বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন খাদ্য। এর চেয়েও বেশি প্রয়োজন শ্বাস-প্রশ্বাসের বিশুদ্ধ বাতাস। কোষের শক্তি যোগাতে কিংবা মস্তিষ্ক সচল রাখতে চাইলে অক্সিজেনের কোনো বিকল্প নেই।
শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগানের কাজটি যেখান থেকে শুরু হয়, সেই জায়গাটি হচ্ছে আমাদের নাক। বাইরের বাতাস টেনে নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় আমাদের এই অঙ্গটি। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া ছাড়াও যেকোনো কিছুর ঘ্রাণ নেওয়ার কাজ করে নাক।
জন্মের পর থেকেই মানুষের নাকে লোম থাকে। খুবই ছোট হওয়ায় সেগুলো আমাদের তেমন একটা চোখে পড়ে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোম বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নাকের লোম শক্ত, বড় এবং ঘন হওয়া শুরু করে। অর্থাৎ দৃশ্যমান হয়। কখনো আবার এই লোম বড় হয়ে নাকের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে। বেশ অস্বস্তিকর লাগে তখন। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, নাকের এই লোম কেন থাকে? এর কাজটাই বা কী?
আমরা যখন শ্বাস নিই, তখন বাতাস থেকে শুধু অক্সিজেন টেনে নিই না। অক্সিজেনের সঙ্গে বাতাসে মিশে থাকে হাজারও ধুলিকণা, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস। দূষিত বায়ুর মাঝে আরও থাকতে থাকতে পারে প্লাস্টিক কণা বা ধাতব কণার মতো ক্ষতিকর পদার্থ। যখন শ্বাস নিই, বাতাসের সঙ্গে এগুলোও ঢুকে পড়ে আমাদের নাকে। আমাদের জন্য ক্ষতিকর এসব জিনিসকে আটকে দিয়ে প্রাথমিকভাবে বাতাস ফিল্টারের কাজটি করে নাকের লোম।
এগুলো ছাড়াও নাকের ভেতরের অংশে আরেক ধরনের খুব ছোট লোম থাকে। এদের বলা হয় সিলিয়া। এগুলো ক্রমাগত সামনে-পেছনে দুলতে থাকে শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে। নাকের সামনের লোমগুলো বাতাসে থাকা অপেক্ষাকৃত বড় কণাগুলো ছেঁকে ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। সিলিয়ার ওপর যাওয়ার সময় বাতাস থেকে এরা অন্যান্য ক্ষতিকারক কণা, ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসকে ধরে মিউকাসে আটকে ফেলে। মিউকাস হচ্ছে চটচটে আঠালো ধরনের অর্ধতরল পদার্থ। মুখের তালু বা গলা পর্যন্ত বিস্তৃত নাসিকা গহ্বরের ভেতরে থাকে এই মিউকাস। শ্বাসনালীর ভেতরেও মিউকাস থাকে। এই অর্ধতরলে আটকে থাকা ক্ষতিকারক নানা পদার্থ পরে কফ আকারে বেরিয়ে আসে।
কয়েক ধাপে বাতাস পরিষ্কার হওয়ার পর তবেই তা ফুসফুসে পৌঁছে। দেখা যাচ্ছে, নাকের লোম কোনো অংশেই ফেলনা নয়। এটা আমাদের প্রাকৃতিক বাতাস পরিশোধক যন্ত্রের কাজ করে। তাই অকারণে নাকের লোম কেটে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, ওয়ান্ডারপোলিস