ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণে আয়োজিত হয় স্মরণ সভা। গত ১৯ এপ্রিল, শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক ইসলামের পরিবারের আয়োজনে এই সভায় তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন, গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান তুলে ধরা হয়। এ সময় তাঁকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ সবাইকে স্বাগত জানান। তারপর প্রয়াত পিতার জন্য ক্ষমা ও দোয়া চান। অনুষ্ঠানে বক্তারা অধ্যাপক ইসলামের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং দেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শমসের আলী তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন বলেন, ‘তাঁর মতো প্রজ্ঞাবান বিজ্ঞানী আমাদের সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ ছিলেন।’
সভায় অধ্যাপক ইসলামের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম বলেন, তাঁর পিতা ছিলেন একজন স্নেহময় জনক এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষক।
সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘অধ্যাপক ইসলাম ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী শিক্ষক ও গবেষক। তাঁর গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির লাল সাহা বলেন, ‘স্যার ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন, তা আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে। তিনি যে মানের শিক্ষক ছিলেন, আমরা হয়তো স্যারকে সেভাবে যথাযথ সম্মান জানাতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা।’
বিসিএসআইআরের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিম খান টিস্যু কালচার প্রযুক্তির উন্নয়নে অধ্যাপক ইসলামের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং অধ্যাপক ইসলামের প্রিয় নজরুল সঙ্গীত শিল্পী অধ্যাপক নাশিদ কামাল অধ্যাপক ইসলামের স্মরণে নজরুল সংগীতের কিছু লাইন পরিবেশন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল রহমানসহ অনেকে অধ্যাপক ইসলামের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাখাওয়াত হোসেন, বিএপিটিসিবির প্রতিনিধি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, আইইউবির অধ্যাপক সাবরিনা এম ইলিয়াস এবং বোটানিক্যাল সোসাইটি ও অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষকমণ্ডলীরা। এরপর ময়মনসিংহের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক ইসলামের পিএইচডি ছাত্র সামাদ তাঁর স্মৃতিচারণ করেন। শেষে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির হাসান এবং এএসআই স্কুল অব লাইফের সমন্বায়ক মোর্শেদা আক্তার মীম অধ্যাপক ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
প্রয়াত পিতার জন্য ক্ষমা ও দোয়া চান। অনুষ্ঠানে বক্তারা অধ্যাপক ইসলামের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং দেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
সভায় অধ্যাপক ইসলামের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম বলেন, তাঁর পিতা ছিলেন একজন স্নেহময় জনক এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। অধ্যাপক ইসলামের একমাত্র কন্যা, ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের অধ্যাপক জেবা ইসলাম তাঁদের পিতার স্মৃতিচারণ করেন। অধ্যাপক ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালিদ ইসলাম প্রয়াত পিতার জন্য দোয়া চান। সবশেষে অধ্যাপক ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম দোয়া পরিচালনা করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অধ্যাপক ইসলাম তাঁর কর্মজীবনে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রেসিডেন্ট’স গোল্ড মেডেল ইন অ্যাগ্রিকালচার (১৯৮৪), একুশে পদক (শিক্ষা, ১৯৮৬), বিএএস গোল্ড মেডেল ইন বায়োলজি (১৯৮৭), বাংলাদেশ বোটানি অ্যাসোসিয়েশন স্বর্ণপদক (১৯৯৭) এবং জিএনওবিবি প্রদত্ত লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৭)।