গলজি বডিকে বাংলায় বলা হয় গলজি বস্তু। কোষের জন্য এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। দেখতে স্তরে স্তরে সাজানো ঝিল্লির মতো। সঠিকভাবে কোষের কাজ পরিচালনা করাই এর কাজ। বিজ্ঞানী ক্যামিলো গলজি ১৮৯৮ সালে পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে এই গলজি বস্তু আবিষ্কার করেন। তাঁর নামানুসারে এর নাম দেওয়া হয় গলজি বডি। সব প্রাণী ও উদ্ভিদের কোষেই এটি পাওয়া যায়। উদ্ভিদ কোষে একে বলা হয় ডিকটিওজোম।
প্রোটিন ও লিপিড প্রক্রিয়াকরণ করে পরিবহনে সাহায্য করে গলজি বডি। এ জন্য একে কোষের ট্রাফিক পুলিশ বলা হয়। কোষের অভ্যন্তরে উৎপাদিত প্রোটিন ও লিপিডের সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিতরণ নিশ্চিত করা এই গলজি বডির প্রধান কাজ। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে প্রোটিন ও লিপিড উৎপাদন হয়। পরে তা গলজি বডিতে প্রেরণ করা হয়। এরপর এই প্রোটিন ও লিপিডকে সংশোধন করে কার্যকরী করে তোলে। যেমন গ্লাইকোসিলেশন বা ফসফরাইলেশন প্রক্রিয়ায় প্রোটিন ও লিপিডে কার্বোহাইড্রেট বা ফসফেট যোগ করে গলজি বডি। ফলে প্রোটিন ও লিপিড তাদের নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়।
ট্র্যাফিক পুলিশ যেমন যানবাহনকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয় এবং যানজট এড়ায়, তেমনই গলজি বডি কোষের ভেতরের বস্তুগুলোর সঠিক বণ্টন এবং পরিবহন নিশ্চিত করে।
এর কার্যপ্রণালীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে—সিস-ফেস ও ট্রান্স-ফেস। সিস-ফেসে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে আসা প্রোটিন ও লিপিড প্রবেশ করে। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এগুলো ট্রান্স-ফেস দিয়ে বের হয়। গলজি বডি এই পদার্থগুলোকে ছোট ছোট ভেসিকলে প্যাকেট করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠায়। তা হতে পারে প্লাজমা মেমব্রেন, লাইসোজোম কিংবা কোষের বাইরে।
গলজি বডিকে ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে তুলনা করার মূল কারণ এর পরিচালনা ক্ষমতা। ট্র্যাফিক পুলিশ যেমন যানবাহনকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয় এবং যানজট এড়ায়, তেমনই গলজি বডি কোষের ভেতরের বস্তুগুলোর সঠিক বণ্টন এবং পরিবহন নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে কোষের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয়। এ জন্যই একে কোষের ট্র্যাফিক পুলিশ বলা হয়।