সৌরজগতের বাইরে ৬ হাজার এক্সোপ্লানেটের খোঁজ পেয়েছে নাসা

কাল্পনিক এক্সোপ্ল্যানেটমিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

মহাবিশ্বে কি আমরা একা? এ প্রশ্ন মানুষের মনে বহু যুগ ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা খুঁজে চলেছেন পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য গ্রহ। এগুলোকে বলে এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহ। সম্প্রতি নাসা সৌরজগতের বাইরে এমন ছয় হাজারের বেশি নতুন গ্রহের সন্ধান নিশ্চিত করেছে।

মাত্র তিন বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার। ৩০ বছর ধরে সৌরজগতের বাইরে খোঁজ চালিয়ে এই বিশাল সংখ্যক গ্রহ খুঁজে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভবিষ্যতে আরও এমন অনেক গ্রহের খোঁজ মিলবে।

এ সম্পর্কে নাসা একটি ভিডিওতে জানিয়েছে, ‘আমরা এখন মহাকাশ গবেষণার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। বিজ্ঞানীরা এখন শুধু জীবন থাকতে পারে এমন গ্রহ খুঁজছেন না। তাঁরা এমন সব গ্রহের খোঁজ করছেন যা আমাদের কল্পনারও বাইরে।’

কাল্পনিক এক্সোপ্ল্যানেট
মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

১৯৯২ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যখন পালসার নামে খুব অদ্ভুত নক্ষত্রের চারপাশে দুটি গ্রহ খুঁজে পান, তখন থেকেই এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের নতুন যুগ শুরু হয়। তবে এই অনুসন্ধানে বাড়তি গতি পায় ১৯৯৫ সালে। তখন প্রথমবারের মতো সূর্যের মতো একটি সাধারণ নক্ষত্রের চারপাশে আরেকটি গ্রহের সন্ধান মেলে। নাসার কেপলার ও টেসের মতো মহাকাশ মিশনগুলো আবিষ্কারের এই গতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন
৬ হাজার গ্রহ খুঁজে পাওয়া বিশাল ব্যাপার। তবে আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতেই আছে প্রায় একশ বিলিয়ন গ্রহ। এই বিশাল সংখ্যার তুলনায় ৬ হাজার খুবই কম।

১৯৯৫ সালের ৬ অক্টোবর বিজ্ঞানী মাইকেল মায়োর ও ডিডিয়ের কেলোজ প্রথম বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেই এক্সোপ্ল্যানেটের নাম ছিল ৫১ পেগাসি বি। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্রহটি বৃহস্পতির চেয়ে কিছুটা ছোট গ্যাসীয় গ্রহ। ২০১৫ সালের মধ্যে শুধু কেপলার ১ হাজার বহিঃসৌরগ্রহ খুঁজে পায়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে আবিষ্কৃত হয় প্রায় ১ হাজার ৫০০টি নতুন গ্রহ। এরপর ২০২২ সালের মার্চ মাসে মোট আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজারে। আর বর্তমানে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৬ হাজারে।

৬ হাজার গ্রহ খুঁজে পাওয়া বিশাল ব্যাপার। তবে আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতেই আছে প্রায় একশ বিলিয়ন গ্রহ। এই বিশাল সংখ্যার তুলনায় ৬ হাজার খুবই কম। তবুও এই আবিষ্কার আমাদের জন্য এক অসাধারণ সাফল্য। কারণ, পৃথিবী থেকে অন্যান্য নক্ষত্রগুলো এত দূরে যে এদের চারপাশে থাকা গ্রহগুলো খুঁজে বের করা সত্যিই খুব কঠিন। এই গ্রহগুলো অনেক সময় নিজেদের নক্ষত্রের তীব্র আলোয় ঢাকা পড়ে থাকে। বিশাল সার্চলাইটের পাশে ছোট্ট একটি মশা খুঁজে বের করার মতো ব্যাপার আরকি। আর এ কারণেই এতগুলো গ্রহ খুঁজে পাওয়া এক অসাধারণ সাফল্য।

আমাদের প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, মহাকাশে নতুন নতুন গ্রহ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বহিঃসৌরগ্রহের সংখ্যা বাড়াতে এদের খুঁজছেন না। বরং বহিঃসৌরগ্রহ খোঁজের মাধ্যমে পৃথিবী, সৌরজগৎ ও পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে অনেক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আমরা যত গ্রহ পেয়েছি, তার বেশিরভাগই সৌরজগতের কোনো নির্দিষ্ট গ্রহের মতো নয়।

আরও পড়ুন
২০২৬ সালে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি উৎক্ষেপণ করবে প্লেটো নামে একটি মহাকাশযান। ওটার কাজ হবে সূর্যের মতো নক্ষত্রের চারপাশে থাকা পাথুরে গ্রহ খুঁজে বের করা।

বেশিরভাগ এক্সোপ্লানেট সরাসরি দেখা যায় না। এদের খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞানীরা কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ট্রানজিট মেথড। এই পদ্ধতিতে একটি গ্রহ এর নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় যে পরিমাণ আলো আটকে দেয়, তা মেপে গ্রহটি শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতেই প্রায় ৪ হাজার ৫০০ গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর পরেই রয়েছে রেডিয়াল ভেলোসিটি মেথড। এই পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৪০ গ্রহ।

সরাসরি ছবি তোলার পদ্ধতিটি সবচেয়ে কঠিন হলেও বিজ্ঞানীরা এটা নিয়েই কাজ করছেন। কারণ, এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কী ধরনের রাসায়নিক উপাদান আছে, তা বিশ্লেষণ করা যায়। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০০টিরও কম গ্রহের সরাসরি ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে।

ভবিষ্যতে আরও বেশি বহিঃসৌরগ্রহ খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু নতুন মহাকাশ অভিযান চালাবেন। এর মধ্যে ২০২৬ সালে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি উৎক্ষেপণ করবে প্লেটো নামে একটি মহাকাশযান। ওটার কাজ হবে সূর্যের মতো নক্ষত্রের চারপাশে থাকা পাথুরে গ্রহ খুঁজে বের করা। এরপর ২০২৮ সালে চীন তাদের আর্থ ২.০ মিশন শুরু করবে। এটি পৃথিবীর আকারের গ্রহ খুঁজতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি নামে আরেকটি মিশন শুধু বাসযোগ্য গ্রহগুলোকেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। আর সিএইচইওপিএস এবং আরিয়েল নামে মিশনে আগে থেকে আবিষ্কৃত গ্রহগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা চালাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: স্পেস ডটকম, সায়েন্স এলার্ট, নাসা

আরও পড়ুন