টু লেট!
৩০০০ সাল। পৃথিবীতে তখন ৩০০০ সাল চলছে। মানুষ গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছে। চাঁদে তো যাচ্ছেই না। কারণ, চাঁদ তখন সৌরজগতের গার্বেজ জোন। পৃথিবীর সব ময়লা চাঁদের গর্তে ফেলে আসা হয়। ময়লা ফেলার জন্য আলাদা গার্বেজ ক্যারিয়ার রকেটই আছে। মানুষ এখন ছুটছে মঙ্গল, শনি—এসব গ্রহের দিকে। ভালো কথা, শনি গ্রহ তখন আর হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের পিণ্ড হিসেবে নেই। শক্ত শিলামাটির গ্রহ হয়ে গেছে।
তবে মানুষের যেন শনি গ্রহের দিকেই আগ্রহটা বেশি। যারা পয়সাওয়ালা, তারা অবশ্য ইলন মাস্কের নাতির কাছ থেকে রকেট ভাড়া করে বা কিনে সোজা এক্সোপ্ল্যানেটের দিকে চলে যায়। আর সাধারণেরা সাধারণত শনি আর মঙ্গলের দিকেই ছোটে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ যেন শনি গ্রহের দিকেই। কারণ, শনির নিজ অক্ষের ওপর ঘূর্ণনের গতি ৩৫ হাজার মাইল আর পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর ঘূর্ণনের গতি ১ হাজার মাইল। তার মানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? পৃথিবীতে যে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ১২ ঘণ্টা কাটাতে হয়, সেখানে শনি গ্রহের স্কুলে মাত্র ২০ মিনিট! এ সুযোগ কে ছাড়ে? তবে শিগগিরই শনি গ্রহে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের মুখ চুন হয়ে গেল!
কেন? কেন?
একদিন ওদের স্যার এসে ছাত্রদের বললেন:
—তোমাদের জন্য একটা গুড নিউজ আর একটা ব্যাড নিউজ আছে, কোনটা আগে শুনতে চাও?
—স্যার, গুড নিউজটা আগে শুনতে চাই। সবাই
একসঙ্গে চেঁচাল।
—বেশ বলছি...এখানে তোমাদের স্কুল টাইম মাত্র ২০ মিনিট (শনি গ্রহের আহ্নিক গতির সাপেক্ষে)।
—স্যার, এটা তো জানি। এটা জেনেই আমরা শনি গ্রহের স্কুলে পড়তে এসেছি। ব্যাড নিউজটা বলেন, স্যার।
আসলে তখন বাড়িওয়ালারা সব তাদের বাড়িঘর হাফ ভাড়ায় এলিয়েনদের কাছে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে কোনো রকম অ্যাডভান্স ছাড়াই। ও হ্যাঁ, এটা তো বলাই হয়নি। তখন কিন্তু এলিয়েনদের সঙ্গে পৃথিবীর মানুষদের দিব্যি যোগাযোগ হয়ে গেছে।
—ব্যাড নিউজটা হচ্ছে, সামনে তোমাদের আম-কাঁঠালের ছুটি...।
—স্যার এটা ব্যাড নিউজ কোথায়? এটা তো গুড নিউজ। পৃথিবীতে বেড়াতে যেতে পারব।
—আরে, আমাকে শেষ করতে দাও।
—বলেন, স্যার।
—আম-কাঁঠালের ছুটি কিন্তু মাত্র দুই দিন। (শনি গ্রহের আহ্নিক গতির সাপেক্ষে)।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা হাহাকারের মতো শব্দ শোনা গেল যেন।
এ তো গেল একাডেমিক ব্যাপার। আর যারা দুর্নীতি করত, তারা? দুর্নীতি কিন্তু এই ৩০০০ সালেও দিব্যি অব্যাহত আছে। তবে একটু অন্য অ্যাঙ্গেলে। যেমন বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিবাজেরা বড় বড় কার্গো রকেট ভাড়া করে আশপাশের ‘ডায়মন্ড প্ল্যানেটগুলোয়’ গিয়ে লুটপাট শুরু করে দিয়েছে। টন টন হিরে নিয়ে কার্গো রকেটে করে পুরাই লাপাত্তা লেডিস!
তাহলে পৃথিবীর বাড়িঘর, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট, ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট—এসবের কী অবস্থা তখন?
আসলে তখন বাড়িওয়ালারা সব তাদের বাড়িঘর হাফ ভাড়ায় এলিয়েনদের কাছে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে কোনো রকম অ্যাডভান্স ছাড়াই। ও হ্যাঁ, এটা তো বলাই হয়নি। তখন কিন্তু এলিয়েনদের সঙ্গে পৃথিবীর মানুষদের দিব্যি যোগাযোগ হয়ে গেছে। তারা নিয়মিত আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। ওই যে সেই বাক্যটা—‘সৎ রাজনীতিবিদ ও এলিয়েন পৃথিবীতে দেখা যায়নি কখনো’। বলাই বাহুল্য, বাক্যটি এই ৩০০০ সালে এসে পুরাই মিথ্যা প্রমাণিত। সৎ রাজনীতিবিদেরা এলিয়েনদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৃথিবীতে দিব্যি দিন কাটাচ্ছে। দেশপ্রেম, কিংবা পৃথিবীপ্রেমের কারণে তারা এখনো পৃথিবীতেই আছে; যদিও তাদের এখন আর কিছু করার নেই। ইট ইজ...টু লেট!
