আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বদলে দিতে পারে গ্রহের বাসযোগ্যতার নিয়ম
শ্বেত বামন নক্ষত্রের চারপাশের গ্রহগুলো ভিনগ্রহী প্রাণের জন্য দীর্ঘস্থায়ী আবাসস্থল হতে পারে। কিন্তু এতদিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এই গ্রহগুলো অতিরিক্ত উত্তপ্ত। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, গ্রহগুলো এতটা উত্তপ্ত নাও হতে পারে। আর এ কথা বলা হচ্ছে আলবার্ট আইনস্টাইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র মেনেই।
সূর্যের মতো নক্ষত্রের মৃত্যুর হলে তা শ্বেত বামনে পরিণত হয়। আমাদের গ্যালাক্সিতেই এমন কোটি কোটি শ্বেত বামন ছড়িয়ে আছে। এই নক্ষত্রগুলো কোটি কোটি বছর ধরে উষ্ণ থাকতে পারে। তাই প্রাণের সন্ধানের জন্য এগুলো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু আগের গবেষণাগুলোতে এসব বিষয় কি বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেননি?
কিন্তু কক্ষপথ ডিম্বাকৃতির না হওয়ায় ভয়ংকর টাইডাল হিটিংও হয় না। ফলে গ্রহটি বাসযোগ্যই থেকে যায়।
আসলে আগের গবেষণাগুলোতে একটি বড় সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। শ্বেত বামন নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চল বা হ্যাবিটেবল জোন নক্ষত্রের খুব কাছে অবস্থিত হয়। এই অঞ্চলে গ্রহের তাপমাত্রা তরল পানি থাকার জন্য উপযুক্ত থাকে। কিন্তু সমস্যা হয়, যদি সেই নক্ষত্রমণ্ডলে কাছাকাছি আরও একটি গ্রহ থাকে। কাছাকাছি থাকা দ্বিতীয় গ্রহটির মহাকর্ষীয় টানে ভেতরের গ্রহটির কক্ষপথ ডিম্বাকৃতির হয়ে যায়। ফলে গ্রহটি ক্রমাগত সংকুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘টাইডাল হিটিং’। এর ফলে গ্রহটি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে তা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
কিন্তু আগের গবেষণাগুলো নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব ব্যবহার করে করা হয়েছিল। আমরা জানি, নিউটনের তত্ত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক। কিন্তু শ্বেত বামনের মতো খুব ঘন নক্ষত্রের কাছাকাছি এটি সবসময় নিখুঁতভাবে কাজ করে না।
যেমন, আমাদের সৌরজগতে বুধ গ্রহের কক্ষপথ ধীরে ধীরে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকে। এই ঘটনাটি নিউটনের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বই প্রথম এর সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছিল। সম্প্রতি প্রিপ্রিন্ট সার্ভার আরজিভে (arXiv) এসেছে এই গবেষণাপত্র। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সাধারণ আপেক্ষিকতার প্রভাবে ভেতরের গ্রহটির কক্ষপথ ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। এই ঘূর্ণনটিই গ্রহটিকে বাইরের গ্রহের মহাকর্ষীয় টান থেকে বাঁচায়। ফলে গ্রহটির কক্ষপথ আর বেশি ডিম্বাকৃতির হতে পারে না। একটি লাটিম যেমন ঘুরতে ঘুরতে নিজের অক্ষটিকেও ঘোরাতে থাকে, গ্রহের কক্ষপথও ঠিক সেভাবেই ধীরে ধীরে ঘোরে।
যদি সেই নক্ষত্রমণ্ডলে কাছাকাছি আরও একটি গ্রহ থাকে। কাছাকাছি থাকা দ্বিতীয় গ্রহটির মহাকর্ষীয় টানে ভেতরের গ্রহটির কক্ষপথ ডিম্বাকৃতির হয়ে যায়। ফলে গ্রহটি ক্রমাগত সংকুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে।
কিন্তু কক্ষপথ ডিম্বাকৃতির না হওয়ায় ভয়ংকর টাইডাল হিটিংও হয় না। ফলে গ্রহটি বাসযোগ্যই থেকে যায়। এই নতুন গবেষণা বলছে, শ্বেত বামন নক্ষত্রের চারপাশে বাসযোগ্য গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। তবে সঙ্গী গ্রহটি যদি খুব বড় বা খুব কাছে থাকে, তাহলে টাইডাল হিটিং এড়ানো সম্ভব নয়।
আর যদি সত্যিই এমন কোনো গ্রহে কোনো ভিনগ্রহের সভ্যতা গড়ে ওঠে, তাহলে হয়তো একদিন তারা নিজেরাই সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কার করবে। আর সেদিন তারা বুঝতে পারবে, পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বটি তারা আবিষ্কার করেছে, সেই তত্ত্বের কারণেই তাদের অস্তিত্ব টিকে আছে!