শব্দকাহন
মাইটনেরিয়ামের কথা
নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস। চলুন, আজ জেনে নিই মাইটনেরিয়াম শব্দটি কীভাবে এল।
পর্যায় সারণির ১০৯ নম্বর মৌলটির নাম মাইটনেরিয়াম। এটি সংশ্লেষণ করা হয়েছিল তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির এক গবেষণাগারে। সেই ১৯৮২ সালে। গবেষণাগারে বিসমাথ-২০৯ নিউক্লিয়াস লক্ষ্য করে লোহা-৫৮-এর নিউক্লিয়াস ছুড়ে তৈরি করা হয়েছিল মৌলটি। কয়েক কোটিবার এ সংঘর্ষ ঘটিয়ে মাত্র একটি পরমাণু তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল সেবার। সদ্য প্রস্তুত মৌলটির অর্ধায়ু ছিল মাত্র ১.৭ মিলিসেকেন্ড। এর তিন বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের দুবনার পারমাণবিক গবেষণাগারেও মৌলটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল।
অনামা এবং অনাবিষ্কৃত মৌলগুলোর জন্য পর্যায় সারণির জনক দিমিত্রি মেন্ডেলিভের নামকরণ পদ্ধতি অনুসারে এ মৌলের নাম হওয়া উচিত এক-ইরিডিয়াম। কারণ পর্যায় সারণিতে ইরিডিয়ামের ঠিক নিচেই এই মৌলের অবস্থান। ১৯৭৯ সালে আইইউপিএসি-এর সুপারিশ অনুসারে, এই মৌলটির সাময়িক নাম দেওয়া হয়েছিল আননিলেনিয়াম এবং এর সংকেত প্রস্তাব করা হয়েছিল Une।
এটিই পর্যায় সারণির দ্বিতীয় মৌল, যার নাম কোনো নারী বিজ্ঞানীর নামে দেওয়া হয়েছে; কোনো পৌরাণিক নারী চরিত্রের নামে নয়। কারণ ৯৬ নম্বর মৌলের নাম বিজ্ঞানী মেরি কুরির সম্মানে কুরিয়াম রাখা হলেও আসলে তাঁর স্বামীর পদবী কুরি।
তবে মৌলটি আবিষ্কারের পর এর একটি স্থায়ী ও সর্বজন স্বীকৃত নাম দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এর প্রথম আবিষ্কারক জার্মান বিজ্ঞানী দল নতুন মৌলটির নাম প্রস্তাব করে মাইটনেরিয়াম (Meitnerium)। অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী লিজ মাইটনারের সম্মানে এ নাম প্রস্তাব করেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে আগে, ১৯৩৮ সালে, নিউক্লিয়ার ফিশন আবিষ্কারে তাঁর ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে জন্য ১৯৪৪ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল শুধু জার্মান রসায়নবিদ অটো হানকে।
অন্যদিকে রুশ বিজ্ঞানীরা অবশ্যই এ মৌলের নাম প্রস্তাব করেছিল অটো হানের নামে—হানিয়াম। তবে শেষপর্যন্ত জার্মানদের প্রস্তাবিত নামটিই গৃহীত হয়।
এটিই পর্যায় সারণির দ্বিতীয় মৌল, যার নাম কোনো নারী বিজ্ঞানীর নামে দেওয়া হয়েছে; কোনো পৌরাণিক নারী চরিত্রের নামে নয়। কারণ ৯৬ নম্বর মৌলের নাম বিজ্ঞানী মেরি কুরির সম্মানে কুরিয়াম রাখা হলেও আসলে তাঁর স্বামীর পদবী কুরি।
মাইটনেরিয়াম অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় মৌল এবং ক্ষণস্থায়ী। তাই এর সম্পর্কে খুব বেশি গবেষণা করা সম্ভব হয়নি। তবে এর ধর্ম কোবাল্ট, রোডিয়াম এবং ইরিডিয়ামের মতো বলে ধারণা করা হয়। এর সংকেত Mt। এখন পর্যন্ত এ মৌলের আটটি আইসোটপের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ মাইটনেরিয়াম-২৭৮, যার অর্ধায়ু ৪.৫ সেকেন্ড।
