শতাব্দীর দীর্ঘতম বিরল সূর্যগ্রহণে অন্ধকারে ডুবে যাবে পৃথিবীর একাংশ

পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ চলে এলে সূর্যগ্রহণ হয়

ঘড়ি বলছে, এখন দিন। এমন সময় আকাশে তাকিয়ে যদি দেখেন, সব অন্ধকার! ১ মিনিট, ২ মিনিট, ৩ মিনিট, ৪ মিনিট… তবু অন্ধকার কাটছে না। প্রাচীন সভ্যতায় এমন ঘটনায় কেঁপে যেত সম্রাটের মসনদ, ধসে পড়ত ক্ষমতার কেন্দ্র। দুশ্চিন্তায় ছেয়ে যেত মন। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা জানি, এটা সূর্যগ্রহণ।

এমনই এক দীর্ঘ, বিরল সূর্যগ্রহণ আসন্ন। অনলাইনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু কিছু শিরোনামে এও দেখা যাচ্ছে যে, ‘২ আগস্ট গোটা পৃথিবী ডুবে যাবে অন্ধকারে’। সঙ্গে কেউ কেউ যোগ করে দিচ্ছেন, ‘এমন ঘটনা আগামী ১০০ বছরে আর ঘটবে না।’ আসলেই কি বিষয়টি তাই?

 

আসন্ন সূর্যগ্রহণটি আগামী মাসে নয়, হবে ২০২৭ সালে

ঠিকই পড়েছেন। ২ আগস্ট মানে, চলতি বছরের ২ আগস্ট নয়। ২০২৭ সালের ২ আগস্ট সত্যিই বিরল এক সূর্যগ্রহণ হবে। সে সময় অন্ধকারে ডুবে যাবে পৃথিবীর একাংশ, তবে গোটা পৃথিবী প্রলয় আঁধারে ঢাকা পড়বে না। এই সূর্যগ্রহণকে শতাব্দীর দীর্ঘতম  বিরল বলা হচ্ছে সঙ্গত কারণেই। তবে এখানে শতাব্দী মানে, ১৯৯১ থেকে ২১১৪ সাল—এই ১২৩ বছরের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ২০২৫ সাল তথা বর্তমান সময় থেকে হিসাব করলে আগামী প্রায় ৮৭ বছরের বিরলতম সূর্যগ্রহণ বলা যায় এটিকে, আগামী ১০০ বছরের নয়।

আরও পড়ুন

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ কী

প্রথমে সংক্ষেপে বলা উচিৎ সূর্যগ্রহণ মানে কী। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ। অর্থাৎ চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে। এই চাঁদ ও পৃথিবী মিলে একটি যুগ্মব্যবস্থা। এই চাঁদ-পৃথিবী আবার একসঙ্গে সূর্যকে ঘিরে ঘোরে।

মজার বিষয় হলো, সূর্যকে পৃথিবী যে তলে প্রদক্ষিণ করে, চাঁদ সেই একই তলে পৃথিবীকে ঘিরে ঘোরে না। পৃথিবী সূর্যকে যে তলে প্রদক্ষিণ করে, তার নাম অয়ন বৃত্ত। চাঁদের কক্ষপথ এই অয়ন বৃত্তের সঙ্গে পাঁচ ডিগ্রি কোণ করে ঘোরে। এই পাঁচ ডিগ্রি কোণের কারণেই চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য এক সরলরেখায় থাকে না। তবে ঘুরতে ঘুরতে প্রতিবছর চাঁদের কক্ষপথ দুইবার এই অয়নবৃত্তকে ছেদ করে। মানে, দুবার চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য এক সরলরেখায় চলে আসে। এ সময়ই হতে পারে গ্রহণ। আর ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের ঠিক মাঝখানে চলে এলে ঘটে সূর্যগ্রহণ। অর্থাৎ এ সময় চাঁদ সূর্যকে আড়াল করে দেয়।

কতটা আড়াল করে দিল, তার ওপর ভিত্তি করে সূর্যগ্রহণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। আংশিক সূর্যগ্রহণ, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ও বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ। চাঁদ যদি সূর্যকে পুরোপুরি আড়াল করে ফেলে, তখন পূর্ণসূর্যগ্রহণ ঘটে। (সূর্যগ্রহণ নিয়ে এ লেখায় আরও বিস্তারিত লিখছি না। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে

আরও পড়ুন

২০২৭ সালের ২ আগস্টকে শতাব্দীর দীর্ঘতম বিরল সূর্যগ্রহণ বলা হচ্ছে কেন

প্রথম কথা হলো, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ এমনিতেই বিরল। তার ওপর, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট চাঁদ সূর্যকে ২১ শতকের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঢেকে দেবে। প্রায় ৬ মিনিট ২২ সেকেন্ডের জন্য চাঁদের ছায়ায় পুরোপুরি ঢাকা পড়বে সূর্য। এত দীর্ঘ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ অত্যন্ত বিরল। এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহীদের জন্য এটি এক অনন্য ঘটনা। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাজুড়ে যে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল, তার সর্বোচ্চ স্থায়িত্ব ছিল ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ড। এটিকেই সে সময়ে অস্বাভাবিক দীর্ঘ বলে মনে করা হয়েছিল। দলে দলে সারা পৃথিবীর মানুষ যুক্তরাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে ভীড় জমিয়েছিল এই সূর্যগ্রহণ দেখতে। এ প্রসঙ্গে পড়তে পারেন জ্যোতির্বিদ ও অধ্যাপক দীপেন ভট্টাচার্যের সরাসরি অভিজ্ঞতা: আমার দেখা সূর্যগ্রহণ

শুধু একুশ শতকই নয়, এরচেয়ে দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১৪ বছর। অর্থাৎ ২১১৪ সালের আগে এত দীর্ঘ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ আর দেখা যাবে না। শতাব্দীর দীর্ঘতম বিরল সূর্যগ্রহণ একে না বললে আর কাকে বলা!

আরও পড়ুন

এ গ্রহণ কোথায় দেখা যাবে?

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে হয় সঠিক সময়ে সঠিক জায়গা থেকে। ২০২৭ সালের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে পৃথিবীর মোট ১১টি দেশের কিছু অংশ জুড়ে। এসব দেশের বেশির ভাগই উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের। স্পেস ডটকম এবং বিবিসি স্কাই অ্যাট নাইট ম্যাগাজিন লিখেছে, স্পেন, জিব্রাল্টার, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিশর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়া থেকে দেখা যাবে এই সূর্যগ্রহণ। তবে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ অংশ থেকে সে দিন আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। বাকি বিশ্বের জন্য, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের জন্য দিনটি হবে স্বাভাবিক।