ইউরেনাসের নতুন চাঁদ আবিষ্কার, এতদিন ছিল বলয়ের আড়ালে
আমাদের সৌরজগৎ একটা বিশাল পরিবারের মতো। সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে বুধ, শুক্র, পৃথিবীসহ আটটি গ্রহ। আর এই গ্রহগুলোরও আছে নিজস্ব কক্ষপথ, নিজেদের চাঁদ। তবে সৌরজগতের সব গ্রহের চাঁদ নেই। যেমন বুধ বা শুক্র গ্রহের চাঁদ নেই। আবার আমাদের মানে পৃথিবীর একটাই উপগ্রহ, নাম চাঁদ। সবচেয়ে বেশি চাঁদ আছে শনি গ্রহের, ২৭৪টি। আর গ্রহদানব বৃহস্পতির আছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৫টি চাঁদ। সৌরজগতের এমন আরেক সদস্য হলো ইউরেনাস। এই গ্রহটি বরফের মতো শীতল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই গ্রহে এক নতুন সদস্যকে খুঁজে পেয়েছেন। অর্থাৎ, ইউরেনাসের আরও একটি চাঁদের খোঁজ পাওয়া গেছে! জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে এই চাঁদ খুঁজে পাওয়া গেছে। নতুন এই চাঁদসহ বর্তমানে ইউরেনাসের চাঁদের সংখ্যা ২৯টি।
ভাবছেন, এতদিন কেন একে খুঁজে পাওয়া যায়নি? কারণ, বেচারা চাঁদটা বড্ড ছোট। এর আকার মাত্র ৬ মাইলের মতো। আর আলো পড়েও খুব কম। তাই আগের কোনো টেলিস্কোপ বা মহাকাশযানের চোখে ওটা ধরা পড়েনি। জেমস ওয়েবের শক্তিশালী ক্যামেরায় যখন ইউরেনাসের ঝকঝকে বলয়ের ছবি তোলা হচ্ছিল, তখনই বলয়ের ঠিক বাইরে এই নতুন অতিথির দেখা মেলে। বিজ্ঞানীরা আপাতত এর নাম দিয়েছেন S/2025 U1।
ইউরেনাসের চারপাশে ১৩টি চিকন কিন্তু খুব স্পষ্ট রিং আছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই বলয়গুলোর মধ্যে ‘শেপার্ড মুন’ লুকিয়ে আছে। শেপার্ড মুন মানে যেসব উপগ্রহ নিজের মহাকর্ষ শক্তি দিয়ে বলয়গুলোকে সুন্দর আর গোছানো রাখে। মানে গ্রহের চারপাশে রিং বা বলয়ের মধ্যে যে অসংখ্য ধুলো ও পাথরের টুকরো থাকে, সেগুলোকে এসব উপগ্রহ নিজেদের মহাকর্ষের টানে আটকে রাখে। কিন্তু নতুন এই চাঁদটা সেরকম কোনো শেপার্ড মুন নয়।
প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এই চাঁদটা কোথা থেকে এল? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর জন্মের গল্পটা বেশ মজার। হতে পারে, লাখ লাখ বছর আগে ইউরেনাসের ভেতরের দিকের কিছু চাঁদ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল। সেই সংঘর্ষে ভেঙেচুরে গিয়েই হয়তো আজকের এই বলয়গুলো তৈরি হয়েছে। এরপর লাখ লাখ বছর ধরে সেই বলয়ের ধুলো আর বরফ আবার একটু একটু করে জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তা থেকেই জন্ম নিয়েছে এই নতুন চাঁদ। সোজা কথায়, এটি একটি রিসাইকেল করা চাঁদ! ভাঙা জিনিস থেকে যেমন নতুন জিনিস তৈরি হয়, এই চাঁদটি তেমনি একটু একটু করে তৈরি হয়েছে।
ইউরেনাসের চাঁদের নাম রাখার বিষয়টিও মজার। ইউরেনাসের অনেক চাঁদের নাম রাখা হয়েছে সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্রের নামে। যেমন ওফেলিয়া ও বিয়াঙ্কা নাম নেওয়া হয়েছে শেক্সপিয়ারের নাটকের চরিত্র থেকে। বিজ্ঞানীরা নতুন চাঁদের জন্যও একটি সুন্দর নাম ভেবে রেখেছেন, কিন্তু সেটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এখন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়নের কাছে পাঠানো হবে। সেই নাম অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত নতুন এই চাঁদের নাম থাকবে এস/২০২৫ ইউ১।
কিন্তু এই চাঁদ আবিষ্কারের গুরুত্ব কতটা? আসলে ইউরেনাস আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে কম জানা গ্রহগুলোর মধ্যে একটি। এর চাঁদ আর বলয় নিয়ে গবেষণা করলে আমরা এই বরফ-শীতল গ্রহটির অতীত সম্পর্কে জানতে পারব।
আরও বড় কথা হলো, আমাদের সৌরজগতের বাইরে অন্যান্য নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে এমন হাজারো গ্রহ আছে। এদের বেশিরভাগই দেখতে ইউরেনাসের মতো। তাই ইউরেনাসকে ভালোভাবে জানতে পারলে সেই দূরের অচেনা জগৎগুলোকেও একটু একটু করে চেনা যাবে।
