আজ রাতে দেখা মিলবে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সঙ্গে ব্লাডমুন

আজ, রোববার রাতে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের সবটা ঢেকে ফেলবে। চিরচেনা চাঁদ এ সময় ধীরে ধীরে রূপালি থেকে কালচে লাল রং ধারণ করবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভাষায় একে বলে ‘ব্লাডমুন’। চন্দ্রগ্রহণটি টানা ৮২ মিনিট স্থায়ী হবে। এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের কিছু অঞ্চল থেকে দেখা যাবে এই চাঁদের চমৎকার রূপ।

পূর্ব গোলার্ধের বেশিরভাগ মানুষই এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকেও। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যদি আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ থেকেও এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ২০২৫ সালের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণ। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে এর পথ হওয়ায় প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে। ২০২২ সালের পর এটিই দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে।

চাঁদ যখন পৃথিবীর সেই ছায়ায় প্রবেশ করে, তখন এর পরিচিত রূপালি আভা ধীরে ধীরে তামাটে বা লালচে রঙে বদলে যায়। তখন চাঁদের কক্ষপথ একটু হেলে থাকে।

বাংলাদেশে চন্দ্রগ্রহণটি আজ, অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হয়ে আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর রাত ২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এর মাঝে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ রাত ১১টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। সর্বোচ্চ গ্রহণ দেখা যাবে রাত ১২টা ১১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মানুষরা রাতের বেলায় এই গ্রহণটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো দেখতে পাবেন।

রাজধানী ঢাকায় এই বিরল দৃশ্য দেখার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসেসিয়েশন এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। আজ ৭ সেপ্টেম্বর, রোববার রাত ৯.২৮টা থেকে রাত ২.৫৫টা পর্যন্ত কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে।

আরও পড়ুন

চন্দ্রগ্রহণের সময় কী হয়

চন্দ্রগ্রহণ যখন ঘটে, তখন পৃথিবী সূর্য এবং চাঁদের মাঝখানে চলে আসে। এতে চাঁদের ওপর পৃথিবীর ছায়া পরে। চাঁদ যখন পৃথিবীর সেই ছায়ায় প্রবেশ করে, তখন এর পরিচিত রূপালি আভা ধীরে ধীরে তামাটে বা লালচে রঙে বদলে যায়। তখন চাঁদের কক্ষপথ একটু হেলে থাকে। তাই প্রতি পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণ হয় না। বছরে মাত্র দুই বা তিনবার দেখা যায় চন্দ্রগ্রহণ। পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে চাঁদের এই বিরল রূপ দেখা যায়।

চন্দ্রগ্রহণটি আজ রাত অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর ভোর পর্যন্ত চলবে। এশিয়া এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মানুষরা রাতের বেলায় এই গ্রহণটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো দেখতে পাবেন।
দেখে যেন মনে হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটির মাথায় হচ্ছে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। জেনিকা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা
ছবি: রয়টার্স

চাঁদ কেন লাল হয়ে যায়

পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ পুরোপুরি কালো হয়ে যায় না। বরং অদ্ভুত লালচে রং ধারণ করে। এটিই ব্লাডমুন নামে পরিচিত। কিন্তু এমনটা কেন ঘটে? এর মূল কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। ব্লাডমুনের ব্যাপারে জানতে হলে শুরুতে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বুঝতে হবে। আমরা সবাই জানি, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। এর নিজস্ব কোনো আলো নেই। তেমনি পৃথিবীরও নেই। সূর্যের আলোয় এরা আলোকিত হয়। যখন সূর্য ও চাঁদের মধ্যে পৃথিবী চলে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে। ফলে সম্পূর্ণ চাঁদ বা এর কিছু অংশ পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। এই ঘটনাকেই বলে চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণগ্রহণের সময়ও মাঝেমধ্যে সূর্যের আলোর কিছুটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রতিসরিত হয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে। যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরলরেখায় আসে, তখন সূর্যের আলো পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কারণে আলো কিছুটা বাঁকিয়ে ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আমাদের বায়ুমণ্ডল নীল আলো শোষণ করে। এ সময় কেবল লাল ও কমলা রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে চাঁদের ওপর পড়ে। তাতে চাঁদকে দেখায় লালচে বা লাল। একেই বলে ‘ব্লাডমুন’। তবে এটা কোনো বৈজ্ঞানিক নাম নয়, প্রচলিত নাম। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ধুলো এবং আগ্নেয়গিরির ধ্বংসাবশেষের মতো কণা বেশি থাকলে লাল রং আরও গাঢ় হয়। তবে বর্তমানে আমাদের বায়ুমণ্ডল অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার থাকায়, এই গ্রহণটি উজ্জ্বল কমলা-লাল রঙের দেখানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন
ব্লাডমুনের ব্যাপারে জানতে হলে শুরুতে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বুঝতে হবে। আমরা সবাই জানি, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। এর নিজস্ব কোনো আলো নেই।
রক্তিম চাঁদ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গ্রহণ দেখার সেরা জায়গা

চন্দ্রগ্রহণটি আজ রাত অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর ভোর পর্যন্ত চলবে। এশিয়া এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মানুষরা রাতের বেলায় এই গ্রহণটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো দেখতে পাবেন। ব্লাডমুন কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময়ের ওপর। মূলত চাঁদের ওপর পৃথিবীর ছায়ার আকার যত বড় হবে, পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল তত বাড়বে।

৮২ মিনিটের পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ এতটাই অন্ধকার হয়ে যাবে যে রাতের আকাশ তারায় ভরে উঠবে। যারা ভালোভাবে আকাশ পর্যবেক্ষণ করবেন, তাঁরা চাঁদের কাছেই একটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের বিন্দু দেখতে পাবেন। ওটা হলো শনি গ্রহ। একটি ছোট টেলিস্কোপ দিয়ে শনির বলয় এবং এর কাছেই নেপচুন গ্রহকে হালকা নীল-সবুজ বিন্দু হিসেবে দেখা যাবে।

যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে অথবা আপনি এমন কোনো জায়গায় থাকেন যেখানে গ্রহণ দেখা যাবে না, তাহলে অনলাইনে এটি সরাসরি দেখার সুযোগ আছে। ভার্চ্যুয়াল টেলিস্কোপ প্রজেক্টের মতো বিভিন্ন ওয়েবসাইট বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান থেকে চন্দ্রগ্রহণের সরাসরি সম্প্রচার করবে। যদি আপনি এই বছরের চন্দ্রগ্রহণ দেখতে না পারেন, তাতেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ, পরের চন্দ্রগ্রহণটি ২০২৬ সালের ২-৩ মার্চ দেখা যাবে। তখন তা স্থায়ী হবে ৫৮ মিনিট।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, লাইভ সায়েন্স, স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন