টাইম মেশিন কি বানানো সম্ভব? কীভাবে বানাবেন?

১০০ বছর আগে খুব কম মানুষ বিশ্বাস করত, মানুষের পক্ষে সময় ভ্রমণ করা সম্ভব। গত ১০০ বছরে মানুষ মহাকাশে ভ্রমণ করেছে। পাড়ি জমিয়েছে চাঁদে, মহাকাশে ছোট্ট বসতি গড়ে বসবাস করেছে বহু দিন—সেই বসতি ঘুরে চলেছে পৃথিবীর চারপাশে। এর নাম আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। অথচ ১০০ বছরের আরেকটু আগে—মোটামুটি দেড়শ বছর আগে ফিরে গেলে দেখা যাবে, মহাকাশ ভ্রমণ যে আদৌ সম্ভব, তা হয়তো বিশ্বাস করতেন না অনেকেই। একইভাবে আজ সময় ভ্রমণের কথা শুনতে অবিশ্বাস্য লাগে। কিন্তু ভবিষ্যতে কি কখনো সময় ভ্রমণ সম্ভব হবে? বিজ্ঞান কী বলে? হয়তো সময় ভ্রমণ থেকে খুব বেশি দূরে নই আমরা—এমনটা বললে বাড়িয়ে বলা মনে হবে। তবে বিজ্ঞানের চোখেও সময় ভ্রমণ যে সম্ভব, এ বইটি তারই আখ্যান।

সময় ভ্রমণের আলোচনা তুঙ্গে ওঠে ১৯৮৫ সালে, এইচ.জি. ওয়েলসের দ্য টাইম মেশিন প্রকাশিত হওয়ার পর। এরপর প্রতিনিয়ত আলোচনায় এসেছে সময় ভ্রমণ। বহু মুভি, সিরিজ বা বইতে এর নানারকম ধরন, বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরকম আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন পল ডেভিস।

মানুষটি খাঁটি পদার্থবিদ। কিন্তু ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানী লিখতেও বেশ পছন্দ করেন। বিজ্ঞান লেখক হিসেবেও তিনি বেশ জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। শৈশবে এইচ. জি. ওয়েলস এবং আর্থার সি. ক্লার্কের লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সময় ভ্রমণের খুঁটিনাটি নিয়ে ভেবেছেন খাঁটি বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে। পদার্থবিজ্ঞান সময় ভ্রমণ নিয়ে কী বলে, তা দীর্ঘদিন ধরে জানার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেই জানাশোনা থেকেই লিখেছেন হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন। 

আরও পড়ুন
সময় ভ্রমণের জন্য দরকার একটি উপযুক্ত ব্ল্যাকহোল বা ওয়ার্মহোল। সময়ের এই ভ্রমণে ভ্রমণকারীর বয়স না-ও বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি তিনি কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাব্য তত্ত্বও ব্যাখ্যা করেছেন।

বইটি কিশোর-তরুণ পাঠকের জন্য সহজ ভাষায় অনুবাদ করেছেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ও অনুবাদক আবুল বাসার। রহস্যময় এ মহাবিশ্বে অতীত ও ভবিষ্যতে যাওয়ার আকাঙ্খা হয়তো একদিন মানুষের পূরণ হবে। তবে বর্তমানে সেই আকাঙ্খা পূরণের জন্য এই বই কাজে লাগাতে পারেন আপনি।

ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডেভিস এই বইয়ে ধাপে ধাপে দেখিয়েছেন, সময় ভ্রমণ সম্ভব কি না। সম্ভব হলে মানুষের পক্ষে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম না ভেঙে কীভাবে সময় ভ্রমণ করা সম্ভব? সময় ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু প্যারাডক্স আছে (যেমন গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স), এই প্যারাডক্স কীভাবে এড়ানো যায়, কোনো ভয়ংকর বিপর্যয় সৃষ্টি না করে কীভাবে এই ভ্রমণ সম্ভব হবে?

পল ডেভিস দেখিয়েছেন, সময় ভ্রমণের জন্য দরকার একটি উপযুক্ত ব্ল্যাকহোল বা ওয়ার্মহোল। সঙ্গে লাগবে প্রবল সৌভাগ্য। এই দুইয়ের সমন্বয়ে কীভাবে বাস্তবসম্মতভাবে সময় ভ্রমণ করা সম্ভব, তা নিয়েই এই বইয়ের আলোচনা। 

আরও পড়ুন

একনজরে

হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন

লেখক: পল ডেভিস

ভাষান্তর: আবুল বাসার

দাম: ৩০০ টাকা

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

সময় ভ্রমণের ধারণা সার্বজনীন নয়। এ বিষয়ে সব বিজ্ঞানী একমতও নন। কারো কাছে ভ্রমণ সম্ভব হওয়ার পক্ষে যুক্তি আছে, কেউ কেউ যুক্তির মাধ্যমে নাকচ করেছেন। লেখক পল ডেভিস বিষয়গুলো সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

সময় ভ্রমণের ঘটনা এখনো বাস্তবে ঘটতে দেখা যায়নি। অনেকে অবশ্য দাবি করেছেন, কিন্তু সেগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। অতীত বা ভবিষ্যত থেকে কেউ আমাদের সময়ে এসে উঁকি দেয়নি। আমরা গল্প-নাটক-সিনেমা তথা কল্পনায় শুধু সময় ভ্রমণ সম্ভব হতে দেখেছি। ব্যাক টু দ্য ফিউচার মুভি বা ক্রোনো ট্রিগার ভিডিও গেমে টাইম মেশিনের ধারণার উদাহরণ দেখানো হয়েছে। এই জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়, চরিত্রেরা অতীত-ভবিষ্যতের বিভিন্ন সময়ে হারহমেশা ভ্রমণ করছেন। এই গল্পগুলোতে সাধারণত এমন গাড়ি বা যন্ত্র দেখানো হয়, যেখানে থাকে সুইচ টিপে অতীত বা ভবিষ্যতে হুট করে চলে যাওয়ার নানা ঘটনা, বিভিন্ন উপায়। পল ডেভিসের এই বইয়ে কাল্পনিক এমন সময় ভ্রমণের কথা নেই। ঠিক কীভাবে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে, মহাবিশ্বের নিয়ম না ভেঙে সময় ভ্রমণ করা সম্ভব, তা নিয়ে এই বই।

সময় ভ্রমণের ধারণা সার্বজনীন নয়। এ বিষয়ে সব বিজ্ঞানী একমতও নন। কারো কাছে ভ্রমণ সম্ভব হওয়ার পক্ষে যুক্তি আছে, কেউ কেউ যুক্তির মাধ্যমে নাকচ করেছেন। লেখক পল ডেভিস বিষয়গুলো সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন, কীভাবে সময় ভ্রমণের পরিকল্পনা করা যাবে।

এই বইয়ে টাইম মেশিন বলতে কোনো মেশিন বা যন্ত্রের কথা বলেননি লেখক। এখানে আছে শুধু সময় ভ্রমণের বিজ্ঞানসম্মত এবং বাস্তবধর্মী দৃষ্টান্ত। জ্যোতির্বিজ্ঞান, মহাকাশ, পদার্থবিদ্যা ও কোয়ান্টাম মেকানিকসের কিছু বিষয় বা ধারণা এই ভ্রমণকে সম্ভব করে। এই ধারণাগুলো সহজ করে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। 

আরও পড়ুন
সময় ভ্রমণের আলোচনা তুঙ্গে ওঠে ১৯৮৫ সালে, এইচ.জি. ওয়েলসের দ্য টাইম মেশিন প্রকাশিত হওয়ার পর। এরপর প্রতিনিয়ত আলোচনায় এসেছে সময় ভ্রমণ। বহু মুভি, সিরিজ বা বইতে এর নানারকম ধরন, বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রথম অধ্যায়ে লেখক সবচেয়ে সহজ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন—ভবিষ্যতে ঝাঁপ দেওয়া। তিনি ‘স্যাম এবং স্যালি’ নামে দুটি চরিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে কেউ ভবিষ্যতে যেতে পারে। সময়ের এই ভ্রমণে ভ্রমণকারীর বয়স না-ও বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি তিনি কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাব্য তত্ত্বও ব্যাখ্যা করেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আরেকটু গভীরে গিয়েছেন লেখক। কীভাবে অতীতে ফেরা সম্ভব? এর জন্য তিনি ওয়ার্মহোল এবং ‘নেকেড’ বা ‘উন্মুক্ত’ সিঙ্গুগুলারিটির ধারণা এনেছেন। তৃতীয় অধ্যায়ে সময় ভ্রমণের আগের ধারণাকে একত্রিত করে ‘সম্পূর্ণ টাইম মেশিন’ তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। যদিও বেশির ভাগ অংশ তাত্ত্বিক, কিছু কিছু বিষয় এমনকি অসম্ভব মনে হতে পারে। তবে সময় ভ্রমণ বিষয়টি পুরোপুরি জানার জন্য এই বই সহজ ও সুন্দর একটি মাধ্যম হবে। আমাদের ভাগ্য ভালো হলে হয়তো একদিন সত্যিই আমরা সময় ভ্রমণ করতে পারব। 

মহাবিশ্ব নিয়ে নতুন কিছু জানতেও এই বই পড়তে পারেন। চেনা জগতের সঙ্গে মিলিয়ে রহস্যময় মহাবিশ্বের অতীত আর ভবিষ্যতে ভ্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে বইটি অনন্য।

আরও পড়ুন