লরেন্সিয়াম কীভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস। চলুন, আজ জেনে নিই পর্যায় সারণির ১০৩তম মৌলের নাম কেমন করে লরেন্সিয়াম হলো।

পর্যায় সারণির ১০৩তম মৌলের নাম লরেন্সিয়াম। অ্যাকটিনাইড সিরিজের সর্বশেষ মৌল এবং ১১তম ট্রান্সইউরেনিক মৌল এটি। আবার একে বলা হয় প্রথম সুপারহেভি এলিমেন্ট বা অতিভারী মৌল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছুকাল পরেই শুরু হয় রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধ। এ সময় দুপক্ষই চেষ্টা করছিল আরও ভালো পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে প্রতিযোগিতাও চলছিল বেশ। সে কারণেই কৃত্রিমভাবে নতুন নতুন তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কারের ধুম পড়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গবেষণাগারগুলোতে। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে নোবেলিয়াম আবিষ্কারের সময় কুরিয়াম নিউক্লিয়াস লক্ষ্য করে নাইট্রোজেন-১৪ আয়ন ছুড়ে পাওয়া গিয়েছিল ১০৩তম মৌলটি। প্রায় একই সময় মৌলটি আবিষ্কারের দাবি জানায় রুশ বিজ্ঞানীরাও। রাশিয়ার দুবনার পারমাণবিক গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছিল মৌলটি। এরপর এটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ।

১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে নোবেলিয়াম আবিষ্কারের সময় কুরিয়াম নিউক্লিয়াস লক্ষ্য করে নাইট্রোজেন-১৪ আয়ন ছুড়ে পাওয়া গিয়েছিল ১০৩তম মৌলটি।
বিজ্ঞানী আর্নেস্ট লরেন্স

মার্কিন বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট লরেন্সের নামে। এই মার্কিন বিজ্ঞানী ছিলেন সাইক্লোট্রন বা পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটরের (কণাত্বরক যন্ত্র) উদ্ভাবক। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্প ম্যানহাটন প্রজেক্টসহ পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর আরও অবদান রয়েছে। ১০০-এর ঘরের পারমাণবিক সংখ্যার অন্যান্য মৌলের মতো ১০৩তম মৌলটিও শুধু পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটরেই তৈরি করা যায়। তাই নামকরণের ক্ষেত্রে যন্ত্রটির উদ্ভাবকের কথা ভাবা হয়েছিল। অন্যদিকে নতুন মৌলটির নাম রাদারফোর্ডিয়াম রাখার প্রস্তাব দেয় রুশ বিজ্ঞানীরা। নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ডকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিজিকস বা পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক।

লরেন্সিয়ামের এখন পর্যন্ত ১৪টি আইসোটপের খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটপ Lr-২৬৬, যার অর্ধায়ু মাত্র ১১ ঘন্টা।

শেষপর্যন্ত বিষয়টির সুরাহা হয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রির কমিশন অব নোমেনক্লেচার অব ইনঅর্গানিক কেমিস্ট্রির হস্তক্ষেপে। আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠান মার্কিন বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত নামটিকে স্বীকৃতি দেয়। আর ধাতব এ মৌল আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয় দুপক্ষকেই। সেই থেকে ১০৩তম মৌলটির নাম লরেন্সিয়াম। শুরুতে এর প্রতীক দেওয়া হয়েছিল Lw। পরে তা পরিবর্তন করে রাখা হয় Lr। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১০৩।

এই তেজস্ক্রিয় ও বিষাক্ত ধাতব মৌলটি খুবই ক্ষণস্থায়ী ও অস্থিতিশীল। লরেন্সিয়ামের এখন পর্যন্ত ১৪টি আইসোটপের খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটপ Lr-২৬৬, যার অর্ধায়ু মাত্র ১১ ঘন্টা। আর সবচেয়ে কম স্থিতিশীল আইসোটপ Lr-২৬০, এর অর্ধায়ু মাত্র ২.৭ মিনিট। অন্যান্য সুপারহেভি মৌল কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে লরেন্সিয়াম ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর ধর্ম অনেকটা লুটেটিয়াম মৌলের মতো (পর্যায় সারণির ৭১তম মৌল লুটেটিয়াম)। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়া এই তেজস্ক্রিয় মৌলের কোনো ব্যবহারিক দিক জানা যায়নি।

আরও পড়ুন