একসময় মনে করা হতো, চোখের নিজস্ব ক্ষমতাবলে আমরা কোনো কিছু দেখি। পরে খ্রিস্টীয় দশম শতকের দিকে মুসলিম বিজ্ঞানী আবু আলি হাসান ইবনুল হাসান ইবনুল হায়সাম এ ধারণা সমূলে বদলে দেন
আলো ছাড়া জগৎ অন্ধকার। কিছুই দেখার উপায় নেই। একসময় মনে করা হতো, চোখের নিজস্ব ক্ষমতাবলে আমরা কোনো কিছু দেখি। পরে খ্রিস্টীয় দশম শতকের দিকে মুসলিম বিজ্ঞানী আবু আলি হাসান ইবনুল হাসান ইবনুল হায়সাম এ ধারণা সমূলে বদলে দেন। ইউরোপের কাছে তিনি আল হাজেন নামে পরিচিত। প্রথমবারের মতো তিনি বলেন, কোনো বস্তুর ওপরে আলো পড়ে সেটা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এলে তবেই ওটাকে দেখা যায়। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি। রীতিমতো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করে দেখান।
আলোকে দেখা যায় না, কিন্তু আলোর সাহায্যে অন্য বস্তু দেখতে হয়। বিষয়টা বেশ অদ্ভুত। আরও মজার ব্যাপার হলো, আলোকে দেখা না গেলেও এর সূত্র ধরে একেবারে উৎস সম্পর্কে জানা খুবই সম্ভব।
যেমন টর্চলাইট জ্বালালে দেখবেন, আলো অনেকটা ত্রিকোণ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। যত দূরে পৌঁছাবে, তত দূর থেকেই এই টর্চলাইটের কাছে ফিরে আসা যাবে। অর্থাৎ, বের করা যাবে, আলোটা এ টর্চলাইট থেকেই এসেছে। এভাবেই আলোর সূত্র ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সহস্র কোটি কিলোমিটার দূরের মহাকাশে উঁকি দেন। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেগও এই আলোর। তারপরও আলো কেন এর উৎসের চিহ্ন রেখে যায়?
এর কারণ, আলো একধরনের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের সব নীতিই মেনে চলে। সাধারণত বৈদ্যুতিক চার্জের নড়াচড়ার ফলে আলো উৎপন্ন হয়। এখানে ‘আলো উৎপন্ন হওয়া’ মানে, চার্জটির শক্তি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গে রূপান্তরিত হওয়া। উৎপন্ন হওয়া বা কোনো উৎস থেকে নির্গত হওয়ার পর আলো (পড়ুন, বিদ্যু চৌম্বকীয় তরঙ্গ) সবসময় চলতে থাকে। এই চলতে থাকা বাধ্যতামূলক, কারণ, আলোর কণার স্থিরভর শূন্য। তাই এটিকে সবসময় চলা বা ছোটার ওপরেই থাকতে হয়। আর, আলোর এ চিরকুটেই লেখা থাকে এর নানা বৈশিষ্ট্য, উৎসের ধরনসহ অন্যান্য অনেক তথ্য। যেহেতু এটি চলতেই থাকে, তাই তথ্যগুলো ওতে থেকে যায়। বদলে যায় না বা হারিয়ে যায় না। কৃষ্ণগহ্বরের খপ্পরে গিয়ে পড়লে অবশ্য ভিন্ন কথা!
যা হোক, এ জন্যই আলোকে অনুসরণ করে এর উৎসে পৌঁছানো সম্ভব। সম্ভব এ উৎসের বৈশিষ্ট্যগুলো জানা।
বিজ্ঞানীরা জানেন, আলো চলাচলের সময় সর্বনিম্ন পথ অনুসরণ করে। চলার পথে বেঁকে গেলে সেটার ছাপও থাকে এর তরঙ্গের মধ্যে, আলোর চিরকুটে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য, কম্পাংক ও ডপলার ইফেক্ট মেপে তাই আলোর চলার পথ ও উৎসের তথ্য সহজেই বের করতে পারেন বিজ্ঞানীরা। জানতে পারেন প্রয়োজনীয় সবকিছু।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস