৭০০ বছর পরে ভবিষ্যতের কোনো এক সময়। তখন মানবজাতি আর বাস করে না পৃথিবীতে। এই গ্রহকে তারা ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। পৃথিবীর চারপাশে আবর্জনার মতো ঘুরছে লাখ লাখ স্যাটেলাইট। আর গ্রহটিতে নামলে চোখে পড়বে বিশাল সব ময়লার স্তূপ। পৃথিবী ধ্বংস করে তারা এখন চলে গেছে দূর কোনো গ্যালাক্সির এক অজানা গ্রহে। একসময় মানুষে মুখরিত এই নীল গ্রহ এখন শুধু নিরব, ধূলোয় ঢাকা পরিত্যক্ত গ্রহ। আর সেই সব ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কারের জন্য কাজ করছে ছোট্ট এক রোবট—ওয়াল.ই (WALL.E)।
ওয়াল.ই আকারে ছোট হলেও বেশ চটপটে। বিরক্তিকর কাজও সে মজার সঙ্গে করে। দেখতে পুরোনো দিনের রোবটের মতো। এর মূল শরীরটি একটি বাক্সের মতো, যার ভেতরে সে আবর্জনা চেপে ছোট ছোট কিউব তৈরি করে। ওয়াল.ইর শরীর পুরাতন, মরিচা ধরা ও হলুদ রঙের। দেখে বোঝা যায়, সে বহু বছর ধরে পৃথিবীর আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কারের কাজ করছে। এবড়োখেবড়ো রাস্তায় চলাফেরার জন্য রয়েছে ট্যাংকের চাকার মতো পা। দুটি হাতে ছোট ছোট তিনটি আঙুলের মতো অংশ আছে। এগুলো দিয়েই সে ময়লা কুড়াই। আর চোখগুলো দেখতে বাইনোকুলারের মতো।
বলছিলাম ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াল.ই মুভির কথা। শুরুটা তো বললাম, কিন্তু এর পরে কী হবে? নতুন গ্রহে গেলে কী হবে ওয়াল.ইর পরিণতি? অত্যাধুনিক রোবটের সেই দুনিয়ায় কী ওয়াল.ই-কে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে?
পৃথিবীতে এত বছর একা থাকতে থাকতে ওয়াল.ই-এর মধ্যে দুটো অদ্ভুত ত্রুটি বা গ্লিচ দেখা দিয়েছে। প্রথমত, ওর মধ্যে একধরনের ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছে—সে এখন অনেক বেশি কৌতূহলী। দ্বিতীয়ত, সে দিন দিন অনেক একা অনুভব করতে শুরু করেছে। এই সব ঝামেলার মধ্যে একদিন চারপাশ কাঁপিয়ে আকাশ থেকে নেমে আসে বিশাল এক স্পেস ক্রাফট। সেটি ছিল বেশ অদ্ভুত ও অত্যাধুনিক। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে ইভ (EVE) নামের একটি উজ্জ্বল সাদা ও ডিম্বাকৃতির অত্যাধুনিক রোবট। এসেই কী যেন খুঁজছে সে। এদিক যাই, সেদিক যাই। কিন্তু পাচ্ছে না, যা খুঁজতে এসেছে।
একনজরে
মুভির নাম: ওয়াল.ই
পরিচালক: অ্যান্ড্রু স্ট্যানটন
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান: পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও
ধরন: অ্যানিমেটেড মুভি
প্রকাশকাল: ২০০৮
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৮.৪
এর মধ্যে ওয়াল.ইর সঙ্গে দেখা হয় ইভের। ওয়াল.ইর যা পছন্দ হয়, তাই সে নিজের কাছে রেখে দেয়। তার বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ইভ যা খুঁজছিল, ঠিক সেটাই পেয়ে যায়। একটি ছোট্ট চারাগাছ। ভিনগ্রহে বসে মানুষ খুঁজছিল, তাদেরই ধ্বংস করা পৃথিবীতে আবার কোনো প্রাণের অস্তিত্ব জন্ম নিয়েছে কি না। এখন ইভের মিশন শেষ। তাকে নিতে ফিরে এসেছে স্পেস ক্রাফট। কিন্তু কিছুতেই ইভের পিছু ছাড়তে চায় না ওয়াল.ই। বাধ্য হয়ে স্পেস ক্রাফটে ঝুলে পড়ে সে। এখান থেকে শুরু হয় মুভিটার মূল গল্প।
বলছিলাম ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াল.ই মুভির কথা। শুরুটা তো বললাম, কিন্তু এর পরে কী হবে? নতুন গ্রহে গেলে কী হবে ওয়াল.ইর পরিণতি? অত্যাধুনিক রোবটের সেই দুনিয়ায় কী ওয়াল.ই-কে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে? কীভাবে সে আবার খুঁজে পাবে ইভকে। কেমন মানুষ দেখবে সেখানে গিয়ে। এতদিন পৃথিবীতে থেকে যাদের ভিডিও দেখত, তেমনি কি হবে তারা? এরকম আরও অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর মিলবে মুভিটিতে।
মজার ব্যাপার হলো, মুভিটির প্রথম ৪০ মিনিটে কোনো সংলাপ নেই। তবু যে কেউ খুব সহজেই ওয়াল.ই-এর দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। মুভিতে থাকা হালকা কমেডি পুরো মুভিকে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে। মুভিটির গল্প সাইলেন্ট রানিং ধরনের, যা আপনাকে ভবিষ্যতের নানা প্রশ্ন, উত্তর ও কী করা দরকার, তার একটা ধরণা দেবে। সব সময়ের মতো পিক্সারের এই অ্যানিমেশন মুভিও মনে প্রশান্তি দেয়, ভালো লাগে দেখতে।
এর মধ্যে ওয়াল.ইর সঙ্গে দেখা হয় ইভের। ওয়াল.ইর যা পছন্দ হয়, তাই সে নিজের কাছে রেখে দেয়। তার বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ইভ যা খুঁজছিল, ঠিক সেটাই পেয়ে যায়। একটি ছোট্ট চারাগাছ।
মুভিটি পরিচালনা করেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক অ্যান্ড্রু স্ট্যানটন। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত মুভির মধ্যে রয়েছে এ বাগস লাইফ (১৯৯৮), ফাইন্ডিং নিমো (২০০৩), ফাইন্ডিং ডোরি (২০১৬) ইত্যাদি। মুভিটার লেখক অ্যান্ড্রু স্ট্যানটন নিজেই। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন পিট ডক্টর ও জিম রিয়ার্ডন। মুভিটির দৈর্ঘ্য ১ ঘন্টা ৩৮ মিনিট। আইএমডিবি রেটিং: ৮.৪। সেরা অ্যানিমেটেড ফিচারের জন্য ওয়াল.ই ১টি অস্কার পেয়েছে, সঙ্গে আরও পাঁচটি অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিল। সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্মের জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতেছে মুভিটি।