হ্যাঁ, আসলে, গণিত ব্যবহার করে দেখাতে পারবে জাদু! এ জন্যই এ গণিতের নাম দিয়েছি ‘জাদুর গণিত’
অনেকেই গণিতকে ভয় পায়। শৈশবে আশপাশের অনেকের কথা শুনে হয়তো মাথায় ঢুকে যায়, গণিত কঠিন। তাই গণিতের ভয় সহসা কাটে না। তবে গণিতের মধ্যে আসলে জাদু আছে, আছে দারুণ মজার সব বিষয়। সেই মজাটুকু বুঝতে পারলে গণিতভীতি তো দূর হবেই, তুমি নিজেও চাইলে এ জাদু ব্যবহার করে তাক লাগিয়ে দিতে পারবে বন্ধুদের। এরকম একটা মজার গণিত নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
তোমাদের নিশ্চয়ই অনেক বন্ধু আছে। চাইলে তাদের এ জাদু দেখাতে পারবে। চমকে দিতে পারবে খালাতো-মামাতো ভাইবোনদেরও। হ্যাঁ, আসলে, গণিত ব্যবহার করে দেখাতে পারবে জাদু! এ জন্যই এ গণিতের নাম দিয়েছি ‘জাদুর গণিত’। জাদু করে তোমার বন্ধুর জন্ম-সাল তো বটেই, দিন-মাসও বলে দিতে পারবে। তবে এজন্য তোমার বন্ধুকে কিছু যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করতে হবে। বন্ধুকে বলো একটি ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে। তাহলে দ্রুত জন্মদিন বের করা যাবে।
এখন তোমার বন্ধুকে নিচের কাজগুলো করতে বলো একে একে—
বন্ধুর জন্ম-মাসের সঙ্গে ১৮ যোগ
যোগফলকে ২৫ দিয়ে গুণ
এবার গুণফলকে ৩৩৩ দিয়ে বিয়োগ
বিয়োগফলকে ৮ দিয়ে গুণ
গুণফল থেকে ৫৫৪ বিয়োগ
বিয়োগফলকে ২ দিয়ে ভাগ
ভাগফলের সঙ্গে জন্ম-তারিখ যোগ
যোগফলকে ৫ দিয়ে গুণ
গুণফলের সঙ্গে ৬৯২ যোগ
যোগফলকে ২০ দিয়ে গুণ
জন্ম-সালের শেষের দুটি অঙ্ক যোগ
ব্যস, তোমার কাজ শেষ। এবার বন্ধুদের মনযোগ আকর্ষণের জন্য খানিকটা অভিনয় করতে পারো। জাদুকরেরা যেভাবে ‘ওকাস ফোকাস বোগাস’ নানা মন্ত্র বলে, বলতে পারো সেটাও। এরপর তোমার অভিনয়ের পালা শেষ হলে, ওপরের যোগফল থেকে বন্ধুকে বিয়োগ করতে বলবে ৩২ হাজার ৯৪০। তাহলেই পেয়ে যাবে তোমার বন্ধুদের জন্মদিন। প্রথমে মাস, মাঝে দিন এবং শেষে পাবে জন্ম-সাল।
চলো, এবার একটু মিলিয়ে দেখা যাক। প্রথমে বন্ধুর জন্ম-মাসের সঙ্গে যোগ করতে হবে ১৮। ধরো, তোমার বন্ধুর জন্ম ডিসেম্বর মাসে। মানে ১২তম মাস। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে ১৮। অর্থাৎ, ১২ + ১৮ = ৩০। এরপর যোগফলকে গুণ করতে হবে ২৫ দিয়ে। মানে ৩০ × ২৫ = ৭৫০। এখান থেকে বিয়োগ করতে হবে ৩৩৩। অর্থাৎ, ৭৫০ - ৩৩৩ = ৪১৭। এরপর বিয়োগফলকে গুণ করতে হবে ৮ দিয়ে। তাহলে, ৪১৭ × ৮ = ৩,৩৩৬। এখান থেকে বিয়োগ করতে হবে ৫৫৪। অর্থাৎ, ৩,৩৩৬ - ৫৫৪ = ২,৭৮২। এবার বিয়োগফলকে ২ দিয়ে ভাগ করলে পাব ২,৭৮২ ÷ ২ = ১,৩৯১।
এখন ভাগফলের সঙ্গে যোগ করতে হবে জন্ম-তারিখ। ধরি, তোমার বন্ধুর জন্ম ১৫ তারিখ। সুতরাং যোগফল হবে, ১,৩৯১ + ১৫ = ১,৪০৬। যোগফলকে ৫ দিয়ে গুণ করলে হবে ১,৪০৬ × ৫ = ৭,০৩০। গুণফলের সঙ্গে ৬৯২ যোগ করলে হবে ৭,০৩০ + ৬৯২ = ৭,৭২২। এই যোগফলের সঙ্গে আরও ২০ দিয়ে গুণ করলে হবে ৭,৭২২ × ২০ = ১,৫৪,৪৪০। সবশেষে যে সালে জন্ম, তার শেষ দুটি সংখ্যা যোগ করতে হবে। ধরি, জন্ম ১৯৯৭ সালে। সুতরাং আমাদের যোগ করতে হবে ৯৭। তাহলে, ১,৫৪,৪৪০ + ৯৭ = ১,৫৪,৫৩৭।
এবার নিয়মানুসারে এই সংখ্যা থেকে বিয়োগ করতে হবে ৩২,৯৪০। তাহলে বিয়োগফল হবে ১,৫৪,৫৩৭ - ৩২,৯৪০ = ১,২১,৫৯৭।
আমরা উত্তর পেয়ে গেছি। আগেই বলেছি, প্রথম দুটি সংখ্যা মানে মাস, মাঝের দুটি দিন এবং শেষের দুটি বছরের হিসেব। সাজিয়ে লিখলে হবে ১২,১৫,৯৭। অর্থাৎ জন্ম ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে।
এভাবে বন্ধুদের জন্মদিন বের করে চমকে দিতে পারো। তবে ওপরের পয়েন্টগুলো কিন্তু ভালোভাবে মনে রেখ। কোনটার পরে কী করতে হবে, তাতে যদি গোলমাল পাকিয়ে ফেল, তাহলে আর উত্তর মিলবে না।
আরও অনেকভাবে জন্মদিনের হিসেব বের করা যায়। তা ছাড়া, আরও নানারকম গণিতের জাদুও আছে। তোমাদের ভালো লাগলে এরকম আরও মজার গণিত নিয়ে পরে আবার তোমাদের সামনে হাজির হওয়া যাবে। আজ এখানেই শেষ করা যাক।
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: হাউ টু বি আ ম্যাথ জিনিয়াস