সময়ের ফাঁদ

ওয়াশিং মেশিনের মতো ওটা কী? আরে, এ তো আমার বানানো টাইম মেশিন!ছবি: মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম দুবাই শহরে। আশপাশে বিশাল সব আকাশচুম্বী দালান সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর আমি দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার মাঝখানে!

একি! আমাকে ফাঁসিকাষ্ঠে তোলা হচ্ছে কেন? আমি কী দোষ করেছি? আর আমি এখানে এলামই–বা কী করে? আমি তো ঢাকার মিরপুরে নিজের বিছানায় আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম। গতকাল রাতে প্রজেক্টের বাকি কাজ শেষ করে ঠিক ২টা ১৫ মিনিটে বিছানায় গিয়েছিলাম। তারপর... তারপর...

আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? পরীক্ষা করার জন্য ডান পা দিয়ে বাঁ পায়ের গোড়ালিতে জোরে লাথি দিলাম। ওরে বাবা! গোড়ালি বোধ হয় ভেঙে গেল! হাড়গোড় গুঁড়িয়ে গেলেও আমার কোনো দুঃখ থাকত না, কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন তো ভাঙছে না! মনে হচ্ছে এটাই বাস্তব। ওদিকে বড় পর্দায় আমার মৃত্যুর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে—১০, ৯, ৮, ...। এখন কী করি?

হঠাৎ চোখ গেল সামনে। ফাঁসির মঞ্চের ঠিক উল্টো দিকে ওয়াশিং মেশিনের মতো ওটা কী? আরে, এ তো আমার বানানো টাইম মেশিন! এটা যে সত্যি সত্যি কাজ করবে, তা কে জানত! কিন্তু আমি তো মেশিন চালু করিনি। এটা চালু হলো কী করে? এখন হাসব নাকি কাঁদব, বুঝতে পারছি না। আমার এক্সপেরিমেন্ট অজান্তেই সফল হয়ে গেল, আর ওদিকে আমি এখন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে ঝুলছি!

কিন্তু আমি অতীতে এলাম নাকি ভবিষ্যতে, কিছুই বুঝতে পারছি না। যে গোলকধাঁধায় আটকে পড়েছি, তাতে সাল-তারিখ জেনেও অবশ্য কোনো লাভ নেই। কাউন্টডাউন প্রায় শেষের পথে—৭, ৬, ৫,...। ভয়ে-আতঙ্কে আমার অবস্থা কাহিল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ৪, ৩, ২... ঠিক তখনই কপাল বেয়ে এক ফোঁটা ঘাম টাইম মেশিনের ডিসপ্লের ওপর পড়ল। জল্লাদ এখনই দড়ি ধরে টান দেবে। ১, ০... নাআআআ...

আরও পড়ুন
হঠাৎ চোখ গেল সামনে। ফাঁসির মঞ্চের ঠিক উল্টো দিকে ওয়াশিং মেশিনের মতো ওটা কী? আরে, এ তো আমার বানানো টাইম মেশিন! এটা যে সত্যি সত্যি কাজ করবে, তা কে জানত!

ধড়মড় করে উঠে বসলাম। নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের বেডরুমে। ঘড়িতে বাজে ২টা ১৩ মিনিট। এখনো ২টা ১৫ বাজেনি! ধুর, সব দুঃস্বপ্ন! বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেলাম। আমার বানানো টাইম মেশিনটার সামনে গেলাম। ধুর ছাই, এটা জাস্ট একটা মডেল। মেশিন যে চলবে, তার জ্বালানি কোথায়? এটা তো আর কোনো মুভি না যে নতুন কোনো মৌল ট্যাংকে ঢেলে দিলাম আর অমনি টাইম মেশিন চলা শুরু করল! যত্তসব।

আজকাল এত সায়েন্স ফিকশন পড়ি যে স্বপ্নের মধ্যেও এগুলো আসে। খেয়াল করলাম, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। যারপরনাই বিরক্ত হলাম। তর্জনী দিয়ে কপাল মুছে একটা ঝাড়া দিলাম। তার পরপরই বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম।

বিছানায় শোয়ার ঠিক দশ সেকেন্ড পর হঠাৎ বোধোদয় হলো। আমি তো আগেরবার ঘুমিয়েছিলাম ২টা ১৫ মিনিটে। তবে এখনো কীভাবে ২টা ১৫ বাজে? চোখ মেলে তাকালাম দেয়ালঘড়ির দিকে। ২টা ১৫ বাজতে আর মাত্র পাঁচ সেকেন্ড বাকি।

টাইম মেশিনের দিকে চোখ ফেরাতেই চমকে উঠলাম। মেশিনের ওপরের অংশ থেকে আমার ঝেড়ে ফেলা ঘাম ডিসপ্লের ওপর চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে এবং ডিসপ্লে ক্রমাগত রং বদলাচ্ছে। আমি বুঝে ফেললাম আগে কী ঘটেছিল এবং এখন কী ঘটতে যাচ্ছে। তার মানে... তার মানে... আবার! নাআআআ...

লেখক: শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণি, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন