কুমড়া কেন ১২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে, আপেল কেন নয়

কিছু কুমড়ার ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়!ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

প্রতিবছরই খবরের কাগজে বা ইন্টারনেটে বিশাল ও দৈত্যাকার সব কুমড়ার ছবি দেখা যায়। কোনোটার ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়! অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আপেলটির ওজনও মাত্র ২ কেজির কাছাকাছি। আর ব্লুবেরি তো একেবারেই ছোট।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আপেল বা কমলার মতো কুমড়াও একটি ফল। তাহলে প্রশ্ন হলো, কুমড়া কীভাবে এত বড় হয়? আপেল বা কমলা কেন বড় হয় না? এর পেছনের কারণগুলো কিন্তু দারুণ মজার। চলুন, সেগুলো জেনে নিই।

আপেল বা কমলার মতো কুমড়াও একটি ফল। কিন্তু কুমড়া কেন বেশি বড় হয়?
ছবি: মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

কুমড়ার বড় হওয়ার পেছনে প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো, কুমড়া গাছ কিছুটা আজব ধরনের। বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘ইনডিটারমিনেট প্ল্যান্ট’। মানে এই গাছের বেড়ে ওঠার কোনো নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা নেই! গাছটি যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন ওটা লতাপাতা মেলতেই থাকে। কুমড়া গাছের শক্তির দরকার হলে আরও কয়েকটা নতুন পাতা গজিয়ে ফেলে! কারণ পাতাই তো গাছের খাদ্য বা শক্তি তৈরির রান্নাঘর। এর কোনো জেনেটিক চোক পয়েন্ট বা বংশগত বাধা নেই। কিন্তু আপেল বা কমলার মতো গাছগুলো হলো ‘ডিটারমিনেট’। মানে এগুলো একটা নির্দিষ্ট আকার পর্যন্ত বড় হয়, কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক ফল দেয়, তারপর থেমে যায়।

আরও পড়ুন
কুমড়ার বড় হওয়ার পেছনে প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো, কুমড়া গাছ কিছুটা আজব ধরনের। বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘ইনডিটারমিনেট প্ল্যান্ট’।মানে এই গাছের বেড়ে ওঠার কোনো নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা নেই!

চতুর চাষীরা কুমড়া গাছের এই ক্ষমতার সুযোগটা খুব ভালোভাবেই নেন। ভাবতে পারেন, তাঁরা কীভাবে এটা জানেন? তাঁরা একটা লতায় মাত্র একটা কুমড়া বাদে বাকি সবগুলোকে ছোট থাকতেই ছিঁড়ে ফেলেন। ফলে ওই বিশাল লতানো গাছটি সমস্ত পাতা দিয়ে যে পরিমাণ শক্তি বা খাবার তৈরি করে, তার সবটুকু ওই একটা ফলের পেছনেই ঢেলে দেয়। আর কুমড়াও তখন বিশাল আকার ধারণ করে।

আপনি হয়তো ভাবছেন, এ কাজ তো আপেল গাছের সঙ্গেও করা যায়! একটা গাছে শুধু একটা আপেল রাখলে সেটাও তো বড় হবে? হ্যাঁ, হবে। কিন্তু এখানেই চলে আসে পদার্থবিদ্যার আসল খেলা। কুমড়া আরামে মাটির ওপর শুয়ে শুয়ে বড় হয়। মাটির সাপোর্ট থাকায় এর ওজন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু একটা আপেল বা আম যদি ১ হাজার ২০০ কেজি ওজনের হতো, তাহলে কি সেটা গাছের ডালে ঝুলে থাকতে পারত? অনেক আগেই তো ডাল ভেঙে বা বোঁটা ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যেত!

বড় হওয়ার জন্য কুমড়ার কারণ হলো কুমড়ার খোসা। এই শক্ত খোসাটা পুরো কুমড়োটাকে মজবুত কাঠামো দেয়।
ছবি: গেটি ইমেজ

বড় হওয়ার জন্য কুমড়ার আরও একটা সুপার পাওয়ার আছে। সেটা হলো কুমড়ার খোসা। এই শক্ত খোসাটা পুরো কুমড়োটাকে মজবুত কাঠামো দেয়। একটা নরম ফলের পক্ষে এত ওজন ধরে রাখা সম্ভব নয়। একটা টমেটো যদি এত বড় হতো, তাহলে নিজের ওজনেই ওটা ফেটে যেত। চাষীরা কুমড়াকে কাপড় বা চট দিয়ে ঢেকে রাখে, যাতে রোদ লেগে খোসাটা তাড়াতাড়ি শক্ত না হয়ে যায় এবং বেশি সময় ধরে বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন
বড় হওয়ার জন্য কুমড়ার আরও একটা সুপার পাওয়ার আছে। সেটা হলো কুমড়ার খোসা। এই শক্ত খোসাটা পুরো কুমড়োটাকে মজবুত কাঠামো দেয়।

বিশালাকার কুমড়া দিনে ২০ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়াতে পারে! ভাবুন একবার! এই বিপুল পরিমাণ খাবার বা শর্করা  গাছের পাতা থেকে ফলের কাছে পৌঁছানোর জন্য কুমড়োর ভেতরে একটা সুপারপাওয়ারড হাইওয়ে সিস্টেম আছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, দৈত্যাকার কুমড়ার ভেতরে ফ্লোয়েম আছে। বিশালাকার কুমড়ায় এই ফ্লোয়েম সাধারণ কুমড়ার চেয়ে অনেক বেশি থাকে।

কুমড়া বড় হওয়ার জন্য সময়ও পায় অনেক। একটা কুমড়া গাছ প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস ধরে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। কিন্তু আপেল, জাম বা কমলা ফুল থেকে ফল হতে অনেক কম সময় নেয়।

৪ অক্টোবর, ২০২৫-এ টপসফিল্ড মেলার অল নিউ ইংল্যান্ড জায়ান্ট পাম্পকিন ওয়েই-অফে এই বিশাল আকারের কুমড়োটি ২,৫০৭ পাউন্ড (১,১৩৭ কেজি) ওজন নিয়ে বিজয়ী হয়।
ছবি: গেটি ইমেজ

তবে এতসব কারণের পরেও কুমড়ার বড় হওয়ার পেছনে একটা বিশেষ কারণ আছে। আর তা হলাম আমরা, মানে মানুষ। আমরা আপেল বা আম চাষ করি স্বাদের জন্য। কিন্তু কুমড়োর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি দুই ধাপে ঘটেছে। শত শত বছর ধরে কুমড়া চাষ করা হয়েছে সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য। ফলে আমরা সবসময় কুমড়ার বড় জাতগুলো বেঁছে নিয়েছি। কিন্তু আজ আমরা যে ১ হাজার ২০০ কেজি মতো বিশালাকার কুমড়াগুলো দেখি, সেগুলোর উদ্দেশ্য ভিন্ন। গত কয়েক দশক ধরে এই কুমড়োগুলো চাষ করা হচ্ছে শুধু একটা কারণেই—কে কত বড় করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতার জন্য! এই প্রতিযোগিতার কুমড়োগুলোর স্বাদ যেমনই হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। এই দুই ধরনের সিলেক্টিভ ব্রিডিংয়ের ফলেই কুমড়া আজ এত বড় হতে পেরেছে, কিন্তু আপেল বা অন্য ফল পারেনি।

লেখক: ফ্রন্টেন্ড ডেভলপার, সফটভেঞ্চ

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন