আন্তর্জাতিক ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশের দল। মার্কিন সংস্থা ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিওএফএসএ) আয়োজিত ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতার ১২তম আসরে এ অর্জন করে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ব্ল্যাক পার্ল।
এই দলের সদস্যরা সবাই নৌযান ও নৌযন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন মো. সাফায়েত হোসেন, মো. আব্দুল কাদের, আবু রাসেল, মাহমুদুল হাসান, আফিফ বিন হাবিব, মো. আতিকুর রহমান এবং মো. কাউসার মাহমুদ। এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে ছিলেন নৌযান ও নৌযন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জোবায়ের ইবনে আওয়াল।
এই প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এটি ছিল অনলাইনভিত্তিক প্রতিযোগিতা। এশিয়া, আফ্রিকা এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। যাবতীয় হিসাব-নিকাশ, ড্রইং ও ত্রিমাত্রিক ডিজাইনসহ ১৮ পৃষ্ঠার রিপোর্টে উপস্থাপন করেন তাঁরা। ৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দলটি প্রথম স্থান অর্জন করে। বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ লাখ টাকার সমমূল্য।
দলের সদস্যরা সবাই নৌযান ও নৌযন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন মো. সাফায়েত হোসেন, মো. আব্দুল কাদের, আবু রাসেল, মাহমুদুল হাসান, আফিফ বিন হাবিব, মো. আতিকুর রহমান এবং মো. কাউসার মাহমুদ।
২০২১ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অংশ নিলেও চূড়ান্ত সাফল্যের দেখা পান এ বছর। এবার তাই শিক্ষার্থীদের আনন্দও বেশি। এ প্রসঙ্গে টিম ব্ল্যাক পার্লের সদস্য মো. কাউসার মাহমুদ জানান, ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন ডিজাইন প্রতিযোগিতায় শর্ত অনুযায়ী কাজ করতে হয়। যেমন, কত যাত্রী ধরবে, বাস-ট্রাক বা অন্য কোনো পণ্য পরিবহন করতে পারবে কি না, ফেরিটি ইলেকট্রিক হতে হবে ইত্যাদি। এরকম একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ ও বুয়েটের জন্য গৌরবের।’
আগের চেয়ে এবারের প্রস্তুতিতে বিশেষ কী ছিল জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গত তিন আসরে আমাদের দল দ্বিতীয়, তৃতীয় ও অনারেবল মেনশন পেয়েছে। এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ধীরে ধীরে আমরা লক্ষের দিকে এগিয়ে গেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে গত আসরের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লেগেছে।’
প্রতিযোগিতার ১২তম আসরে (চলতি আসর) নাইজেরিয়ার লেগোস শহরের অভ্যন্তরীণ জলপথ ইকোরোডু-সিএমএসর উপযোগী ফেরি ডিজাইন করতে বলা হয়। শর্ত ছিল, ফেরিটি দুইশ যাত্রী পরিবহন ও বিদ্যুৎপরিচালিত হতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন ‘নাইজা স্পিরিট’ নামের ফেরিটি বানান। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের দ্বিতলবিশিষ্ট এই ক্যাটামারান ফেরিতে প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে রিচার্জেবেল ব্যাটারি। এটি চার্জ করতে ২৪ মিনিট লাগে। এক চার্জে চলবে ৫০ কিলোমিটার। মানে একবার যাওয়া-আসা করা যাবে এক চার্জেই। ডিজাইন অনুযায়ী, একটি চার্জিং স্টেশন ইকোরোডু টার্মিনালে স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য সৌরবিদ্যুৎ ও হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল রাখা হয়েছে ফেরিতে।
শর্ত ছিল, ফেরিটি দুইশ যাত্রী পরিবহন ও বিদ্যুৎপরিচালিত হতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন ‘নাইজা স্পিরিট’ নামের ফেরিটি বানান। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের দ্বিতলবিশিষ্ট এই ক্যাটামারান ফেরিতে প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে রিচার্জেবেল ব্যাটারি।
ইকোরোডু-সিএমএসর পরিবর্তনশীল পানির গভীরতা এখানকার চলাচলকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এমন পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ফেরি চালনোর জন্য হাইড্রোলিক রিট্রাক্টেবেল ও টিল্টেবেল প্রোপেলার যুক্ত করা হয়েছে। ফেরিতে রয়েছে হাইড্রোকাইনেটিক টারবাইন ও রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম। ফলে পানি থেকে শক্তি পাওয়া যাবে। নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক, ফায়ার স্প্রিংক্লার, অপ্টিমাইজেড অ্যাবাকুয়েশন ও ডিরেকশনাল সাউন্ড বেকন সিস্টেমের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ব্যাপারে টিম ব্ল্যাক পার্লের দলনেতা মো. সাফায়েত হোসেন জানান, ‘সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ফেরিটি ১০টি ট্রিপ পরিচালনা করতে সক্ষম। প্রতি ট্রিপে (প্রায় ২৫ কিলোমিটার) সময় লাগবে প্রায় ৪২ মিনিট। আমাদের ডিজাইন বলছে, ফেরিটি তৈরি করতে আনুমানিক ১.০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে।’
ভবিষ্যতেও বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট নিজেদের কাছে রাখতে চান এই তরুণরা। আধুনিক জাহাজ শিল্প ও মেরিটাইম সেক্টরে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে চান তাঁরা।