পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখিগুলোর কয়েকটি প্রজাতি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের চেয়েও লম্বা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এদের ডানা হতে পারে কিং সাইজ বিছানার চেয়েও চওড়া। পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি আছে। এসব প্রজাতির মধ্যে আছে ছোট মৌমাছির আকারের হামিংবার্ড থেকে বিশালাকার উটপাখি। প্রথম পর্বের পরে আজ আমরা পৃথিবীর আরও বড় ৫টি পাখি সম্পর্কে জানব। এগুলোর মধ্যে আছে সবচেয়ে লম্বা, ভারী এবং চওড়া ডানাওয়ালা পাখি।
১. ডালমেশিয়ান পেলিকান
ডালমেশিয়ান পাখি পেলিকান প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়ন্ত পাখিদের মধ্যে ডালমেশিয়ান পেলিকান অন্যতম। ১১ ফুট লম্বা ডানার এই পাখিগুলো সবচেয়ে উঁচুতে উড়তে পারে। এরা প্রায় ১০ হাজার ফুট ওপরে উড়তে পারে। উচ্চতায় এরা ৫-৬ ফুট লম্বা। দেহের ওজন হতে পারে ৭-১৫ কেজি। এদের ক্ষুধাও অন্যান্য পাখিদের তুলনায় বেশি। প্রতিদিন প্রায় ১ কেজি ৮০০ গ্রাম মাছ খায় একটি ডালমেশিয়ান পাখি। এরা পানিতে ডুব দিয়ে অনেক সময় থাকতে পারে। এই সময়ে মাছ শিকার করে। ডালমেশিয়ান পেলিকানের বৈজ্ঞানিক নাম Pelecanus crispus।
২. শুবিল পাখি
শুবিল আফ্রিকার সবচেয়ে অদ্ভুত এবং লম্বা পাখি। এরা প্রায় ৫ ফুট লম্বা। বেশিরভাগ সময়ে মিঠাপানিতে মাছ এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ শিকার করে সময় কাটায়। শিকার ধরতে এরা সিদ্ধহস্ত। এই শান্ত প্রকৃতির পাখিকে কখনো ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায় না। তবে বসবাসের জন্য জঙ্গলের প্রায় ৩ বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে। এদের ওজন প্রায় ৪-৭ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। পুরুষ শুবিলের ওজন গড়ে ৫.৬ কেজি এবং মহিলা শুবিলের ওজন গড়ে ৪.৯ কেজি। এরা হোয়েলহেড নামেও পরিচিত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Balaeniceps rex।
৩. গ্রেট বাস্টার্ড
গ্রেট বাস্টার্ড ইউরোপের সবচেয়ে বড় পাখি। কিন্তু এই পাখিকে মধ্য এশিয়া, রাশিয়া এবং মরক্কোতে পাওয়া যায়। পুরুষ বাস্টার্ডের ওজন প্রায় ১৪ কেজি। লম্বায় প্রায় ৪ ফুট এই পাখিটিকে খুব সহজেই শিকার করে মানুষ। প্রতি বছর এই পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এই পাখির প্রতি শিকারীরা একটু বেশিই উৎসাহী। তাই গ্রেট বাস্টার্ড এখন বিলুপ্তির হুমকিতে আছে। অনেক দেশে গ্রেট বাস্টার্ড শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। গ্রেট ব্রিটেনে সর্বশেষ এই পাখি মারা হয়েছি ১৮৩২ সালে। বিলুপ্তির হাত থেকে এই পাখিকে বাঁচাতে হলে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Otis tarda।
৪. এম্পেরর পেঙ্গুইন
পৃথিবীতে ১৮ প্রজাতির পেঙ্গুইনের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইন সবচেয়ে বড় এবং ভারী। এরা প্রায় ৪-৬ ফুট লম্বা এবং ওজন প্রায় ৪০-৪৫ কেজি। তবে বছরের বিভিন্ন সময়ে এদের ওজন কম বেশি হয়। এদের সাধারণত অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া যায়। এরা নিজেদের শরীরের চর্বি ব্যবহার করে প্রচণ্ড শীতেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে। অ্যান্টার্টিকায় ঘণ্টায় প্রায় ৬৮ মাইল বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়। এম্পেরর পেঙ্গুইনরা তাদের বাসস্থানের তাপমাত্রা ৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম। এরা পানিতে ডুব দিয়ে প্রায় ১৮ মিনিট থাকতে পারে এবং পানির ১৭৫৫ ফুট গভীরে যেতে পারে। প্রজননের জন্য এরা প্রায় ৫০-১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Aptenodytes forsteri।
৫. অ্যান্ডিয়ান শকুন
ডানার দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাখি অ্যান্ডিয়ান শকুন। এদের ডানা প্রায় সাড়ে দশ ফুট লম্বা। ডানার সাহায্যে এরা আন্দিজের চূড়ার ওপর দিয়ে প্রায় উড়তে পারে। এই পাখি ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় যেতে পারে। এদের ডানায় বিস্তার অনেক বড় হওয়ার কারণে পাখিগুলো স্বাচ্ছন্দে আকাশে উড়তে পারে। অন্যান্য প্রজাতির শকুনের মতো এরাও মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা মুক্ত অবস্থায় প্রায় ৫০ বছর এবং বন্দী অবস্থায় প্রায় ৮০ বছর বাঁচতে পারে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Vultur gryphus।