নভোচারীরা কত বেতন পান

নাসা ও ইসার নভোচারী হতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকা আবশ্যক

ছোটবেলায় ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’—এমন প্রশ্নের উত্তরে আমরা অনেকেই একবার হলেও নভোচারী হওয়ার স্বপ্নের কথা বলেছি। সত্যি বলতে, নিজেরা এই স্বপ্ন দেখেছিও। রকেটে করে মহাকাশে যাওয়া, মহাশূন্যে হাঁটা, অজানা গ্রহ আবিষ্কারের জল্পনা-কল্পনা সবার কাছেই রোমাঞ্চকর। তবে বাস্তবে একজন নভোচারী হওয়া বেশ কঠিন। সে জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম, বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ এবং অনেক বড় আত্মত্যাগ। এই অসাধারণ পেশার জন্য কী ধরনের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, তা জানতেও আমাদের মনে প্রায়ই কৌতূহল জাগে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক একজন নভোচারী ঠিক কত টাকা বেতন পান।

প্রথম প্রশ্নটা হলো, নভোচারী আসলে কারা? যাঁদের মহাকাশযানে চড়ে মহাকাশ অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নভোচারীরা মহাকাশযানের কমান্ডার বা ক্রু হিসেবে মহাকাশ অভিযানে অংশ নেন। তাঁরা মহাকাশে গিয়ে শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন, এমনটা নয়। তাঁরা মহাকাশযানের বিভিন্ন সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করেন।

নাসা ও ইসার নভোচারী হতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। প্রথমত, তাদের সে দেশের নাগরিক হতে হয়। সঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল বা গণিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হয়।

এ ছাড়াও অনেক কাজ করেন নভোচারীরা। মহাকাশে ছবি তুলতে হয়। অনেক সময় মহাশূন্যে হেঁটে বিভিন্ন কাজ করতে হয় তাঁদের। নিয়মিত পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বৈজ্ঞানিক নানা ডেটা পাঠাতে হয়। মহাকাশে গাছ হয় কি না, কিংবা খাওয়াদাওয়া রক্ষণাবেক্ষণসহ আরও অনেক কাজ করতে হয় নভোচারীদের। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীদের।

নভোচারীরা মহাকাশযানের বিভিন্ন সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করেন

এ ছাড়া চাঁদে অভিযান বা এরকম বিশেষ অভিযানে থাকে বিশেষ দায়িত্ব। তবে এরকম মানুষবাহী উপগ্রহ বা গ্রহান্তরে অভিযান এখন খুব বেশি পরিচালিত হয় না। তবু শুধু মহাকাশে যাওয়ার জন্যই একজন নভোচারীকে পৃথিবীতে কঠিন প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিতে হয়। মহাকাশচারী হতে হলে দুই বছরের কঠোর প্রশিক্ষণ লাগে। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশযান পরিচালনার কৌশল, মাইক্রোগ্র্যাভিটি ও ওজনহীনতার প্রস্তুতি এবং রোবটিকসসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা।

আরও পড়ুন

যাঁরা মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে চান, তাঁদের সবারই আগ্রহ থাকে বিশ্বের বৃহত্তম মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে কাজ করার। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসায় কর্মরত বেসামরিক নভোচারীরা ফেডারেল সরকারের বেতন স্কেলে বেতন পান। তাঁদের বেতন বিভিন্ন গ্রেডে হয়। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সাধারণত প্রকাশ করা হয় না।

২০২২ সালের এক হিসাব অনুসারে, একজন নভোচারীর শুরুর বেতন বার্ষিক ৮১ হাজার ২১৬ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৭৯ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশি অর্থমূল্যে এর মূল্যমান দাঁড়ায় প্রায় ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৮০৪ থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৬ টাকা। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে পদোন্নতি পান তাঁরা। সঙ্গে বেতন বেড়ে বার্ষিক ৯৫ হাজার ৯৭৩ থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৪ মার্কিন ডলারের সমান পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১কোটি ১৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৫২ থেকে ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮৮ টাকা। সবচেয়ে অভিজ্ঞ নভোচারীদের বেতন আরও বেশি, বার্ষিক ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৭ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৪ হাজার ৫৭৪।

নিয়মিত পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বৈজ্ঞানিক নানা ডেটা পাঠাতে হয়

নাসার মতো আরেকটি মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা)। বিশ্বের অন্যতম বড় এই মহাকাশ সংস্থার সদর দপ্তর ফ্রান্সের প্যারিসে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালিসহ ২২টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এটি পরিচালিত হয়। ইসায় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত নভোচারীদের বেতন দেশভেদে আলাদা হলেও একটি নির্দিষ্ট বেতন স্কেল অনুসরণ করে। শুরুর দিকে তাদের বার্ষিক বেতন প্রায় ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের সমতুল্য হয়। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৬ টাকা। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বেতন বেড়ে বার্ষিক ১ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলারের মতো হয়। এর মান বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৮০ টাকার মতো। তবে ইসার নভোচারীদের এই বেতন সাধারণত জাতীয় আয়কর মুক্ত থাকে।

আরও পড়ুন
নভোচারীরা মহাকাশযানের কমান্ডার বা ক্রু হিসেবে মহাকাশ অভিযানে অংশ নেন। তাঁরা মহাকাশে গিয়ে শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন, এমনটা নয়।
চার জন নভোচারী স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে
নাসা

নাসা ও ইসার নভোচারী হতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। প্রথমত, তাদের সে দেশের নাগরিক হতে হয়। সঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল বা গণিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হয়। এ ছাড়াও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির বিষয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা লাগে। জেট বিমানে পাইলট হিসেবে ১ হাজার ঘণ্টা ওড়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এসব যোগ্যতার পাশাপাশি নভোচারী প্রার্থীদের নাসার কঠোর শারীরিক পরীক্ষায় পাস করতে হয়। প্রার্থীর দৃষ্টিশক্তি থাকতে হবে ২০/২০। এখানেই শেষ নয়। নভোচারী হতে হলে নির্দিষ্ট শারীরিক গঠন, আকার ও আকৃতির হতে হয়। যাতে মহাকাশযান ও স্পেসস্যুটের সঙ্গে মানানসই হয়। তবে ইসার নভোচারী হতে হলে ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে বলতে ও লিখতে পারাটাও জরুরি।

রুশ নভোচারীদের বেতনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায় না। তবে মহাকাশে থাকার সময় তাঁরা বেশি বেতন পান। কিন্তু পৃথিবীতে প্রশিক্ষণের সময় তাঁদের বেতন কম থাকে। বেতন যা-ই হোক না কেন, নভোচারীদের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের কাছে তা কিছুই নয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: স্পেস ক্রু

আরও পড়ুন