও দ্রুত সারিয়ে তোলা যাবেছবি: সংগৃহীত

খেলাধুলা করতে গিয়ে আমরা মাঝে মাঝে ব্যথা পাই। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। সৃষ্টি হয় ক্ষতের। অপেক্ষায় থাকি, কখন সারবে। ক্ষত ভালো হওয়ার প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল। এটি নিয়ন্ত্রিত হয় বিভিন্ন কোষ ও প্রোটিনের মাধ্যমে। শরীরের কোষ মরে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত কোষের পরিবর্তে তৈরি হয় নতুন কোষ। এটিও বেশ সময় সাপেক্ষ। সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে এক মাসও লেগে যেতে পারে। 

সম্প্রতি জার্মানির ফ্রাইবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একধরনের বায়োচিপ তৈরি করেছেন। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এ বায়োচিপের সাহায্যে ক্ষতস্থান আরও দ্রুত সারিয়ে তোলা যাবে। গবেষকদের মতে, আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ দ্রুত সেরে উঠবে শরীরের ক্ষত। আসলে আমাদের কোষের গতিবিধি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে শরীরের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রসমূহ। প্রাকৃতিকভাবে শরীরে এ ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা এই সুবিধাই কাজে লাগাতে চাইছেন। কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক প্রভাব কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করছেন তাঁরা। 

এটি এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে গবেষণাধীন অবস্থায় আছে। তবে বিজ্ঞানীরা এ প্রযুক্তি নিয়ে অনেক আশাবাদী। আপাতত গুরুতর আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত ভালো করতে না পারলেও ছোট ক্ষতস্থান সারানো সম্ভব। নতুন এ বায়োচিপে আছে কিছু সূক্ষ্ম ছিদ্র, যা ত্বকের কোষের বৃদ্ধি এবং চলাচল সহজ করতে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে। চিপটি তৈরির জন্য গবেষকরা প্রথমে একটি পাতলা প্লাস্টিকের স্তর তৈরি করেন। তারপর এই স্তরে ব্যবহার করেন সূক্ষ্ম ছিদ্র। ছিদ্রগুলোর আকার ও অবস্থান এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। একটি ছোট ব্যাটারি বা অন্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এটি ত্বকের ওপরে লাগানো হয়। ছিদ্রগুলোর ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। তৈরি হয় একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রটি ত্বকের কোষগুলোর ক্ষত স্থান দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে। 

গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই চিপটি ক্ষুদ্র ক্ষতস্থানকে তিন গুণ দ্রুত ভালো করতে পারে। তাঁদের আশা, এটি ডায়াবেটিকস, ফুট আলসার এবং অন্যান্য জটিল ক্ষত নিরাময়েও কার্যকর হবে। তবে এখনও চিপটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষাধীন রয়েছে। বায়োচিপটি কার্যকর হলে ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। 

বয়স্কদের ক্ষত সেরে উঠতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। ফলে তাঁরা অনেক কষ্ট পান। এই বায়োচিপ তাঁদের খুব কাজে লাগবে। পাশাপাশি গবেষকেরা এমন একটি ডিভাইস তৈরিরও পরিকল্পনা করছেন, যা দিয়ে বাড়িতে বসেই ক্ষত নিরাময় করা যাবে। তবে এখনও এটি বাজারে আসেনি। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি আছে। গবেষকদের আশা, ২০২৫ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা যাবে এই বায়োচিপ। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান বিভাগ, দ্বাদশ শ্রেণি, ঢাকা কলেজ

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, উইকিপিডিয়া 

আরও আপডেট নিউজ পড়ুন