মহাকাশ
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ৭ তথ্য
আইএসএস—আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। মানুষের নির্মিত সবচেয়ে জটিল ও আশ্চর্যজনক কাঠামোগুলোর মধ্যে একটা। নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার ও বিশ্বের নানা দেশের মধ্যে সহযোগিতার এক অনন্য মঞ্চ এই মহাকাশ স্টেশন। কিন্তু এটা সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? আসুন এই মহাকাশ স্টেশন সম্পর্কে ৭টি চমকপ্রদ তথ্য জানা যাক।
১. প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সেকেন্ডে প্রায় ৫ মাইল বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। ঘণ্টায় যা প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার। ফলে নভোচারীরা প্রতি ৯০ মিনিটে একবার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পান। অর্থাৎ তাঁরা প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যের উদয় ও অস্ত দেখেন।
২. আইএসএস ফুটবল মাঠের সমান
মহাকাশে মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় কাঠামোগুলোর মধ্যে একটা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন। লম্বায় প্রায় ১০৯ মিটার বা ৩৫৬ ফুট। অনেকটা আমেরিকান ফুটবল মাঠের সমান। এই স্টেশনে একসঙ্গে ৭ নভোচারী থাকতে পারেন। স্টেশনের কাজের জায়গাটি ছয় বেডরুমের একটা বাড়ির চেয়েও বড়। সেখানে রয়েছে ছয়টি ঘুমানোর কোয়ার্টার, দুটি বাথরুম, একটি জিমনেসিয়াম ও একটি বিশাল জানালা। এই জানালার সাহায্যে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউতে দেখা যায়। আইএসএস-এর ওজন প্রায় ৪৫০ টন বা ৪ লাখ কেজি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ এয়ারবাস এ৩৮০-এর দৈর্ঘ্য ২৬২ ফুট। বুঝতেই পারছেন স্পেস স্টেশন কতটা বড়! সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। প্রায় আট মাইল দীর্ঘ তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন মডিউলকে। স্পেস স্টেশন চালানোর জন্য রয়েছে ৫০টি কম্পিউটার।
৩. মাইক্রোগ্র্যাভিটি ল্যাবরেটরি
আশপাশের জিনিসগুলো ভাসমান অবস্থায় রাখার জন্য স্পেস স্টেশনের ভেতরে রয়েছে মাইক্রোগ্র্যাভিটি ব্যবস্থা। মহাকাশে স্টেশনের নভোচারীরা কিংবা বস্তুগুলো পৃথিবীর মতো মহাকর্ষ টান অনুভব করে না। এ কারণে নভোচারীদের স্পেস স্টেশনের ভিতরে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে, সেখানে কোনো মাধ্যাকর্ষণ নেই। আছে তবে খুব দুর্বল। মাইক্রোগ্র্যাভিটির এই পরিবেশ বিজ্ঞানীদের জন্য অনন্য ল্যাবরেটরি হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে অনেক পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু মহাকাশে এই বাধা নেই। বিজ্ঞানীরা এখানে চিকিৎসা, জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা চালান। ১০৮টির বেশি দেশের গবেষকদের প্রায় ৩ হাজারটি গবেষণা কাজ পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে এক্সপিডিশন ৬০, যা এই মাইক্রোগ্র্যাভিটি ল্যাবরেটরিকে বিশ্বব্যাপী গবেষণার এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।
৪. প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ব্যায়াম
পৃথিবীতে আমরা স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চলাফেরার মাধ্যমে আমাদের শরীর সক্রিয় রাখি। কিন্তু মহাকাশে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। নভোচারীরা মাইক্রোগ্রাভিটির ওই পরিবেশে পেশি ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করেন। তাঁরা বিশেষভাবে ডিজাইন করা ট্রেডমিলের মতো যন্ত্র ব্যবহার করে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সবচেয়ে বেশি দিন কাটানোর রেকর্ড গড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারী পেগি উইটসন। তিনি প্রায় ৬৬৫ দিন মহাকাশে ছিলেন। স্পেস স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ ও আপগ্রেডের কাজে নভোচারীরা নিয়মিত স্পেসওয়াক করেন।
৫. স্পেস স্টেশনটি শুধু নাসার নয়
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতীক বলে ধরা হয়। কারণ, এটি কোনো দেশের একক প্রকল্প নয়। পাঁচটি মহাকাশ সংস্থা মিলে ১৫টি দেশের অংশীদারিত্বে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পরিচালনা করে। এই যৌথ প্রকল্পের মহাকাশ সংস্থাগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের নাসা, রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস, কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি, জাপানি মহাকাশ অনুসন্ধান সংস্থা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা।
৬. আইএসএস অনেকগুলো খণ্ডে যুক্ত
আমরা ছবিতে যে কাঠামোটা দেখি সেটা একবারে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে রকেটের মাধ্যমে একেকটি অংশ মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। তারপর সেগুলো একটা অন্যটির সঙ্গে যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে এই কাঠামো। ১৯৯৮ সালে জারিয়া নামে মডিউল দিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের যাত্রা শুরু হয়। পরের কয়েক বছরে পরীক্ষাগার, লিভিং কোয়ার্টার ও সোলার প্যানেলসহ আরও অনেক মডিউল যোগ করে স্টেশনটিকে সম্পূর্ণ করা হয়েছে। এই স্টেশনে ২০০০ সাল থেকে নভোচারীরা বসবাস করে বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে আসছেন। একটি নভোযানকে পৃথিবী থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠাতে গড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে।
৭. সময় শেষ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জীবনকাল শেষ হয়ে এসেছে। এখন নিরাপদে এটি ধ্বংস করার কাজ করছে নাসা। ধ্বংস করার দায়িত্ব দিয়েছে স্পেসএক্সকে। কোম্পানিটি ২০৩১ সালের দিকে পৃথিবীর কোনো সমুদ্রে ধ্বংস করা হতে পারে। ২০৩০ সালের শেষদিকে এর কার্যক্রম শেষ হবে।