চলতি বছর আবদুর রহমান মেমোরিয়াল ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড পেলেন দুই শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিলভিয়া নাজনীন। গত ৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির অফিসে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এই পুরস্কার দেওয়া হয় গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশি বায়োটেকনোলোজিস্টের (GNOBB) পক্ষ থেকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিএনওবিবির শিক্ষা বিভাগের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অপর্না ইসলাম, জিএনওবিবির সভাপতি ও ইউজিসি অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ, জিএনওবিবির অর্থ ও আইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুহম্মদ মঞ্জুরুল করিম, জিএনওবিবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, জিএনওবিবির শিক্ষা বিভাগের সদস্য সাবরিনা এম ইলিয়াস, জিএনওবিবির ইসি এউ.এস মাহ্জাবীন আমিন ও মো. হামেদ হুসাইন। এছাড়া জাপান থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন জিএনওবিবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবিদুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মোর্শেদা আক্তার।
২০ বছর ধরে আমাদের এই পথ চলার একটা বড় সাফল্য যে, আমরা এটা করতে পেরেছি। বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বের জন্য সম্মানিত করতে পারছি। নীতি নির্ধারক ও সাধারণ জনগণের কাছে বায়োটেকনোলজির সুবিধাগুলো তুলে ধরা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক অপর্ণা ইসলাম বলেন, ‘দুই দশক আগে বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজিস্টদের একটি নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে জিএনওবিবি। আমরা স্বাস্থ্য, কৃষি এবং পরিবেশের উন্নয়নে বায়োটেকনোলজির অগ্রগতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য কাজ করছি। এই বছর আবদুর রহমান মেমোরিয়াল ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ডে স্বাস্থ্য ও কৃষি বিভাগ থেকে দুজনকে আমরা পুরস্কৃত করেছি।’
‘কিনোয়া’ সুপারফুড নিয়ে গবেষণা করেছে তিনি। আইরিন আক্তার বলেন, ‘আবদুর রহমান মেমোরিয়াল ফেলোশিপ আমার একাডেমিক নিষ্ঠা ও গবেষণার প্রতি অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
জিএনওবিবির মিশন ও ভিশন নিয়ে কথা বলেন জেবা ইসলাম সেরাজ। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমাদের এই পথ চলার একটা বড় সাফল্য যে, আমরা এটা করতে পেরেছি। বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বের জন্য সম্মানিত করতে পারছি। নীতি নির্ধারক ও সাধারণ জনগণের কাছে বায়োটেকনোলজির সুবিধাগুলো তুলে ধরা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য বায়োটেকনোলজির যথাযথ ব্যবহার করতে চাই আমরা।’
জাপান থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন জিএনওবিবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবিদুর রহমান। তিনি তাঁর প্রয়াত পিতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার বাবা সবসময় শিক্ষার অগ্রগতিতে কাজ করেছেন। বাবা-মা দুজনই শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাদের গ্রামে প্রাইমারি স্কুল বানিয়েছেন। গ্রামের অসহায়, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় এগিয়ে এসেছেন। আমি আশা করি তাঁর স্মরণে এই মেমোরিয়াল ফেলোশিপ শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা ও গবেষণায় ভূমিকা রাখবে।’
এরপর বিজয়ী দুই শিক্ষার্থীর হাতে চেক তুলে দেন অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম।
পরে নিজের গবেষণা নিয়ে কথা বলেন অ্যাওয়ার্ড পাওয়া শিক্ষার্থী সিলভিয়া নাজনীন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এক ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিচ্ছে, বিশেষত ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আমি তরুণ ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে গবেষণা করছি। তাদের শরীরে ঠিক কোন জিনগত মিউটেশন ডায়াবেটিস সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে কাজ করছি। এর জন্যই আমি আবদুর রহমান মেমোরিয়াল ফেলোশিপ পেয়েছি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের।’
আমার বাবা সবসময় শিক্ষার অগ্রগতিতে কাজ করেছেন। বাবা-মা দুজনই শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাদের গ্রামে প্রাইমারি স্কুল বানিয়েছেন। গ্রামের অসহায়, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় এগিয়ে এসেছেন।
অন্যদিকে বিজয়ী আইরিন আক্তার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ‘কিনোয়া’ সুপারফুড নিয়ে গবেষণা করেছে তিনি। আইরিন আক্তার বলেন, ‘আবদুর রহমান মেমোরিয়াল ফেলোশিপ আমার একাডেমিক নিষ্ঠা ও গবেষণার প্রতি অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। কিনোয়া প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও লিপিডের চমৎকার উৎস এবং এটি লবণাক্ত ও খরাপ্রবণ পরিবেশেও ভালোভাবে জন্মাতে সক্ষম। বাংলাদেশের মতো জনবহুল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা আক্রান্ত দেশে কিনোয়া হতে পারে ধানের সম্ভাব্য বিকল্প। এই ফেলোশিপ আমাকে গবেষণার প্রতি আরও অনুপ্রাণিত করেছে।’
আবদুর রহমান মেমোরিয়াল ফেলোশিপ দেওয়া হয় প্রয়াত আবদুর রহমানের স্মৃতিকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জিএনওবিবির সদস্যরা তাঁদের ডিগ্রির অংশ হিসেবে গবেষণা প্রকল্পের অধীনে এই ফেলোশিপে আবেদন করতে পারেন।