বায়োটেকনোলজির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চাকরি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র বায়োটেকনোলজি। কিন্তু বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজির জন্য পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে না। সচেতনতার অভাবে বিভিন্ন জায়গায় গ্র্যাজুয়েটদের আবেদন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সমস্যা দূর করতে কী করা যায়, তা নিয়েই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজ করে নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনোলজিস্টস অব বাংলাদেশ (এনওয়াইবিবি)।

দেশের ৫০ ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োটেকনোলজির সিলেবাস ও পড়ার ধরণ সম্পর্কে জানে না। এ কারণেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিশেষায়িত এই শিক্ষার্থীদের অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেই আবেদন করতে দেওয়া হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে দুপুরে আয়োজিত হয় এই গোলটেবিল বৈঠক। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. ছগীর আহমেদ। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুল আউয়াল এবং গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনওয়াইবিবির পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান। মূল উপস্থাপনায় দেখানো হয়, দেশে প্রতিবছর ১ হাজার ৭০০ বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েট স্নাতক সম্পন্ন করছেন। কিন্তু তাঁদের ৪৫ ভাগই বিষয় সংশ্লিষ্ট কোনো চাকরিতে যুক্ত হতে পারছেন না। এছাড়াও বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিষয়ের স্নাতকদের আবেদন করতে দেওয়া হয় না। আবার দেশের ৫০ ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োটেকনোলজির সিলেবাস ও পড়ার ধরণ সম্পর্কে জানে না। ফলে অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের আবেদন করতে দেওয়া হয় না। এই আলোচনায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুল আওয়াল ‘ওয়ান স্টপ সল্যুশন’ হিসেবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিকে কার্যকর ভূমিকা পালন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এছাড়াও বায়োটেকনোলজির গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং বর্তমানে নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুমাইয়া ফারাহ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক  নাজমুল হাসান।

ইন্ডাস্ট্রি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বায়োটেকনোলজির অবস্থান সম্পর্কে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে বায়োটেকনোলজিকে পরিচিত করাতে কোলাবোরেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

আরও পড়ুন

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বিসিএসআইআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদা ভূঁইয়া, বায়োটেক কনসার্ন কোম্পানির সিইও এম এ ওয়াদুদ, আইইডিসিআর-এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফ খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহমুদা কবির শাওন, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সরূপ হাসান।

উপস্থিত অতিথিরা এসব সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেন। তাঁরা একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বায়োটেকনোলজির পাঠ্যক্রম এবং ব্যবহারিক দক্ষতা সম্পর্কে অবহিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মুশতাক ইবনে আয়ুব।

আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ক্লাব। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল বায়োটেক কনসার্ন।

আরও পড়ুন