বিজ্ঞান জগতে নতুন কী ঘটল, দেখে নিন একনজরে
প্রতিদিন বিজ্ঞানের জগতে ঘটছে নানা ঘটনা। প্রতিমুহূর্তে এগোচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন গবেষণাপত্র, জানা যাচ্ছে নতুন গবেষণার কথা। কিছু বিষয় এত সুদূর প্রসারী যে এগুলোর প্রভাব বোঝা যাবে আরও অনেক পরে। এরকম নানা বিষয়, নানা ঘটনা দেখে নিন একনজরে, জেনে নিন সংক্ষেপে।
১. বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট গেমস
চীনে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের প্রথম রোবট গেমস। অলিম্পিক ধাঁচের এই প্রতিযোগিতায় ১৬টি দেশের ৫০০টিরও বেশি রোবট অংশ নেয়। দৌড়, ফুটবল ও কিকবক্সিংয়ের মতো খেলায় হিউম্যানয়েড রোবট একে অপরের মুখোমুখি হয়। গত ১৪ আগস্ট চীনের বেইজিংয়ে এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গেমসের শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতা চলে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত।
তবে এই আয়োজন দেখিয়ে দিয়েছে, মানুষের মতো নিখুঁতভাবে চলাফেরা করা রোবটের জন্য কতটা কঠিন। ফুটবল খেলায় রোবটগুলো ঠিকভাবে বল পাস না করে বল নিয়ে শুধু হেঁটে যায়, এলোমেলোভাবে বল ঠেলে দেয় সামনে দিকে। এতে এরা একে অপরের ওপর হোঁচট খেয়ে পড়েও যায়। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এসে টেনে উঠায়। রোবটগুলো মানুষের চেয়েও অনেক ধীরগতিতে চলে। ১৫০০ মিটার দৌড়ে দ্রুততম রোবটটি ৬ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে শেষ করে। এই দূরত্ব যেতে মানুষের লাগবে এর অর্ধেক সময়।
২. সৌরশিখার সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি
বিশ্বের বৃহত্তম সৌর টেলিস্কোপ এখন পর্যন্ত সৌরশিখার সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে। গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ সালে বিজ্ঞানীরা হাওয়াইয়ে অবস্থিত ড্যানিয়েল কে. ইনোয়ে সোলার টেলিস্কোপকে সূর্যের দিকে তাক করে এই ছবিগুলো তোলেন। তাঁরা সূর্যের পৃষ্ঠের একটি শক্তিশালী এক্স-ক্লাস সৌরশিখার শেষ মুহূর্তের ছবি তুলতে পেরেছেন। সেই ছবিতে প্লাজমার এলোমেলো ঢেউগুলো ধরা পড়েছে স্পষ্টভাবে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই ছবিগুলো সৌরশিখার রহস্য বুঝতে এবং ভবিষ্যতে সৌরঝড় সম্পর্কে আরও ভালো পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করবে। কারণ, এ ধরনের এক্স-ক্লাস শিখা হলো সূর্যের সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণ। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিদ কোল টাম্বুরি জানিয়েছেন, ‘এই প্রথম সোলার টেলিস্কোপ কোনো এক্স-ক্লাস শিখা পর্যবেক্ষণ করল। আমরা ভাগ্যবান যে এত নিখুঁত পরিস্থিতিতে এটির ছবি ধারণ করতে পেরেছি।’
৩. গন্ডারের শিংয়ে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ
বিপন্ন প্রজাতির গন্ডারকে চোরাকারবারি ও শিকারিদের হাত থেকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার উইটস ইউনিভার্সিটি। তাঁরা গন্ডারের শিংয়ের ভেতর তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে রাইসোটোপ। এতে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়েশন অ্যান্ড হেলথ ফিজিক্স ইউনিট, পারমাণবিক শক্তি কর্তৃপক্ষ এবং আরও কিছু সংরক্ষণবাদী সংস্থা।
গবেষকদের দাবি, এই তেজস্ক্রিয় আইসোটোপগুলো গন্ডারদের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। কিন্তু এগুলো শিংয়ের মধ্যে থাকায় সারা বিশ্বের কাস্টমস কর্মকর্তারা তাদের কাছে থাকা রেডিয়েশন স্ক্যানার দিয়ে সহজেই তা শনাক্ত করতে পারবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গন্ডার দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু প্রতিবছর সেখানে শত শত গন্ডার চোরাশিকারিদের হাতে মারা যায়। রাইসোটোপ প্রকল্পের খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা প্রায় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর জন্য ছয় বছর ধরে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে গবেষকদের।
৪. জাপানের প্রথম নিজস্ব কোয়ান্টাম কম্পিউটার
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং জগতে এবারে যুক্ত হলো জাপানের নাম। সম্প্রতি দেশটি নিজেদের তৈরি প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেছে। এটি এখন জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কোয়ান্টাম ইনফরমেশন অ্যান্ড কোয়ান্টাম বায়োলজিতে গবেষণার কাজ শুরু করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চলতি বছর ২৮ জুলাই চালু হয়েছে কম্পিউটারের নতুন এই সিস্টেম। এটি সম্পূর্ণভাবে জাপানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। জাপানে তৈরি একটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ‘ওপেন কোয়ান্টাম টুলচেইন ফর অপারেটরস অ্যান্ড ইউজারস বা অক্টোপাস ব্যবহার করে কাজ করে এটি। ১৪-২০ আগস্ট ওসাকায় অনুষ্ঠিত এক্সপো ২০২৫-এ জাপানের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি প্রদর্শন করা হয়।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: জাপানের প্রথম নিজস্ব কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
৫. ইউরেনাসের নতুন চাঁদ আবিষ্কার
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসের কক্ষপথে একটি নতুন চাঁদের সন্ধান পেয়েছেন। অ্যাস্ট্রোনোমার স্কট শেপার্ডের নেতৃত্বে একটি দল চিলির ম্যাজেলান টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই ছোট চাঁদটি আবিষ্কার করেন। আপাতত চাঁদটির নাম দেওয়া হয়েছে S/2023 U1।
নতুন আবিষ্কৃত এই চাঁদটি এতটাই ছোট যে এর ব্যাস মাত্র ৮ কিলোমিটার। ১৯৮৬ সালে ইউরেনাসের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় নাসার ভয়েজার ২ প্রোবের শক্তিশালী ক্যামেরাতেও এটি ধরা পড়েনি। কিন্তু ম্যাজেলান টেলিস্কোপের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে এটি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এই নতুন আবিষ্কারের ফলে ইউরেনাসের মোট পরিচিত চাঁদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯টি।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে দেখুন: ইউরেনাসের নতুন চাঁদ আবিষ্কার, এতদিন ছিল বলয়ের আড়ালে।
৬. তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমান
সম্প্রতি এমন এক বিশাল বিমান তৈরির কাজ চলছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম বিমান হওয়ার পথে। বিশ্বের বৃহত্তম এই বিমান তৈরির প্রকল্পের নাম উইন্ডরানার। বিমানটি কিন্তু এখনো তৈরি হয়নি। এর আগেই বিশ্বের বৃহত্তম বিমান বলা হচ্ছে উইন্ডরানারকে। এটি সম্পূর্ণরূপে অনুমোদন পেলে বিশাল আকারের এবং বিশ্বের বৃহত্তম মালামাল পরিবহনের জন্য ডিজাইন করা বিমানটি পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে দেবে। মজার ব্যাপার হলো, উইন্ডরানার নামের বিশ্বের বৃহত্তম এই বিমানটি এয়ারবাস, বোয়িং বা লকহিডের মতো কোনো পরিচিত কোম্পানি তৈরি করছে না। এমন একটি সংস্থা এটি তৈরি করছে, যারা এর আগে কখনো বিমান তৈরি করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর বোল্ডারে অবস্থিত রেডিয়া নামে কোম্পানি তৈরি করবে উইন্ডরানার। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক লুন্ডস্ট্রম। তিনি একজন উদ্যোক্তা। কোম্পানিটি তাদের ওয়েবসাইটে বিমানের নকশা প্রকাশ করে জানিয়েছে, বিমানটির ডানার দৈর্ঘ্য হবে ৮০ মিটার বা ২৬২ ফুট এবং মূল বিমানের দৈর্ঘ্য হবে ১০৮ মিটার বা ৩৫৪ ফুট।
কিন্তু কেন এত বড় বিমান তৈরি করা হচ্ছে? মূলত আবাসিক এলাকা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত দুর্গম এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরির জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বাতাসচালিত টারবাইন ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই বিশাল টারবাইনগুলোকে দুর্গম স্থানে পৌঁছে দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিমান তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই বিমানের সাহায্যে টারবাইনের বিশাল অংশগুলো সহজে পরিবহন করা সম্ভব হবে।