সুপারহ্যাবিটেবল প্ল্যানেট কী, এখন পর্যন্ত একটাও কি খুঁজে পাওয়া গেছে
পৃথিবী আমাদের মায়ের মতো। এর চেয়ে সুন্দর আর কোথাও নেই। ছোটবেলা থেকে আমরা এমনটা শুনে আসছি। আসলেই তো! নীল আকাশ, সবুজ বন আর বিশাল সমুদ্র। সব মিলিয়ে পৃথিবী যেন এক স্বর্গ! কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন আমাদের এই অহংকারে একটু চিমটি কাটছেন। তাঁরা বলছেন, পৃথিবী ভালো, এটা ঠিক। কিন্তু এটাই যে সবচেয়ে ভালো, তা কে বলল? কোন বিচারে আমরা পৃথিবীকে সেরাদের সেরার তকমা দেব?
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন এমন কিছু গ্রহের খোঁজ করছেন, যেগুলো পৃথিবীর চেয়েও বেশি বাসযোগ্য। এদের নাম দেওয়া হয়েছে সুপারহ্যাবিটেবল প্ল্যানেট। সহজ বাংলায়, অতি-বাসযোগ্য গ্রহ। ইংরেজি নামটাই বোধহয় ভালো শোনায়। এই লেখায় আমরা ওটাই ব্যবহার করব।
সুপারহ্যাবিটেবল প্ল্যানেট এমন একটা গ্রহ হবে, যেখানে পৃথিবীর চেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য থাকবে। আবহাওয়া হবে আরও মনোরম। আর সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটার সুযোগ পৃথিবীর চেয়েও বেশি থাকবে!
২০১৪ সালে কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির রেনে হেলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবার স্টেট ইউনিভার্সিটির জন আর্মস্ট্রং প্রথম এই ধারণা সামনে আনেন। তাঁদের মতে, পৃথিবীকে শতভাগ নাম্বার দেওয়া ভুল হবে। পৃথিবী হয়তো ১০০-তে ৮০ বা ৯০ পাবে। কিন্তু ১০০-তে ১০০ পাওয়ার মতো গ্রহও মহাকাশে থাকা সম্ভব। একটা গ্রহকে সুপার হতে হলে কিছু বিশেষ গুণ থাকা চাই।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন এমন কিছু গ্রহের খোঁজ করছেন, যেগুলো পৃথিবীর চেয়েও বেশি বাসযোগ্য। এদের নাম দেওয়া হয়েছে সুপারহ্যাবিটেবল প্ল্যানেট। সহজ বাংলায়, অতি-বাসযোগ্য গ্রহ।
যেমন, সেই গ্রহের নক্ষত্র হতে হবে সূর্যের চেয়ে ভালো। সূর্য হলো জি-টাইপ নক্ষত্র। এর আয়ু কম। কিন্তু এর চেয়ে একটু ছোট ও কম তাপমাত্রার কমলা রঙের নক্ষত্র বা কে-টাইপ নক্ষত্রগুলো বাঁচে অনেক বেশি দিন। প্রায় ২০০ থেকে ৭ হাজার কোটি বছর। নক্ষত্র যত বেশি দিন বাঁচবে, তার গ্রহে প্রাণ বিবর্তিত হওয়ার সময় তত বেশি পাবে। তা ছাড়া এই নক্ষত্রগুলো থেকে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি কম বের হয়।
আবার গ্রহটিকে আকারে একটু বড় হতে হবে। পৃথিবী যদি আরেকটু বড় হতো, তবে মন্দ হতো না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বড় গ্রহগুলো বেশি বাসযোগ্য হতে পারে। কারণ, গ্রহ বড় হলে থাকার জায়গা বা সারফেস এরিয়া বাড়ে। আবার এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বায়ুমণ্ডলকে আরও ভালোভাবে ধরে রাখতে পারে।
আরেকটু গরম ও আর্দ্র হলেও মন্দ হয় না। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য কোথায় দেখা যায়? ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট বা বর্ষণমুখর বনাঞ্চলে। সুপারহ্যাবিটেবল গ্রহের পুরোটা জুড়েই যদি এমন নাতিশীতোষ্ণ আর আর্দ্র আবহাওয়া থাকে, তবে সেখানে প্রাণের ছড়াছড়ি হবে, এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর মতো মেরু অঞ্চলে বরফ বা বিশাল মরুভূমি সেখানে থাকবে না।
কিন্তু আমরা কি এমন কোনো গ্রহ পেয়েছি? এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ৬ হাজারেরও বেশি বহিঃসৌরগ্রহ বা এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ২৪টি গ্রহের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। সেগুলোকে তাঁরা সুপারহ্যাবিটেবল হওয়ার যোগ্য মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বড় গ্রহগুলো বেশি বাসযোগ্য হতে পারে। কারণ, গ্রহ বড় হলে থাকার জায়গা বা সারফেস এরিয়া বাড়ে।
তবে এখানে একটা কিন্তু আছে। এই ২৪টি গ্রহের সবগুলো যে আসলেই গ্রহ, তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত নয়। কোনোটা হয়তো টেলিস্কোপের ভুল বা সানস্পট হতে পারে। তা ছাড়া, এগুলো পৃথিবী থেকে ১০০ আলোকবর্ষেরও বেশি দূরে।
এই তালিকার অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী হলো ‘KOI 5715.01’। এটি আমাদের থেকে প্রায় ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এর নক্ষত্র সূর্যের চেয়ে একটু ঠান্ডা এবং গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১.৮ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এর গড় তাপমাত্রা পৃথিবীর চেয়ে সামান্য কম হতে পারে। তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে এটি হয়তো প্রাণের জন্য উপযুক্ত।
আমরা আসলেই এখনো নিশ্চিত নই যে এই গ্রহগুলোতে আসলেই প্রাণ আছে কি না। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের সেই উত্তর দেবে। হয়তো মহাকাশের কোনো এক কোণায় এমন কোনো গ্রহ আছে, যেখানে আমাদের পৃথিবীর চেয়েও ঘন জঙ্গল, বিশাল নীল সমুদ্র আর অদ্ভুত সব প্রাণী শান্তিতে বসবাস করছে। কে জানে, হয়তো সেটাই আসল স্বর্গ!