রাদারফোর্ডিয়াম শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

পর্যায় সারণির ১০৪ নম্বর মৌলটির নাম হলো রাদারফোর্ডিয়ামছবি: কেমিস্ট্রি ওয়ার্ল্ড

১৯৬৪ সাল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দুবনায় অবস্থিত নিউক্লিয়ার গবেষণাকেন্দ্রের ঘটনা। কৃত্রিমভাবে নতুন মৌল তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন সেখানকার গবেষকেরা। সে জন্য প্লুটোনিয়াম-২৪২ মৌলকে লক্ষ্য করে নিয়ন-২২ আয়ন ছুড়লেন তাঁরা। ফলে একেবারে নতুন একটা তেজস্ক্রিয় মৌল পাওয়া গেল।

তখন রুশ-মার্কিন ঠান্ডা যুদ্ধের কাল। তাই মার্কিন বিজ্ঞানীরাও নতুন কৃত্রিম মৌল আবিষ্কারের গবেষণায় পিছিয়ে ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতেও প্রায় একই ধরনের গবেষণা চলছিল। রুশ সফলতার চার বছর পর সেখানকার গবেষকেরা ক্যালিফোর্নিয়াম-২৪৯ মৌলকে লক্ষ্য করে কার্বন-১২ আয়ন ছুড়ে সফলতা পেলেন। সেখানেও একটা তেজস্ক্রিয় মৌল শনাক্ত হলো। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেল, রুশ আর মার্কিন গবেষকদের আবিষ্কৃত দুটি মৌলই আসলে এক।

দুই দলকেই মৌলটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিল আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠান। তবে নামের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেল মার্কিন প্রস্তাব। তবে একই সঙ্গে তারা এটাও জানিয়ে দিল, পরবর্তী আবিষ্কৃত মৌলটির নাম রাখা হবে দুবনিয়াম।

রুশ বিজ্ঞানীরা মৌলটির নাম প্রস্তাব করলেন কুর্চাতোভিয়াম। রুশ নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ ইগর কুর্চাতোভের নামেই মৌলটি পরিচিত হোক, এটাই তাঁদের ইচ্ছা। কারণ, এই বিজ্ঞানীই সোভিয়েত পরমাণু বোমার জনক। কিন্তু এ প্রস্তাবে বেঁকে বসলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের প্রস্তাব, নতুন মৌলটির নাম হবে রাদারফোর্ডিয়াম। বিখ্যাত পদার্থবিদ আর্নেস্ট রাদারফোর্ডকে স্মরণ করেই এ নামের প্রস্তাব দেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

দুই দলই নিজেদের মতো করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রির (আইইউপিএসি) কাছে নামের প্রস্তাব পাঠাল। দুই দলকেই মৌলটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিল আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠান। তবে নামের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেল মার্কিন প্রস্তাব। তবে একই সঙ্গে তারা এটাও জানিয়ে দিল, পরবর্তী আবিষ্কৃত মৌলটির নাম রাখা হবে দুবনিয়াম। মানে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিউক্লিয়ার গবেষণাগার যে জায়গায় অবস্থিত, সেই দুবনা শহরের নামে। কাজেই পর্যায় সারণির ১০৪ নম্বর মৌলটির নাম হলো রাদারফোর্ডিয়াম এবং ১০৫ নম্বর মৌলটির নাম দুবনিয়াম।

রুশ বিজ্ঞানীরা মৌলটির নাম প্রস্তাব করলেন কুর্চাতোভিয়াম। রুশ নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ ইগর কুর্চাতোভের নামেই মৌলটি পরিচিত হোক, এটাই তাঁদের ইচ্ছা। কারণ, এই বিজ্ঞানীই সোভিয়েত পরমাণু বোমার জনক।

রাদারফোর্ডিয়ামের প্রতীক Rf। এ মৌলের প্রায় ১৬টি আইসোটোপ আছে। তবে সব কটিই অস্থিতিশীল এবং অতি অল্প সময়ে ক্ষয় হয়ে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ হলো 267Rf, যার অর্ধায়ু প্রায় ১ দশমিক ৩ ঘণ্টা।

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার মার্চ ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন