মারা গেছেন অ্যাপোলো-১৩ মিশনের নভোচারী জিম লোভেল

জিম লোভেল ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে নাসায় যোগ দেনছবি: নাসা

নাসার নভোচারী জিম লোভেল মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। গত ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রেরের ইলিনয়ের লেক ফরেস্টে তিনি মারা যান। নাসার অ্যাপোলো ১৩ মিশনে তিনি চাঁদে গিয়েছিলেন।

জিম লোভেলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, ‘লোভেলের জীবন ও কর্ম লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর সাহস আমাদের চাঁদ এবং তার বাইরে যাওয়ার পথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। সেগুলো আজও অব্যাহত রয়েছে।’

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি বলেছেন, ‘জিমের থেকে আমরা অনেক শিখেছি। জিমের এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য আমরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’

জিম লোভেল ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে নাসায় যোগ দেন। তাঁর দলের আটজন সহকর্মীর মধ্যে ছিলেন চাঁদে প্রথম পা রাখা নীল আর্মস্ট্রং এবং মহাকাশে হাঁটা (স্পেস ওয়াক) প্রথম মার্কিন নভোচারী এড হোয়াইট।

আরও পড়ুন
১৯৫৮-৬২ সাল পর্যন্ত তিনি মেরিল্যান্ডের নেভাল এয়ার টেস্ট সেন্টারে একজন পরীক্ষামূলক পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নৌবাহিনীর ‘ফ্যান্টম’ ফাইটার প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপকও ছিলেন।

জিম লোভেলের পরিবার জানিয়েছে, ‘মহাকাশযাত্রার পথিকৃৎ হিসেবে তাঁর সফল কর্মজীবনের জন্য আমরা গর্বিত। তবে আমাদের কাছে তিনি শুধু নভোচারী ছিলেন না; বাবা, দাদা এবং পরিবারের প্রধান ছিলেন। তিনি আমাদের সবার কাছে সত্যিকারের নায়ক। তাঁর আশাবাদ, রসবোধ এবং অসম্ভবকেও সম্ভব করার প্রেরণা আমরা খুব মিস করব।’

১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে জিম লোভেল প্রথমবারের মতো জেমিনি-৭ নভোযানে মহাকাশে যান। এটি ছিল দুই সপ্তাহের একটি মিশন। সেই মিশনে পৃথিবীর কক্ষপথে দুটি নভোযানের প্রথম সংযোগ ঘটে। অ্যাপোলো ৮ মিশনে তিনি তৃতীয়বারের মতো মহাকাশে যান। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে এই অভিযানে প্রথমবারের মতো মানুষ পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে গিয়ে চাঁদেরপৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করে। এই মিশনে তিনি কমান্ড মডিউল পাইলট হিসেবে কাজ করেন।

১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে জিম লোভেল প্রথমবারের মতো জেমিনি-৭ নভোযানে মহাকাশে যান
ছবি: নাসা

১৯৭০ সালের এপ্রিলে শুরু হয় অ্যাপোলো ১৩ মিশন। সেই মিশনের কমান্ডার ছিলেন জিম লোভেল। এটি ছিল লোভেলের চতুর্থ মহাকাশযাত্রা। এই মিশনে পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে তাঁর চাঁদে নামার কথা ছিল। কিন্তু নভোযানের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হওয়ায় মিশনটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এতে তিনজন নভোচারী চাঁদে নামার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করেন। সব বাঁধা-বিপত্তি কাঁটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেল তাঁরা। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে তিনি লস্ট মুন: দ্য পেরিলাস ভয়েজ অব অ্যাপোলো ১৩ নামে একটি বই লেখেন। এই বই অনুসারে ১৯৯৫ সালে জনপ্রিয় অ্যাপোলো ১৩ মুভিটি বানানো হয়। এতে লোভেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টম হ্যাঙ্কস।

আরও পড়ুন
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লাভেল ছিলেন অ্যাপোলো যুগের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নভোচারী। এই সম্মান এখন ৯৫ বছর বয়সী বাজ অলড্রিনের।

জেমস আর্থার লাভেলের জন্ম ১৯২৮ সালের ২৫ মার্চ, ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে। ১৯৫২ সালে তিনি মার্কিন নৌ একাডেমি থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বছর মেরিলিন জেরলাচকে বিয়ে করেন। তাঁদের চারটি সন্তান ছিল।

১৯৫৮-৬২ সাল পর্যন্ত তিনি মেরিল্যান্ডের নেভাল এয়ার টেস্ট সেন্টারে একজন পরীক্ষামূলক পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নৌবাহিনীর ‘ফ্যান্টম’ ফাইটার প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপকও ছিলেন। লাভেল তাঁর কর্মজীবনে ৭ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে কাটিয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি সময় ছিলেন জেট বিমানে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লাভেল ছিলেন অ্যাপোলো যুগের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নভোচারী
ছবি: নাসা

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম শেষ করার পর, লাভেল ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে নৌবাহিনী এবং নাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর শিকাগোর টেলিকম কোম্পানি সেন্টেল কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি সেই পদ থেকে অবসর নেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লাভেল ছিলেন অ্যাপোলো যুগের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নভোচারী। এই সম্মান এখন ৯৫ বছর বয়সী বাজ অলড্রিনের। অ্যাপোলো যুগে চাঁদে যাওয়া মোট ২৪ জন নভোচারীর মধ্যে এখনো পাঁচজন বেঁচে আছেন। তাঁরা হলেন অলড্রিন, চার্লস ডিউক, হ্যারিসন স্মিট, ডেভিড স্কট এবং ফ্রেড হাইস।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: স্পেস ডটকম, এবিসি নিউজ, বিবিসি

আরও পড়ুন