আলো কীভাবে বোঝে সবচেয়ে ছোট পথ কোনটা
স্কুলে পাঠ্যবইতে আমরা পড়ি, আলো সব সময় সরল পথে চলে। আসলে কথাটা হলো, আলো সব সময় সংক্ষিপ্ততম, অর্থাৎ সবচেয়ে ছোট পথে চলে। কিন্তু আলোর তো মানুষের মতো বুদ্ধি নাই। তাহলে এটি কীভাবে বোঝে কোনটা সবচেয়ে ছোট পথ? এ যেন এক অদ্ভুত হেঁয়ালি। অবশেষে এর উত্তর মিলেছে বিশ শতকের অন্যতম বিখ্যাত এক নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর হাতে। কী সেই উত্তর?
আলো সব সময় ‘সরল’ পথে চলে। আরেকটু সঠিকভাবে বলা যায়, আলো সব সময় সংক্ষিপ্ততম পথে চলে। পথ যদি হয় বাঁকা, তখন আলো বাধ্য হয়ে বাঁকা পথ ধরে৷ যেমন সূর্য বা বিশাল ভারী নক্ষত্র তার আশপাশের স্থান-কাল বাঁকিয়ে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আলো বাঁকা পথ ধরে (ছবি ২)। এ ব্যাপারটা বুঝতে আসলে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। কিন্তু যত যা-ই হোক, মজার ব্যাপার হলো, আলো চলার জন্য সবচেয়ে ছোট পথটাই বেছে নেয়। যেটাকে আগেই বলেছি, সংক্ষিপ্ততম পথ। আরেকটু ব্যাখ্যা করি। এক জায়গা থেকে আলো যখন আরেক জায়গায় যায়, তখন হয়তো সেখানে অনেক বিকল্প পথ থাকে। কিন্তু পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, আলো সবচেয়ে ছোট ও দ্রুততম, অর্থাৎ ছোট পথটিই বেছে নেয়।
প্রশ্ন হলো, আলো কীভাবে বোঝে কোন পথটা সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত? স্কুলে বা পাঠ্যবইতে আলো নিয়ে পড়ার সময় এই প্রশ্নটা হয়তো সবাইকেই ভাবায়। প্রশ্নটা ভাবিয়েছিল কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আরউইন শ্রোডিঙ্গারকেও। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রথম স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলেন বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদ, নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান। তিনি বলেছিলেন, ‘এত ছোট কণা কীভাবে জানে কোন রাস্তাটা সংক্ষিপ্ত?
একজন ডাকসাইটে কোয়ান্টাম পদার্থবিদেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ এ প্রশ্নে খেই হারাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আশার কথা হলো, পদার্থবিজ্ঞানীরা কখনো হাল ছাড়েন না। তাঁরা প্রতিটি যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন, তা যত উদ্ভটই মনে হোক প্রশ্নটাকে। তাই এই প্রশ্নের সমাধানও এক সময় পাওয়া যায়। কার হাত ধরে, কীভাবে—সেগুলো একে একে বলব। তার আগে আমরা প্রশ্নটাকে একটু বাস্তব জ্ঞান দিয়ে যাচাই করে দেখি।
পদার্থবিজ্ঞানে ফার্মা’স প্রিন্সিপাল নামে একটা নীতি আছে। এই নীতিতেই আছে আলোর সংক্ষিপ্ত পথ ধরে চলার কথা। ১৬৬২ সালে ফরাসী গণিতবিদ পিয়েরে দ্যা ফার্মা এই নীতি প্রস্তাব করেন।
শুধু কণা কেন, মানুষও চলার পথে সবচেয়ে ছোট পথটিই বেছে নেয়। আর এর ভুক্তভোগী হন অন্যরা। গ্রামের মাঠে গেলেই এই কথার সত্যতা পাবেন। ফসল খেতের ভেতর দিয়ে প্রায়ই কোনাকুনি পায়ে চলার পথ দেখা যায়। এতে ক্ষতি হয় ফসলের। কোনাকুনি পথ তৈরি করতে গিয়ে খেতের ফসল মাড়াতে হয়। পথ বরাবর ফসল নষ্ট হয়। অথচ আইলের ওপর দিয়ে পথ করে নিলে ফসলের ক্ষতি হয় না। তবু মানুষ ২০-৩০ ফুট রাস্তা বাঁচাতে কয়েক মন ফসলের ক্ষতি করেন। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত পথ বেছে নেওয়ার ব্যাপারটা আমাদের মজ্জাগত। তাই যতই নিষেধ করুন, মানুষ ওই সংক্ষিপ্ত পথ ধরেই চলবে।
মানুষের না হয় বুদ্ধি আছে, তাই সহজেই বুঝতে পারে কোনটা সংক্ষিপ্ত আর কোনটা দীর্ঘ পথ। কিন্তু আলোর কণা ফোটন এই বুদ্ধি কোথায় পায়? আপনি হয়তো প্রশ্ন করবেন—আলোর জন্য সংক্ষিপ্ত পথ ছাড়াও আরও কিছু বিকল্প পথ আছে, সেটা আপনি কীভাবে জানলেন?
এটাও আসলে খুব কঠিন কিছু নয়। ধরা, যাক শূন্য মাধ্যমে A থেকে B-তে যাবে একটা আলোর কণা (ছবি ১)। A থেকে B পর্যন্ত আপনি একটি সরলরেখা পাবেন। কিন্তু আপনি চাইলে অনেক বক্ররেখাও আঁকতে পারেন। এর সংখ্যা অসংখ্য। আপনি চাইলে বিভিন্ন কোণ তৈরি করে A থেকে B যেতে পারেন। অসংখ্য পথ দিয়ে। আপতত অসংখ্য পথ বাদ দিয়ে, ধরে নিলাম মোট দশটি পথ আছে। এই দশটির প্রতিটা ব্যবহার করেই আলো A থেকে B-তে যেতে পারে। কিন্তু আপনি যদি পরীক্ষা করেন, তাহলে দেখবেন, শুধু সরলরেখা বরাবরই আলো যাচ্ছে, আর কোনো পথে নয়। কারণ সরলরেখা বরাবর পথটাই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত। এ প্রশ্নটা নিয়েই আমরা কথা বলছি। অর্থাৎ, কথা হলো, এ পথটা আলো বেছে নেয় কীভাবে?
এটা পদার্থবিজ্ঞানের বড় একটা ধাঁধা ছিল। ‘ছিল’’ বলছি কারণ, এই ধাঁধার সমাধান বিজ্ঞানীরা বহু আগে করে ফেলেছেন।
২.
পদার্থবিজ্ঞানে ফার্মা’স প্রিন্সিপাল নামে একটা নীতি আছে। এই নীতিতেই আছে আলোর সংক্ষিপ্ত পথ ধরে চলার কথা। ১৬৬২ সালে ফরাসী গণিতবিদ পিয়েরে দ্যা ফার্মা এই নীতি প্রস্তাব করেন। ফার্মা কিন্তু বলেননি আলো সব সময় সোজা বা সরলরৈখিক পথে চলবে। তিনি বলেছেন, আলো এমন পথ বেছে নেবে, যেটা সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ও সবচেয়ে কম সময়ে পার হওয়া যায়। অর্থাৎ, আলো যদি এমন পথ পায়, যেটা সোজা নয়, বক্র কিন্তু সংক্ষিপ্ততম—তখন সোজাপথ ছেড়ে সেই সংক্ষিপ্ত পথই বেছে নেবে। যেমন ধরা যাক, কোনো আলোকরশ্মি বায়ু থেকে কাচের মধ্য দিয়ে যাবে। তখন আর আর সেই আলো সোজা পথে যেতে পারে না। কাচের ঘনত্ব অনুযায়ী আগের পথের চেয়ে কিছুটা বেঁকে গিয়ে বেশ খানিকটা কোণ উৎপন্ন করে বাঁকা পথে চলে। তবে এই বাঁকা মানে কিন্তু এলোমেলোভাবে বাঁকা নয়। বরং আলো নির্দিষ্ট কোণে বাঁকার পর নতুন দিকেও একবারে সরলরেখা বরাবরই চলবে।
ফোটন ‘সম্ভাব্য সব পথে’ ভ্রমণ করে; প্রতিটি পথের দশা সময়ের সঙ্গে ভিন্ন হয়। আর ফেজ কনস্ট্রাকটিভ ইন্টারফিয়ারেন্স বা সমদশায় গঠনমূলক ব্যতিচারের ফলে পরিশেষে আমরা শুধু সংক্ষিপ্ততম পথটিই দেখি।
ফার্মার এই নীতি পরীক্ষায় প্রমাণিত। আজ এই কোয়ান্টাম মেকানিকসের যুগে এসেও এই নীতির ব্যতয় ঘটেনি। তাহলে প্রশ্ন হলো, আলো কেন সংক্ষিপ্ত বা সোজা পথে চলে? এর ব্যাখ্যা কী?
এর ব্যাখ্যা আসলে চিরায়ত আলোকবিজ্ঞানের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যাখ্যাটি এসেছে অনেক পরে, ১৯৪০-এর দশকে, বিখ্যাত মার্কিন কোয়ান্টাম তত্ত্ববিদ রিচার্ড ফাইনম্যানের হাত ধরে। হ্যাঁ, শুরুতে তাঁর কথাই আমরা বলেছি। তিনি কোয়ান্টাম কণাদের চলার জন্য একটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছিলেন—পাথ ইন্ট্রিগাল থিওরি। আলো আসলে একধরনের কণা, তার নাম ফোটন। তাই পাথ ইন্ট্রিগাল তত্ত্ব ফোটনও মেনে চলতে বাধ্য।
পাথ ইন্ট্রিগাল তত্ত্ব অনুযায়ী, আলো একই সঙ্গে সম্ভাব্য সবগুলো পথে যায়। কিন্তু শেষমেষ সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথটাই বাস্তব হয়ে দেখা দেখা দেয়, বাকিগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। আরেকটু বৈজ্ঞানিকভাবে বললে, ফোটন ‘সম্ভাব্য সব পথে’ ভ্রমণ করে; প্রতিটি পথের দশা সময়ের সঙ্গে ভিন্ন হয়। আর ফেজ কনস্ট্রাকটিভ ইন্টারফিয়ারেন্স বা সমদশায় গঠনমূলক ব্যতিচারের ফলে পরিশেষে আমরা শুধু সংক্ষিপ্ততম পথটিই দেখি।
ব্যাপারটার একটা বাস্তব উদহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক, আপনি একটা গভীর বনে গিয়েছেন। একটা সরু গলিপথ পড়ল সামনে। আপনি হেঁটে সেই পথ পার হলেন। কিন্তু এক জায়গায় গিয়ে পথ শেষ। পথের মাথায় একটা বিশাল লেক। ডুবন্ত পানি। তার পাশেই একটা পাহাড়। পাহাড়ের ওপর দিয়ে একটা ট্রেইল দেখা যাচ্ছে। এই পাহাড় ও লেকের ওপারে আরেকটা সরু গলিপথ পাবেন। সেই পথের শেষে আপনার জন্য একটা অস্থায়ী ক্যাম্প আছে। আগামী তিন মাস সেখানেই থাকতে হবে আপনাকে।
সম্ভব, কারণ এখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব কাজ করে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে ফোটন শুধু কণা নয়, একই সঙ্গে তরঙ্গ। অর্থাৎ ফোটনের মতো কণারা একই সঙ্গে কণা-তরঙ্গের সুপারপজিশন বা উপরিপাতিত অবস্থায় থাকে।
ধরা যাক, আপনার ক্যাম্প যেখানে, সেখানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই বাজার-সদাই করার জন্য প্রতিদিন আপনাকে পাহাড় অথবা লেক ডিঙিয়ে এপারে আসতে হবে। প্রথমদিন আপনার মনে হলো লেক সাঁতরে ওপারে যাওয়ার চেয়ে পাহাড়ের ট্রেইল ধরে যাওয়া অনেক সুবিধার। রাস্তা বেশি হলেও সময় কম লাগে। আপনি সেই পথেই গেলেন। কিন্তু পরদিন যখন বাজার করতে আসছেন, তখন দেখলেন, লেকে বেশ কিছু নৌকা আছে। ভাড়া দিলেই মাঝি পার করে দেবে আপনাকে। সুতরাং আপনি সেদিন নৌকায় পার হলেন। দেখলেন, পাহাড়ে চড়ার চেয়ে নৌকায় পার হলে সময় অনেক কম লাগে। পরদিন থেকে আপনি নৌকায় চড়ে পার হতে লাগলেন নিয়মিত। অর্থাৎ আপনি জেনে গিয়েছেন, নৌকায় পার হলেই সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে আপনি রাস্তাটা পেরোতে পারছেন। তাই এটাই আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত—পাহাড়ে ঘুরপথে পার হওয়ার চেয়ে এই পথটাই আপনার জন্য সহজ ও বাস্তব পথ হয়ে উঠল।
ফাইনম্যানের মতে, আলোর কণারাও এভাবে সহজ পথ ধরে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। মানুষের বুদ্ধি আছে, ফোটনের তো তা নেই। আসলে আপনি বুদ্ধি খাটিয়ে নৌকায় চড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই বিকল্প পথটা যাচাই করেছিলেন, অর্থাৎ পাহাড় টপকে পার হয়ে দেখেছিলেন। তারপর যখন নিশ্চিত হয়েছেন, নৌকায় পার হওয়াই শ্রেয়, তখন থেকেই এটা নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন। তেমনি ফাইনম্যানের মতে, কণারা চলার পথে যতগুলো বিকল্প পথ থাকে, সবগুলো পথেই একসঙ্গে যেতে পারে। আপনার আর কণাদের মধ্যে পার্থক্য হলো, আপনি একই সময়ে সবগুলো পথে যেতে পারে না, কণারা সেটা পারে। কণাদের জন্য এই পথগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ যেটা, সেটাই আমরা ভৌত জগতে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। বাকিগুলোর অস্তিত্ব আমরা জানতে পারি না। ফাইনম্যানের মতে, বাকি পথগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এখানে ফোটনের বুদ্ধিমত্তার কোনো ব্যাপার জড়িত নেই। বরং আমাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাই ফোটনকে সংক্ষিপ্ত পথে চলতে বাধ্য করে।
৩.
এক সঙ্গে সবগুলো পথে যাওয়া কীভাবে সম্ভব?
সম্ভব, কারণ এখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব কাজ করে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে ফোটন শুধু কণা নয়, একই সঙ্গে তরঙ্গ। অর্থাৎ ফোটনের মতো কণারা একই সঙ্গে কণা-তরঙ্গের সুপারপজিশন বা উপরিপাতিত অবস্থায় থাকে। তেমনি এদের যতরকম আচরণ আছে, সবগুলোই সুপারপজিশনে থোকে। একটা কণা যেকোনো স্থানের যতটুকু জায়গাজুড়ে থাকে, তার সব বিন্দুতেই একই সঙ্গে থাকে মেঘের মতো করে। এটাও একধরনের সুপারপজিশন বা উপরিপাতন। আর এই ধর্ম নির্ধারিত হয় শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ ফাংশন থেকে। এর আরেকটা অদ্ভুত দিক আছে। আপনি যখন কোনো কণার কোনো একটা চরিত্র বা ধর্মকে পর্যবেক্ষণ করতে যাবেন, সেই অনুযায়ী আপনাকে যন্ত্রপাতি সাজাতে হবে। ধরা যাক, কোনো একটা বিন্দুতে ফোটন কণাকে আপনি কণা হিসেবে দেখতে চান, তখন ওই বিন্দুতেই ওটা কণা হিসেবে ধরা দেবে। তখন তরঙ্গ ফাংশন ভেঙে পড়বে, ভেঙে পড়বে সুপারপজিশনও। তাই বাকি সব বিন্দুতে কণাটির অস্তিত্ব থাকবে না। আপনি যেখানে ওটাকে দেখতে চাচ্ছেন, সেখানেই তাকে দেখতে পাবেন। তেমনি কণার কণা ধর্ম নির্দিষ্ট হয়ে যাবে এবং তরঙ্গ ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার এর উল্টোটা দেখতে চাইলে সেটাও দেখতে পারবেন।
একটা লেজার লাইট ছুড়লেন একটা পানি ভর্তি অ্যাক্যুরিয়ামে। প্রথমে আলোটা সোজা পথে গিয়ে অ্যাক্যুরিয়ামের কাচে গিয়ে পড়ে। এ সময় একটা নির্দিষ্ট কোণে আলো বেঁকে যাবে।
কণারা সুপারপজিশনে থাকে বলে, এরা একই সঙ্গে বিভিন্ন পথে একই সঙ্গে চলাচল করতে পারে। আমরা যখন এই ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করি, তখন শুধু সংক্ষিপ্ত পথটাই দেখতে পাই। বাকি পথগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
এখন, মাধ্যম যদি একটাই হয়—ধরা যাক, বায়ু মাধ্যম। তাহলে ফোটন সোজা পথেই চলবে। কারণ তখন সোজা পথটাই তার জন্য সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ এবং সেটা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পাড়ি দিতে পারবে। অন্যদিকে হঠাৎ যদি সেই পথে অন্য কোনো মাধ্যম সামনে চলে আসে, তখন নতুন এই মাধ্যমে আলো একটা নির্দিষ্ট কোণে বেঁকে যাবে।
ধরা যাক, একটা লেজার লাইট ছুড়লেন একটা পানি ভর্তি অ্যাক্যুরিয়ামে। প্রথমে আলোটা সোজা পথে গিয়ে অ্যাক্যুরিয়ামের কাচে গিয়ে পড়ে। এ সময় একটা নির্দিষ্ট কোণে আলো বেঁকে যাবে। তারপর আবার কাচ থেকে যখন পানির ভেতরে আলো যাবে, তখন আরেকবার বেঁকে যাবে। একসময় পানি পেরিয়ে আলো গিয়ে পড়বে অ্যাক্যুরিয়ামের অন্যপাশের কাচের দেয়ালে। তখন আবার আলোর গতিপথ বেঁকে যাবে। কাচ পার হয়ে আবার বাতাসে প্রবেশ করবে আলো। তখন আরেকবার বাঁকবে পথ।
এখন আবার ফিরে যান আপনার সেই জঙ্গলের গলিপথে। কয়েকদিন নৌকা দিয়ে পারাপারের পর একদিন দেখলেন লেকের নৌকার মাঝিদের কেউ আসেনি। তখন আপনি কী করবেন। এ ব্যাপারটাও আপনার জানা আছে। আপনি সেদিন পাহাড় ডিঙিয়ে রাস্তা পার হবেন। পরদিন আবার যদি মাঝিরা ফিরে আসে, আবার লেক পার হয়ে যাতায়াত করবেন।
কণারা সুপারপজিশনে থাকে বলে, এরা একই সঙ্গে বিভিন্ন পথে একই সঙ্গে চলাচল করতে পারে। আমরা যখন এই ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করি, তখন শুধু সংক্ষিপ্ত পথটাই দেখতে পাই।
ধরা যাক, আলোর চলাচলের পথেও আপনি এভাবে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেছেন। ধরা যাক, অ্যাকুরিয়ামের পেছন দিকের দেয়ালে সিলভারের ফয়েল লাগিয়ে দিয়েছেন। তখন কিন্তু আলো অ্যাক্যুরিয়ামের প্রথম দেয়াল এবং পানি পার হবে ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয় দেয়াল পার হতে পারবে না। সেখান থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে পানির ভেতর দিয়ে ডানে-বাঁয়ে-ওপরে-নিচে কিংবা সোজাসুজি বিপরীত দিকে ফিরে আসতে পারে। সেটা নির্ভর করবে আপনি লেজার আলোটা অ্যাক্যুরিয়ামের দিকে সোজাসুজি তাক করছেন, না তীর্যকভাবে, কত ডিগ্রি কোণে তাক করেছেন, এসবের ওপর।
এ ক্ষেত্রে আলো আসলে সবগুলো সম্ভাব্য পথে একই সঙ্গে যাবে। শেষমেষ শুধু সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথেই আমরা আলোটাকে যেতে দেখব। শুধু আলো নয়, ইলেকট্রন বা অন্যান্য খুদে কণারাও এভাবে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথে চলাচল করে।