ঠান্ডা, সর্দি-কাশির ওষুধ খেলে ঘুম আসে কেন

কিছু ভাইরাল জ্বর ভাইরাসের কারণে হয়মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

এই সময়টায় অনেকেরই ঠান্ডা লাগছে, জ্বর হচ্ছে, সর্দি-কাশি হচ্ছে। এর কিছু কিছু ভাইরাল জ্বর, ভাইরাসের কারণে হয়। কিছু কিছু আবার আবহাওয়াজনিত। এ ধরনের ভাইরাল জ্বর সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সারে না। (কেন, তা জানতে পারবেন এই লেখায়: অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে সর্দি, কাশি বা ভাইরাল জ্বর সারে না কেন।)

ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি হলে আমরা প্রায়ই ডাক্তারের পরামর্শে কিছু ওষুধ খাই। এসব ওষুধ খেলে সর্দি বা কাশির সমস্যা কমে আসে, কিছুটা আরামও মেলে। তবে অনেক সময় ঘুম ঘুম ভাব হয়। কেন এমন হয়? সর্দি-কাশির ওষুধে কী এমন উপাদান থাকে, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে?

এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে জানতে হবে, ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি কেন হয়। সাধারণত রাইনোভাইরাস নামে একধরনের ভাইরাস আমাদের শ্বসনতন্ত্রের ওপরের অংশে সংক্রমিত হলে সর্দি হয়। শ্বসনতন্ত্র মানে, নাক, গলা বা শ্বাসনালী ইত্যাদি। এর ফলে জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি ও মাথাব্যথার মতো লক্ষণ দেখা যায়। আর কাশি আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। গলা বা শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ বা অন্য কোনো জিনিস বের করে দেওয়ার জন্য এই কাশি হয়। এটি মূলত শরীরকে দমবন্ধ হওয়া থেকে বাঁচায় এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন
অ্যালার্জি বা ঠান্ডা লাগার জন্য যখন অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়া হয়, তখন ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে। এটি ওষুধের একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

ঠান্ডা বা সর্দি-কাশির মতো রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্য আমরা যেসব ওষুধ খাই, এই ওষুধগুলোর একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ঘুম-ঘুম ভাব। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট লরা কার বলেন, ‘অনেকেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করেন।’

অ্যালার্জি বা ঠান্ডা লাগার জন্য যখন অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়া হয়, তখন ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে। এটি ওষুধের একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই ওষুধে ঘুম হয় বলে অনেকে এগুলো ঘুমের ওষুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন।

অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খেলে ঘুম আসার পেছনের মূলত দায়ী হিস্টামিন
মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

কিন্তু প্রশ্ন হলো, অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খেলে কেন ঘুম আসে? এর পেছনের মূলত দায়ী হিস্টামিন। আমাদের শরীরে যখন কোনো অ্যালার্জেন বা ভাইরাস প্রবেশ করে, তখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিস্টামিন নামে একধরনের রাসায়নিক তৈরি করে। হিস্টামিন খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অ্যালার্জি বা সর্দি-কাশির নানা লক্ষণ তৈরি করে। যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, হাঁচি বা চোখ চুলকায়। অ্যান্টিহিস্টামিন নামে ওষুধগুলো এই হিস্টামিনের কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে এ ধরনের লক্ষণগুলো কমে যায়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াও মস্তিষ্কেও হিস্টামিন তৈরি হয়। মস্তিষ্কে এর প্রধান কাজ হলো আমাদের সজাগ বা জেগে থাকতে সাহায্য করা। শ্বাসনালীর বিভিন্ন সমস্যার জন্য যেসব অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এই হিস্টামিনের কাজকে বাধা দেয়। ফলে আমাদের ঘুম ঘুম ভাব হয়।

আরও পড়ুন
লোরাটাডিন এবং ফেক্সোফেনাডিনের মতো নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিনগুলো খেলে তুলনামূলকভাবে ঘুম কম আসে। কারণ, এগুলো মস্তিষ্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না।

ব্যাপারটা আরেকটু খুলে বলা যাক। যখন আমাদের সর্দি হয়, তখন হিস্টামিন নাকের ভেতরের রক্তনালীগুলোকে ফুলিয়ে দেয়। এতে নাক বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে রক্তনালী থেকে তরল এবং বেশি শ্লেষ্মা বের হতে থাকে। ফলে নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। আর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন ভুল করে পরাগরেণু বা পশুর লোমের মতো জিনিসকে ক্ষতিকর মনে করে, তখন শরীরে অ্যালার্জি দেখা যায়। এর প্রতিক্রিয়ায়ও তৈরি হয় হিস্টামিন। এই হিস্টামিন হাঁচি, চোখ চুলকানো, বুকে চাপ লাগা বা শ্বাসকষ্টের মতো অ্যালার্জির নানা লক্ষণ সৃষ্টি করে। অ্যান্টিহিস্টামিন নামে ওষুধগুলো এই হিস্টামিনের কাজ বন্ধ করে দেয়। হিস্টামিনকে কোষের সঙ্গে যুক্ত হতে দেয় না, তাই অ্যালার্জির লক্ষণগুলো কমে আসে।

তবে ডাইফেনহাইড্রামাইন এবং ডক্সিলামাইন সাক্সিনেটের মতো পুরোনো অ্যান্টিহিস্টামিনগুলো হিস্টামিনের সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয়। এগুলো মস্তিষ্কে গিয়ে হিস্টামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, অর্থাৎ ঘুম ও জেগে থাকার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। এ কারণেই আমাদের ঘুম ঘুম ভাব হয়।

তবে লোরাটাডিন এবং ফেক্সোফেনাডিনের মতো নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিনগুলো খেলে তুলনামূলকভাবে ঘুম কম আসে। কারণ, এগুলো মস্তিষ্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: লাইভসায়েন্স, অ্যালার্জিঅ্যাজমানেটওয়ার্ক, হার্ভার্ডহেলথপাবলিশিং

আরও পড়ুন