মহাকাশে নতুন এক ধরনের ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলো এতই বিশেষ যে বিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছেন লাইট ব্ল্যাকহোল। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এই ব্ল্যাকহোলগুলো খুবই রহস্যময়। এতদিন বিজ্ঞানীরা এই আকৃতির ব্ল্যাকহোলের কথা জানতেন না। সম্প্রতি এই মাঝারি বা তুলনামূলক হালকা ধরনের ব্ল্যাকহোলের সন্ধান মিলেছে।
এতদিন বিজ্ঞানীরা মূলত দুই ধরনের ব্ল্যাকহোলের কথা জানতেন। ছোট ও বড় ব্ল্যাকহোল। কোনো বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যু হলে ছোট ব্ল্যাকহোলের জন্ম হয়। এদের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। অন্যটি হলো দানবাকার ব্ল্যাকহোল। এরা সুবিশাল গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্রে থাকে। এদের ভর সূর্যের চেয়ে লাখ লাখ গুণ বেশি হয়। কিন্তু এর চেয়ে কম ভরের কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে পাওয়া ছিল খুব কঠিন।
এই ব্ল্যাকহোলগুলো আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারবে। আমরা যে মডেল দিয়ে মহাবিশ্বকে বুঝি, তাও আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব। ভবিষ্যতে এমন আরও ব্ল্যাকহোল আবিষ্কার হতে পারে।
সম্প্রতি সেই ব্ল্যাকহোলগুলোই বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন। নতুন আবিষ্কৃত এই ব্ল্যাকহোলগুলো তুলনামূলক হালকা। সে কারণেই এর নাম রাখা হয়েছে লাইট ব্ল্যাকহোল। এগুলো আমাদের সূর্যের চেয়ে ১০০-৩০০ গুণ ভারী। তবে এগুলো কোনো মৃত নক্ষত্র থেকে তৈরি হয়নি। আবার এগুলোর সম্পূর্ণ গ্যালাক্সিকে ধরে রাখার মতো শক্তিও নেই। তাই প্রশ্ন ওঠে, এই ব্ল্যাকহোলগুলো কীভাবে তৈরি হলো?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এগুলো তৈরি হয়েছে অন্য ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণে। দুটি ব্ল্যাকহোল একসঙ্গে মিলে গেলে তৈরি হয় একটি নতুন ব্ল্যাকহোল। এভাবেই জন্ম হয় মাঝারি আকারের ব্ল্যাকহোলের।
এই ব্ল্যাকহোলগুলো খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। কারণ, এগুলো যে সংকেত পাঠায়, তা খুব দুর্বল। বিজ্ঞানীরা এই নতুন ব্ল্যাকহোল খুঁজে পেতে বিশেষ দুটি যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। যন্ত্র দুটির নাম হলো লাইগো এবং ভার্গো ডিটেক্টর। এই ডিটেক্টরগুলো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে। মহাকাশের গভীরে যখন বিশাল কোনো সংঘর্ষ হয়, তখন পুরো মহাকাশে একটি ঢেউ বা কম্পন ছড়িয়ে পড়ে। লাইগো এবং ভার্গো সেই কম্পনকেই শনাক্ত করতে পারে। এই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিজ্ঞানীরা এমন ১১টি ঘটনা রেকর্ড করেছেন। সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেই তাঁরা নতুন এই ব্ল্যাকহোল খুঁজে পেয়েছেন।
এতদিন বিজ্ঞানীরা মূলত দুই ধরনের ব্ল্যাকহোলের কথা জানতেন। ছোট ও বড় ব্ল্যাকহোল। কোনো বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যু হলে ছোট ব্ল্যাকহোলের জন্ম হয়। এদের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এই আবিষ্কার এত গুরুত্বপূর্ণ? এর আসলে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, এটি আমাদের মহাবিশ্বের শুরুর সময়ের কথা জানাতে পারে। প্রথম নক্ষত্রগুলোর জন্ম এবং মৃত্যুর সময় কী ঘটেছিল, তাও হয়তো জানা যাবে।
দ্বিতীয়ত, এই ব্ল্যাকহোলগুলো আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারবে। আমরা যে মডেল দিয়ে মহাবিশ্বকে বুঝি, তাও আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব। ভবিষ্যতে এমন আরও ব্ল্যাকহোল আবিষ্কার হতে পারে। প্রতিটি নতুন আবিষ্কারই আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বিশদে জানতে সাহায্য করবে।