আলোর চেয়ে দ্রুত ছুটছে মহাবিশ্ব, আইনস্টাইন কি তবে ভুল ছিলেন

মহাবিশ্বের প্রসারণের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে রহস্যময় ডার্ক এনার্জিছবি: ইউনিভার্স টুডে, নাসা

মহাবিশ্বে আলোর গতির চেয়ে দ্রুত কিছুই ছুটতে পারে না, কথাটা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু মহাবিশ্ব বড় অদ্ভুত! যেন সোজা পথে চলতে পছন্দই করে না। তাই তো নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব!

এটা কীভাবে সম্ভব? ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। আমরা যখন টেলিস্কোপে দূরের কোনো গ্যালাক্সি দেখি, আমরা আসলে তার অতীত দেখি। কারণ, ওই গ্যালাক্সি থেকে আলো আমাদের কাছে আসতে কোটি কোটি বছর সময় নিয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে মহাবিশ্ব কিন্তু বসে ছিল না। সে বেলুনের মতো ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে। ফলে ওই গ্যালাক্সি আলো পাঠানোর সময় যেখানে ছিল, এখন সে তার চেয়ে বহুগুণ দূরে সরে গেছে।

অঙ্কের গোলমাল নাকি ম্যাজিক

মহাবিশ্বের বয়স মোটামুটি ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। তাহলে আমাদের তো সর্বোচ্চ ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের জিনিসই দেখার কথা। কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রায় ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের জিনিসও দেখতে পাই! একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে পার্টিকল হরাইজন।

এখন প্রশ্ন হলো, মহাবিশ্বের বয়সের চেয়ে তার দৃশ্যমান সীমানা বড় হলো কীভাবে? উত্তরটা সহজ—মহাবিশ্ব আলোর চেয়েও দ্রুত প্রসারিত হয়েছে।

আরও পড়ুন
মহাবিশ্বের বয়স অনুযায়ী আমাদের সর্বোচ্চ ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের জিনিস দেখার কথা। কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রায় ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের জিনিসও দেখতে পাই!

তাহলে কি আইনস্টাইনের নিয়ম ভাঙল

না, নিয়ম ভাঙেনি। আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি তত্ত্ব বলে, কোনো বস্তু মহাকাশের ভেতর দিয়ে আলোর চেয়ে দ্রুত চলতে পারে না। আপনি কখনোই দেখবেন না একটা রকেট আপনার পাশ দিয়ে আলোর চেয়ে জোরে হুশ করে বেরিয়ে গেল।

কিন্তু মহাকাশ বা স্পেস নিজেই যদি প্রসারিত হয়? আইনস্টাইন সে ব্যাপারে কিন্তু কিছু বলেননি। মানে মহাকাশ নিজে যে আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটতে পারবে না, তা আইনস্টাইন বলেননি। দূরের গ্যালাক্সিগুলো নিজেরা ছুটছে না, বরং তাদের আর আমাদের মাঝখানের শূন্যস্থানটা রাবারের মতো লম্বা হচ্ছে। আর তা আলোর চেয়েও দ্রুত হতেই পারে।

আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব!
ছবি: ইউনিভার্স টুডে, নাসা

বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, ঠিক ১৪.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে একটা অদৃশ্য দেওয়াল আছে, যার নাম হাবল ডিসটেন্স বা হাবল স্ফিয়ার। এই দূরত্বের ওপারে থাকা যেকোনো বস্তু আমাদের কাছ থেকে আলোর চেয়েও বেশি গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে।

তাহলে আমরা সেগুলো দেখি কীভাবে? কারণ, এগুলো যখন আলো ছেড়েছিল, তখন আমাদের দৃশ্যমান সীমানার মধ্যেই ছিল এবং আলোর গতির চেয়ে কম গতিতে সরছিল। সেই আলো অনেক কষ্ট করে এখন আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন
বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, ঠিক ১৪.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে একটা অদৃশ্য দেওয়াল আছে, যার নাম হাবল ডিসটেন্স বা হাবল স্ফিয়ার।

তবে এর একটা শেষ সীমা আছে। একে বলে কসমোলজিক্যাল ইভেন্ট হরাইজন। এটা আমাদের থেকে প্রায় ১৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।

আজকের এই মুহূর্তে যদি ১৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোনো গ্যালাক্সিতে কেউ একটা টর্চ জ্বলায়, সেই আলো কখনোই আমাদের কাছে পৌঁছাবে না। কারণ, আলো আমাদের দিকে যতটা এগোবে, তার চেয়ে দ্রুতগতিতে মাঝখানের পথটা লম্বা হয়ে যাবে। অনেকটা উল্টোদিকে চলা ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতো!

একটি ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে প্রসারিত হয়ে আজকের মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে
ছবি: বিবিসি নিউজ

মহাবিশ্বের এই প্রসারণের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে রহস্যময় ‘ডার্ক এনার্জি’। এই শক্তি মহাবিশ্বকে দিন দিন আরও জোরে ঠেলছে। প্রায় ১০০ বিলিয়ন বছর পর, আমাদের কাছের কিছু গ্যালাক্সি ছাড়া বাকি সব গ্যালাক্সি এত দূরে চলে যাবে যে তাদের আলো আর কখনোই আমাদের কাছে পৌঁছাবে না। তখন আমাদের আকাশ হয়ে যাবে ঘুটঘুটে অন্ধকার!

 

লেখক: ফ্রন্টেন্ড ডেভেলপার, সফটভেঞ্চার

সূত্র: ইউনিভার্স টুডে, নাসা

আরও পড়ুন